এ যেন গুপ্তধন আবিস্কার! ৪০ বছরেরও বেশি সময়ের পর ছবিগুলো খুঁজে পেয়ে এমনই মনে হয়েছিল তার! তখন তিনি জাপানে থাকতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতি সামলে নিয়ে সেই সময়ে জাপান একটু একটু করে সামনে আগাচ্ছে। সবাই জাপানের এগিয়ে যাওয়াকে ‘মিরাকল’ হিসেবে দেখছে। জাপানের থাকাকালীন তখনকার জীবনযাত্রা ক্যামেরায় ফ্রেম বন্দি করে রেখেছিলেন। তাই ছবিগুলো খুঁজে পেয়ে আর দেরি করেননি। তার নিজের ব্লগে সেগুলো সংকলন করে রেখেছেন।
আমেরিকান সেই পর্যটকের নাম ল্যারি রোজেনসুইংগ। আর তার ব্লগের নাম ‘ল্যারি ইন জাপান ৪০ ইয়ারস এগো’। ব্লগটিতে ষাটের দশকের শেষ থেকে সত্তর দশকের প্রথম দিকের তোলা ছবি এবং লেখা স্থান পেয়েছে:
In 1968-69 I lived in Sendai, Japan, as a Rotary Exchange Student at Ikuei Gakuen High School. In 1973-74 I lived in Hiroshima and worked for a company, then called Mazda Unyu, which transported Mazda vehicles and auto parts. I kept a journal both times, recently rediscovered along with some black-and-white negatives that had been stored away in a box for decades.
১৯৬৮-১৯৬৯ সালে আমি তখন জাপানের সেনদাইয়ে থাকি। সে সময়ে একুয়ে গাকুয়েন হাই স্কুলের রোটারি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ছাত্র ছিলাম। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে ছিলাম হিরোশিমা শহরে। মাজদা আনইউ নামের একটি মোটর পার্টস কোম্পানিতে কাজ করতাম। প্রতিষ্ঠানটি মোটর গাড়ি এবং এর পার্টস রপ্তানি করতো। সেনদাই ও হিরোশিমা দু’জায়গাতেই থাকার সময়ে আমি ছবি তুলতাম, দৈনন্দিনের ঘটনাবলি লিখে রাখতাম। সেই ছবিগুলোর নেগেটিভ একটি বাক্সে কয়েক দশক ধরে পড়ে ছিল। সম্প্রতি সেই বাক্স আমি খুঁজে পেয়েছি।
ফ্লোরিডার ডেলরে বিচের মোরিকামি মিউজিয়াম অ্যান্ড জাপানিজ গার্ডেনস-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ল্যারি রোজেনসুইংগ। আজ থেকে ৪০ বছরের বেশি সময় আগে তিনি যখন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের ছাত্র ছিলেন, তখন থেকেই তিনি জাপানের কৃষ্টি, কালচার বোঝার চেষ্টা করে আসছিলেন। বিশেষ করে জাপানের অর্ডার অব রাইজিং সানের ব্যাপারটি।
ল্যারি সত্তর দশকের শুরুতে হিরোশিমার এমন কিছু ছবি তুলেছেন, যা সত্যি আমাদের ভাবায়। ল্যারি তার একটি ব্লগে বস্তির কিছু ছবি পোস্ট করেছেন, যেটি শহরের মধ্যখানে অবস্থিত। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ ও যুদ্ধ শেষে এই বস্তি গড়ে উঠেছিল:
Mr. Toda [in whose house I was living] explained that the area had been government land into which people moved after the war. At the time no one could have begrudged anybody's converting unused land into badly-needed shelter. However, once established there it became impossible to evict people from their shacks and they remain to this day.
আমার বাড়িওয়ালার নাম মিস্টার টোডা। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, এটা ছিল সরকারের জায়গা। যুদ্ধের পর এখান থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নেয়া হয়। এরপরে কেউ আর জায়গাটিতে বাস করতে আসেননি। তবে, একটা থেকে কাউকেই সরানো যায়নি। সেটাই এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে।
হিরোশিমার আরো ছবি ও তার চারপাশের অবস্থা কেমন ছিল, তা এখানে দেখতে পারেন।
সেই সময়ে জাপানের অফিসগুলোর পরিবেশ কেমন ছিল, তার কিছু চমৎকার ছবিও পোস্ট করেছেন ল্যারি। ল্যারি সে সময়ে একটি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিতে কাজ করতেন। প্রতিষ্ঠানটি নতুন তৈরি গাড়ি সারা পৃথিবীতে রপ্তানি করতো। পারিবারিক পরিচয়ের সুবাদে তিনি এই চাকরিটি পেয়েছিলেন:
Eizo Toda, the father of an exchange student (Sekio Toda) who had lived for several months with my parents offered me a low-level, part-time job with his company, then called Mazda Unyu Hiroshima, whose primary business was transporting Mazda cars, trucks and parts both domestically and internationally.
এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের একজন শিক্ষার্থীর বাবা ছিলেন এইজো টোডা। তিনি আমার বাবা-মায়ের সাথে কয়েকমাস বসবাস করেছিলেন। তার ছিল অটোমোবাইলের ব্যবসা। মাজদা আনইউ হিরোশিমা নাম। প্রতিষ্ঠানটি মাজদা গাড়ি, ট্রাক ও এর পার্টস জাপানের অভ্যন্তরে ও বিদেশে রপ্তানি করতো। তিনিই একদিন আমার বাবা-মার কাছে তার কোম্পানিতে পার্টটাইম চাকরির অফার দিলেন।
সত্তর দশকের প্রখম দিকে ল্যারি জাপানে কী কী কাজ করেছেন, সেটা তার ব্লগে তুলে ধরেছেন। ‘হিরোশিমায় আমার চাকরির দিনগুলো’ শিরোনামে তার একটি ব্লগ পোস্ট আছে। সেখানে তিনি কম্পিউটার আসার আগে অফিসে কাজের পরিবেশ কেমন ছিল, সেটা তুলে ধরেছেন:
The Gyomuka’s main job involved organizing the actual shipments of vehicles and parts. In a time just before computers took over this kind of work, it required a fair amount of labor to ensure that a specific vehicle moved efficiently from Toyo Kogyo’s Mazda assembly line to a ship headed for the port in the United States or elsewhere that would get it to the consumer or dealer who had ordered it. Every day Inoue-san mesmerized me as he shuffled and sorted cards representing vehicles.
গোয়োমুকাতে আমার মূল কাজ ছিল যেসব গাড়ি ও পার্টসের শিপমেন্টের অর্ডার এসেছে, সেগুলোর তদারক করা। তখনো কাজের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয়নি। তাই মাজদা’র অ্যাসেম্বল লাইন থেকে সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের কাস্টমারদের কাছে পাঠাতে প্রচুর শ্রমিকের দরকার হতো। প্রতিদিন গাড়ির হিসাব রাখতে ইনোয়ি যখন কার্ডগুলো শ্রেণিবিন্যাস করতো, আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম।
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে ল্যারি জাপানের বিভিন্ন অংশে ভ্রমণ করেছেন। তার ভ্রমণের তালিকায় জাপানের প্রধান চারটি দ্বীপ কিউশু, হংশু, শিকোকু এবং হক্কাইদোও ছিল।
দ্বীপসমূহে ভ্রমণকালীন সময়ের ছবিগুলো এখানে দেখা যাবে। নিচের ছবিটি ল্যারি’র তোলা জাপানের সমুদ্র তীরবর্তী একটি গ্রামের। গ্রামটি সিরোইয়োনে সেনমাইদা টেরেস রাইস ফিল্ডের কাছে অবস্থিত:
ল্যারি তার ব্লগে জাপানে থাকাকালীন সময়ের নানা বিষয় তুলে ধরেছেন। বাদ পড়েনি জুডোতে তার ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্তির খবরও। এমনকি তার ক্যামেরার লেন্সে উঠে এসেছে হিরোশিমা’র শিশুদের শৈশবও।
1 টি মন্তব্য
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া…..অনেক আগের বিলুপ্ত এই ছবিটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। এজন্যই এই সাইটের পোষ্টগুলি আমার খুব ভালো লাগে।