সম্প্রতি ৩০০ জনের একটি ইরাকি দল ঈদ উদযাপন করতে মসুলে গিয়েছিলেন। এরা সবাই ইরাকের দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলের বাসিন্দা। জঙ্গী সংগঠন আইএস-এর হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া মসুলবাসীদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেই তারা সেখানে গিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে গ্রীষ্মে ইরাকি বাহিনীকে হারিয়ে দিয়ে আইএস মসুলের দখল নিয়েছিল। মসুল ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। দেশটির উত্তরাঞ্চলে এর অবস্থান।
এই মসুল থেকেই আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদী ইরাক ও সিরিয়ার বিপুল বিস্তৃত এলাকা নিয়ে খেলাফত ঘোষণা করেছিলেন। এরপর থেকেই মসুলের বাসিন্দাদের জীবন নিপীড়নের, দু:খ-কষ্টের আর ভয়ের হয়ে উঠে।
মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও আসে পরিবর্তন। খাদ্য ও জ্বালানি ঘাটতি দেখা দেয়। সংখ্যালঘুদের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। কঠোর শাস্তি ও ভয় হয়ে উঠে প্রতিদিনের সঙ্গী।
২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ইরাকি বাহিনী শহরটি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অপারেশন শুরু করে। ৮ মাসের তুমুল লড়াইয়ে শহরটি বড় একটা অংশের দখল নিতে সক্ষম হয় তারা। সম্প্রতি ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদী আইএস-কে পরাজিত করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন।
হামিদ আল-সাঈদ, আলি আল-তাওকি এবং মোহাম্মদ আল-রাজি’র নেতৃত্বে একদল ইরাকি অ্যাক্টিভিস্ট “মসুলে ঈদ” ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
আসলে তারা উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদের পুরোনো বন্ধুরা যারা মসুলে আইএস-এর দু:শাসনে ছিলেন তাদের সাথে ঈদ করবেন। কিন্তু তাদের এই উদ্যোগ ফেইসবুকে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ১,৭০০ এর বেশি ফেইসবুক ব্যবহারকারী তাদের সাথে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যদিও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৩০০ জনকে অনুমতি দেয়া হয়।
গত ৩ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম মসুলবাসী সবার সাথে ঈদ উদযাপনের সুযোগ পেল। আইএস-এর শাসনাধীনে ঈদ উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কবিতা আবৃত্তি, নাটক এবং গান-বাজনাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। উদ্যোক্তারা মসুলবাসীর জন্য বাগদাদ থেকে ১ হাজারের মতো বইও উপহার হিসেবে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই বইগুলো ‘আই অ্যাম ইরাক, আই রিড’ ক্যাম্পেইন থেকে এসেছিল। ইরাকে বই পড়ার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করতেই ওই ক্যাম্পেইনটির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আইএস মসুল পাঠাগারের কয়েক হাজার বই ধ্বংস করেছিল। তাই বই উপহার দেয়া সেখান থেকেই শুরু করা হয়।
দিনটি ছিল খুব আনন্দমুখর। সমস্ত ইরাকিরা সেখানে শুধু ঈদ উদযাপন করতেই যাননি, তারা মসুলের স্বাধীনতা উদযাপন করতেও গিয়েছিলেন। তারা সবাই মিলে জাতীয় সংগীত গেয়েছেন, শিয়া-সুন্নি ভাই-ভাই, সবাই ইরাকি স্লোগান দিয়েছেন। সেসব ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে সবাই আপ্লুত হয়েছেন।
অ্যাক্টিভিস্টরা উদ্যোগ নিলেও সরকারি সংস্থাসমূহ অংশগ্রহণকারীদের জন্য পরিবহন সেবা দিয়েছিল এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল।
وصول #قافلة_الحرية لمدينة #الموصل
يا اهلا وسهلا بيكم أهلنا من بغداد والجنوب الحبيب
شگد چنت أتمنى احضر ? pic.twitter.com/ZKK0ANGBIW
— الموصليBiLAL ?? (@Bilal_Aldulayme) June 27, 2017
The “freedom caravan” arriving in Mosul.
স্বাধীনতা ক্যারাভান মসুলে প্রবেশ করছে।
মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নারী-পুরুষ মিলে স্বাধীনতা ক্যারাভানকে স্বাগত জানাচ্ছে।
بالورد والحب … شباب وبنات الموصل يستقبلون الضيوف من كل العراق…
اكبر ضربة للدواعش والطائفين #عاشت_ايدك#العيد_في_الموصل #قافلة_الحرية pic.twitter.com/g7FjfogGj1— دَي دَي ?? (@dentist_dalo) June 28, 2017
With flowers and love, men and women of Mosul welcome visitors from across Iraq.
সারা ইরাক থেকে আসা অতিথিদের ফুল ও ভালোবাসার মাধ্যমে বরণ করে নিচ্ছেন মসুলবাসী।
‘মসুলে স্বাগতম’ স্লোগান দিচ্ছেন সবাই। পরে সবাই একসাথে ইরাকের জাতীয় সংগীত গান।
মসুলের পাঠাগারের শেলফগুলো আবার ভরিয়ে তুলতে ১ হাজারের বেশি বই উপহার হিসেবে দেয়া হয়।
اعضاء منظمة #أنا_عراقي_أنا_اقرأ يشاركون في تهيئة اكثر من الف كتاب لتوزيعها على الموصليين ضمن قافلة الحرية#العيد_في_الموصل✌?#قافلة_الحرية?? pic.twitter.com/cu416Xmrq8
— محمد الشاكر (@MOHAMED_ALSHAKR) June 25, 2017
Members of the “I am Iraqi, I Read” initiative preparing over one thousand books to deliver to Mosul through the “freedom caravan.”
‘আই অ্যাম ইরাক, আই রিড’ ক্যাম্পেইনের পক্ষ থেকে মসুল পাঠাগারকে ১ হাজার বই উপহার দেয়া হয়।
মসুলের ভায়োলিনবাদক আমিন মুকদাদ মসুলের ঐতিহ্যবাহী লোক সংগীত শোনান।
ঈদ এবং আইএস-এর হাত থেকে মসুলের স্বাধীনতা প্রাপ্তি উপলক্ষ্যে আতশবাজি ফুটিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।