- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

তাজিক সংসদের নাগরিকদের ‘অবাঞ্ছিত’ সাইট পরিদর্শন নজরদারী

বিষয়বস্তু: মধ্য এশিয়া-ককেশাস, তাজিকিস্তান, নাগরিক মাধ্যম, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
[1]

তাজিকিস্তানের দুশানবেতে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ। ফ্লিকারে রবার্টস উইলসনের ছবি (সিসি বাই-এনডি ২.০)

তাজিকিস্তানের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো শীঘ্রই ক্ষুদেবার্তা ও মোবাইল বার্তা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতামত এবং কারো “অবাঞ্ছিত” ওয়েবসাইট পরিদর্শনের বিস্তারিত রেকর্ড রাখার মাধ্যমে নাগরিকদের অনলাইনে কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করার অধিকার পেতে যাচ্ছে।

এই সপ্তাহে সংসদ সদস্যরা বিদ্যমান ফৌজদারী আইনের সংশোধনীর অংশ হিসেবে দেশের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলোকে নাগরিকদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার [2]  প্রদান করে আইন পাস করেছে।

এগুলি এখনো প্রকাশ করা না হলেও স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইট এশিয়া প্লাস [2] বিশেষজ্ঞ এবং সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে কিছু বিবরণ সংগ্রহ করেছে। ওয়েবসাইটটি অনুসারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দু’টি বিশেষ সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট অনলাইনে তাজিকদের অনুসরণ করার দায়িত্বে থাকবে।

স্থানীয় সাংসদ সায়েদজাফর ইস্মোনোভ এশিয়া প্লাসকে বলেছেন কোন একটি “অযথার্থ মন্তব্য”এর জন্যে একজন মন্তব্যকারীকে জরিমানা করা যেতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে কারো জন্যে সম্মানহানিকর বা জাতীয় নিরাপত্তাকে ছোট করে দেখা মন্তব্যের জন্যে দুই বছর বা ততোধিক সময়ের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে কোনটি “অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইট” বা “অযথার্থ মন্তব্য” সেটা পরিষ্কার নয়।

আইনটির বিশিষ্ট সমর্থক ওজোদা রাহমোন [3] রাষ্ট্রপতির কন্যা হওয়ার পাশাপাশি তার চিফ অব স্টাফ এবং দেশের সংসদের উচ্চকক্ষ মজিলিসি মিলির সিনেটর হিসেবে কাজ করেন।

তাজিক সাংসদ জুরাখোন মাহমুদজোদা প্রথম সংশোধনীগুলি পেশ করেন এবং কোন প্রমাণ না দিয়েই ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারসম্পন্ন  ৮০% -এর বেশি তাজিক “চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইট” পরিদর্শন করে বলে দাবির মাধ্যমে [4] সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।

ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোহমাদি ইবোদুল্লেভ আরএফইআরএল-এর তাজিক পরিষেবাকে বলেছেন [5] যে মাহমাজোদার দাবিটি খুব মৌলিক ভুল বোঝাবুঝি থেকে উদ্ভূত হতে পারে। রাজধানী দুশানবেতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক একটি সম্মেলনে একটি বক্তব্যে একজন বক্তা বলেছিলেন, ” [ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের ছোট ছোট বিভিন্ন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণকারী মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী] আইএসআইএসের ৮০% তাজিক সদস্যরা ইন্টারনেটের মাধ্যমসহ অন্যদের দ্বারা নিযুক্ত হয়েছে। “

এগুলো দু’টি খুবই ভিন্ন পরিসংখ্যান হলেও একে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ইন্টারনেট পরিগণিত করে সাংসদ মাহমুদজোদা দ্রুতই এর একটি সমাধান প্রস্তাব করেছেন।

সংবাদটির প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুক ব্যবহারকারীরা কীভাবে “অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইট” নির্ধারণ করা হতে পারে সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন [6]::

Без опубликованного списка могут интерпретировать что угодно. Зайдешь на сайт, выйдешь. А кто-то после тебя там напишет что-то новое а ты там был…

[ওয়েবসাইটগুলোর] একটি প্রকাশ্য পাবলিক তালিকা ছাড়া তারা তাদের ইচ্ছেমতো [অবাঞ্ছিত] ব্যাখ্যা করতে পারেন। আপনি একটি সাইটে ঢুকে আবার এখান থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু তারপরে ওয়েবসাইটটি নতুন কিছু প্রকাশ করতে পারে এবং (তখন ধরে নেয়া হবে যে) আপনি সেখানে ছিলেন।

আইনটি তাজিক সরকারের কৌশলগত স্থানান্তরেরও প্রতিনিধিত্ব করে, যা এযাবৎকাল বিতর্কিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও পরিষেবা সেন্সর করে এসেছে। এখন তারা অনলাইন উপকরণগুলোতে নাগরিকদের প্রবেশাধিকার আটকানোর পরিবর্তে এই সাইটগুলি নাগরিকদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের বাহন হিসেবে ব্যবহার করবে।

প্রকৃতপক্ষে বেশ কয়েক বছর ধরে তাজিকিস্তান পর্যায়ক্রমে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন রাশিয়ান ওডোক্লাসনিকি এবং ভিকন্তাক্তে, ফেসবুক, ইউটিউব এবং স্থানীয় শীর্ষ সংবাদ ওয়েবসাইটগুলি প্রবেশাধিকার অবরোধ করেছে। এসব সাইট সাধারণতঃ উচ্চকিত রাজনৈতিক উত্তেজনা বা জনঅস্থিরতা যেমন দেশের কিছু অংশে সামরিক সংঘর্ষের সময় অবরোধ করা হতো। ২০১৩ সালে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোনের নাচের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ইউটিউব এক সপ্তাহের জন্যে অবরুদ্ধ ছিল [7]

কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সাধারণতঃ পুনঃস্থাপিত হতো [8]। কিন্তু আরও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ওয়েবসাইট কোন আপাততঃ বা নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই ঢালাওভাবে অবরোধ করা হয়েছে।

সরকার ওয়েব অবরোধ করার আদেশ দেয়ার কথা খুব কম স্বীকার করলেও ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীরা বারবার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিয়মিত ‘মৌখিক’ আদেশের কথা নিশ্চিত করেছে।

ক্রমাগত সামাজিক ও সংবাদ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকারের অভাবের ফলে ভার্চুয়াল ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কগুলোর [9] ব্যাপক ব্যবহার ঘটেছে যা তাজিক নেট-নাগরিকদের ব্লক করা ওয়েবসাইটগুলি বিশেষ করে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রবেশের মূল উপায়ে পরিণত হয়েছে।

তবে সরকারের নতুন আইনের ফলে এর পরিবর্তন হতে পারে। মনে হচ্ছে যে নাগরিকদের পর্যবেক্ষণের উপায় হিসেবে কর্তৃপক্ষ সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলো নাগালের বাইরে রাখার মাধ্যমে জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে তাদের ব্যবহার করার জন্যে দ্রুতই প্রবেশাধিকারযোগ্য করে দিতে পারে।