নেট-নাগরিক প্রতিবেদন: জনস্বার্থে কাজে করলে আপনি গ্রেপ্তার হতে পারেন

থাইল্যান্ডে একটি রাজদ্রোহ আইনবিরোধী প্রতিবাদ। ছবি: ম্যাথ্যু রিচার্ডস, কপিস্বত্ত্ব @ ডেমোটিক্স (১২/১০/২০১১)

গ্লোবাল ভয়েসেস এডভোকেসির নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের অধিকারগুলির চ্যালেঞ্জ, জয়লাভ ও উদীয়মান প্রবণতার একটি সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদান করে।

আপনি সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী, অথবা সরকারী স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রচারক যে হিসেবেই জনস্বার্থে কাজ করুন না কেন, এই কাজ করার ঝুঁকি বিশ্বব্যাপী বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে।

৫ জুলাই তারিখে ইস্তাম্বুলের একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ এবং দেশটির আটটি সুপরিচিত মানবাধিকার সুরক্ষা প্রতিষ্ঠানে তুর্কী পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। সেখানে তারা দু’জন প্রশিক্ষক এবং কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি জব্দ করেছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ গঠন করা না হলেও তাদের মামলাগুলো মূল্যায়ন করা অবধি তাদের সাতদিন আটক রাখা হবে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তুরস্কের পরিচালক ইদিল এসার রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি তাবের কিলিচকে মাসখানেক আগে একবার কারাগারে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সঙ্গে সঙ্গে বন্দীদের পক্ষে একটি বিবৃতি জারি করেছে:

(ইদিল এসারকে) অজ্ঞাত স্থানে বন্দী করে রাখা এবং নৈমিত্তিক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী অন্যান্য মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের আটক হলো ক্ষমতার কুৎসিত অপব্যবহার এবং দেশের মানবাধিকার কর্মীদের অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবেলার চিত্র তুলে ধরে। অবিলম্বে ইদিল এসার এবং তার সঙ্গে আটককৃত ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

এর দু’দিন আগে মিয়ানমারের সামরিক সরকার বেআইনী সংগঠন আইনের অধীনে স্বাধীন তিনজন অনলাইন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করেছে। আইনটিতে “বেআইনী গোষ্ঠীর” সদস্যকে অপরাধী গণ্য করা হয় যার শাস্তি তিন বছর জেল অবধি হতে পারে। জুনের শেষ দিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় শান রাজ্যে এই সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসময় তারা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংঘাতে লিপ্ত সশস্ত্র নৃগোষ্ঠী – ট্যাং জাতীয় মুক্তিবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মাদকদ্রব্যের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছিলো। সাংবাদিকদের জন্যে ১১ জুলাই ২০১৭ শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইরাবতী (পত্রিকা) এবং বার্মার গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বর-এর মতো হাতেগোনা কয়েকটি স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকরা মিয়ানমার সামরিক শাসনে থাকাকালেও রাজনৈতিক বিষয়বস্তু নিয়ে প্রতিবেদন করতেন। ইরাবতী গ্লোবাল ভয়েসেসের একটি বিষয়বস্তু অংশীদার।

ইরাবতীর ইংরেজী সংস্করণের সম্পাদক কিয়া জা মো সতর্ক করে বলেছেন যে তিনজন সাংবাদিকের গ্রেপ্তার সমাজের উপর একটি শীতল প্রভাব ফেলতে পারে:

গ্রেপ্তার এবং অভিযোগ গঠন থেকে বুঝা যায় যে হয় মিয়ানমারের সামরিক নেতারা গণমাধ্যমগুলোর উদ্দেশ্য ও প্রকৃতি বুঝতে পারেন না অথবা সশস্ত্র বাহিনীকে সমালোচনায় ফেলতে পারার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে প্রতিবেদন করা থেকে সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখার জন্যে এটা তাদের একটি ইচ্ছাকৃত কর্ম।

মেক্সিকোর বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা নজরদারী যন্ত্রপাতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু

গত মাসে মেক্সিকার ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী তাদের সরকারের সাংবাদিক, সক্রিয় কর্মী এবং মানবাধিকার সুরক্ষা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্যে ইসরায়েলী কোম্পানী এনএসও গ্রুপ থেকে নজরদারী যন্ত্রপাতি কেনার যথেষ্ট প্রমাণ প্রকাশ করেছে। টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটিজেন ল্যাবের একটি নতুন কারিগরী প্রতিবেদনে লক্ষ্য করা গেছে যে এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে তিনজন বিরোধীদলীয় রাজনীতিক রয়েছেন যাদের সবাই সামাজিক রক্ষণশীল ন্যাশনাল অ্যাকশন পার্টির (পিএএন) সদস্য। মেক্সিকোর রাষ্ট্রপতি এনরিক পেনা নিয়েতো অভিযোগগুলোকে মিথ্যা দাবি করে অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরকে অভিযোগ তদন্ত করতে বলেছেন। লক্ষ্যবস্তুতে পরিণতদের নয়জনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছে

ভেনিজুয়েলাতে জন অস্থিরতার মুখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেন্সর তীব্র

২৮ জুন সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মসহ ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, এবং ইনস্টাগ্রাম ভেনিজুয়েলাতে অবরুদ্ধ করা হয়েছিল। রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহকারী ক্যানটিভির ডিএনএস (যে সব সার্ভার ডোমেইন নেমগুলোকে আইপি এ্যাড্রেসে অনুদিত করে থাকে) সার্ভারগুলির মাধ্যমে এই অবরোধগুলি করা হয়েছিল এবং বেশ কিছুক্ষণ পরে ২৮ জুন সন্ধ্যাতেই তা উঠিয়ে নেয়া হয়। প্রতিক্রিয়াস্বরূপ, ভেনিজুয়েলাবাসীরা বিনামূল্যের ভিপিএন সেবা ব্যবহার এবং একটি ডিএনএস পরিবর্তন করে ব্লকগুলি এড়িয়ে যাওয়ার কারিগরী পরামর্শ ভাগাভাগি করেছে। ব্লকগুলি মে মাসে ৪১টি কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি দেশব্যাপী ব্যাপক অর্থনৈতিক, খাদ্য ও জনস্বাস্থ্য সংকটের বিরুদ্ধে বিরোধীদলীয় বিক্ষোভের তরঙ্গের মুখে অন্যান্য সেন্সরশিপের দৃষ্টান্তের অনুরূপ প্যাটার্ন অনুসরণ করছে বলে মনে হচ্ছে।

ফিলিপাইনের সিনেটর ‘মিথ্যা সংবাদ’ বেআইনী করতে চান

ফিলিপাইনের সিনেটর জোয়েল ভিলানুয়েভা জুন মাসের শেষের দিকে “মিথ্যা সংবাদের বিদ্বেষপূর্ণ বিতরণ”কে অপরাধ গণ্য করে একটি খসড়া আইন জমা দিয়েছেন। খসড়া আইনটিতে “আতংক, বিভেদ, বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা এবং ঘৃণা অথবা কারো সুনামহানী করা কোন কিছু”কে মিথ্যা সংবাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এতে যারা “মিথ্যা সংবাদ” প্রকাশ প্রকাশ করে এবং এমনকি – বন্ধুদের সঙ্গে কেবলমাত্র একটি নিবন্ধ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে এর প্রভাব পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারে না, সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম এমন – ব্যবহারকারীদের সম্ভাব্যভাবে অপরাধে যুক্ত করার জন্যে একে ভাগাভাগি করে তাদের জন্যে একটি জোরালো কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

স্পেনের মুখবন্ধ আইনে নিয়ন্ত্রকদের জন্যে বিশাল আয়

স্পেনে মত প্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণকারী একটি বিতর্কিত আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে দুই বছর পূর্ণ করেছে। জনগণের কাছে “মুখবন্ধ আইন” (অথবা স্প্যানিশ ভাষায় “লেমরডাজা”) নামে পরিচিত নাগরিক নিরাপত্তা আইন এবং দেশটির ফৌজদারি বিধানে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের ছবি অথবা ভিডিও প্রচার, তাদের “অসম্মান করা”, জনগণকে প্রতিবাদে-বিক্ষোভে অংশ নিতে জড়ো করার জন্যে সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা এবং “অননুমোদিত” বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করাসহ নানা ধরনের অপরাধের জন্যে বিশাল অংকের জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি প্রয়োগের প্রথম ১৮ মাসে স্পেনীয় রাস্ট্রটি ২,৮৬,০০টি জরিমানা থেকে ১৩ কোটি ১০ লক্ষ ইউরো (বাংলাদেশী প্রায় ১,২১৪ কোটি টাকা) সংগ্রহ করে হস্তান্তর করেছে। স্পেনের বিভক্ত সংসদে আইনটি সংস্কারের একটি চেষ্টা চলছে, তবে সক্রিয় কর্মী ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি বাক স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্যে যথেষ্ট নয়।

ব্রাজিলীয় আদালতের বিদ্রুপের পক্ষাবলম্বন

সাত বছরের আদালত যুদ্ধের শেষে, ব্রাজিলে বিচারের উচ্চ আদালত একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে ব্যাঙ্গকারী ওয়েবসাইট  ফালহা দে সাও পাওলোর পক্ষে রায় দিয়েছে। সাইটটি ২০১০ সালের নির্বাচনে পত্রিকাটির কথিত পক্ষপাতমূলক প্রচারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্যে ফোলহা দে এস পাওলো পত্রিকার নাম ও বিষয়বস্ত -“ফোলহা” (পর্তুগিজ ভাষায় যার অর্থ কাগজ) এবং “ফালহা” (যার অর্থ ব্যর্থতা) শিরোনামটি নিয়ে শ্লেষালংকার করে ব্যাঙ্গ করেছিল। ফোলহা দে এস পাওলো পত্রিকার মালিক ফ্রিয়াস পরিবার সাইটটি অনলাইন থাকার মাত্র ১৭ দিনের মাথায় একটি আদেশ জারির মাধ্যমে ব্রাজিলের কপিস্বত্ত্ব আইনের অধীনে প্যারোডি করার স্বাধীনতার উপর একটি বর্ধিত আদালত যুদ্ধ শুরু করে। পরিশেষে, আদালত আদেশ দেয় যে পেটেন্ট আইনে সম্মান না করা এবং বিনোদন করার অধিকার অনুমতি রয়েছে। সাইটের নির্মাতারা ফালহাকে আবারও অনলাইনে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।

নতুন গবেষণা

 

ইমেলের মাধ্যমে নেটিজেন প্রতিবেদন পাওয়ার জন্যে গ্রাহক হোন

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .