নেপালের এক বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফারের পরিবেশ সংরক্ষণের হাতিয়ার তার ক্যামেরা

ওয়ালউইং রাইনো বা এক শিংওয়ালা গণ্ডার, চিতোয়ান। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

সাগর গিরি কোনদিন তার চারপাশে তোলা ছবি দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেনি- এ সব ছবি ছিল ঝাপসা, আর ছবিতে এর বিষয়বস্তু সঠিক অবস্থানে ছিল না, ফলে একদিন সাগর নিজে এক ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়ল যেন ছবির মান উন্নত হয়।

যখন ছবির মান উন্নত ছিল না তখন সাগর ছিল এক শিশু। আজ ২৮ বছর বয়সে সাগর নেপালের বণ্যপ্রাণীর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার জন্য লড়াই করছে , আর তার নিজের শহর চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্কের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় বিষয়টি তাকে ঠিক সেই সুযোগ করে দিয়েছে যাতে সে নেপালের যে সমস্ত প্রাণী এই মনোযোগের দাবীদার তাদের ছবি তুলতে পারে। ফেসবুকে সে ব্যাখ্যা প্রদান করেছে কী ভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তার কাজের ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেছে। :

আমার বাস বিশ্ব ঐতিহ্যের এক অংশ চিতোয়ন ন্যাশনাল পার্কের কাছে, বন্যপ্রাণীর ছবি তোলে এমন ফটোগ্রাফারের জন্য এর চেয়ে আর উত্তম কী হতে পারে!!

আর, আজকে যখন আমি আমার ঘরে বিশ্রাম গ্রহণ করছিলাম তখন হঠাৎ নভোরাজ (চিতোয়ন-এর গাইডা লজের ম্যানেজার) আমাকে ডাকল, তিনি আমার পিতার কাছ থেকে একটা ফোন পেয়েছিলেন যে রাপ্তি নদীর তীরে একটা চিতাবাঘ দেখা গেছে। এই নদীর উপরে যে বাঁধ সেটির সাউরাহা পর্যটন কেন্দ্রের থেকে মাত্র কয়েক মিনিট দূরত্বে অবস্থিত। আমি আমার ক্যামেরা নিয়ে সেদিকে দৌড় দিলাম এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে গেলাম। আমার পিতা প্রাণীটির উপর নজর রেখেছিল, তিনি অনেক দূর থেকে নদীর পাড়ের সেই স্থানটি দেখালেন যেখানে প্রাণীটি অবস্থান করছিল, আর বং দ্রুত আমার ক্যামেরায় তার ছবি তোলা শুরু হল!! !!

নেপালের প্রকৃতি যাতে বিশ্বে স্বীকৃতি পায় সে লক্ষ্যে সরকারের সাথে সাগর কাজ করতে প্রবল উৎসাহী এবং সে এই সচেতনতা তৈরি করতে চায় যে বন্য প্রাণীদের যতটা ভয়ানক দেখায় আসলে তারা ততটা ভয়ানক নয়। এবং সে জানে- যে কোন একদিন সে বাঘের সামনেও পড়ে যেতে পারে:

ভেড়ার মন্তব্যে বাঘ তার ঘুম নষ্ট করে না!! পড়ন্ত বিকেল আলো প্রায় কমে এসেছে। সকল পশু ও পাখির ঘরে ফেরার সময়। আমি ঘরে ফিরে আসছি, কারণ চারদিকে আধার ঘনিয়ে আসছে, এমন সময় হঠাৎ করে ঝোপের থেকে বনের রাজা বাঘ দৃশ্যমান হলেন, দ্রুত তিনি সেই স্থানে বসলেন যেখান থেকে আমরা পরস্পর পরস্পরকে দেখতে পারি এবং শাল গাছের ফাঁক দিয়ে সে জলন্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল!!

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে সাগর তার ছবিতে আমি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ক্লিক করি” লোগো আপলোড করে রেখেছে। নেপালের প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রতি অসীম আগ্রহ সবসময় খুব সহজ নয়। একবার বারিদা ন্যাশনাল পার্কে ভোঁদড়ের ছবি তোলার জন্য তাকে ২২ দিন অপেক্ষা করতে হয়, সে সময় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাকে তাঁবুর মধ্যে বাস করতে হয়েছে, আর বাঘের ছবি তোলার জন্য ১২ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে, লজের কাছে বাস করা পাখির নিখুঁত ছবি তোলার জন্য ছয় কী সাতদিন ক্যামেরা তাক করে অপেক্ষা করতে হয়েছে । .

নীচে তার কয়েকটি ছবি তুলে ধরে হল।

কালা কাস্তেচরা, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

বুনো মহিষ, আরনা, চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

কাও ধনেশ, চিতোয়ান, ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

হিমালয়ের শকুন। জটায়ু রেস্তোরাঁ, পিথাউলি, নাওয়ালপারাসি। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

স্মুথ কোটেড ওটেরস বা ভোঁদড়। বারিদা ন্যাশনাল পার্ক। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

মাছরাঙ্গা, সোউরাহা, চিতোয়ান। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

ধলা শকুন। পোখরা। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

বাজ, পিথায়ুলি, নাওয়ালপারাসি। ছবি সাগর গিরির। অঅনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার। চিতোয়ান ন্যাশনাল পার্ক। ছবি সাগর গিরির। অনুমতিক্রমে ব্যবহার করা হয়েছে।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .