ভয়াবহ পাহাড়ধসে বাংলাদেশে নষ্ট হয়ে গেছে যোগাযোগের রাস্তা এবং সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য এবং জ্বালানির

ইউটিউবে আপলোডকৃত পাহাড় ধসের ভিডিও থেকে নেয়া স্ক্রিনশট। ভিডিওটি আপলোড করেছেন নিউজ অব দ্য ডে নামের একজন ব্যবহারকারী। 

গত ১১ জুন, রোববার থেকে শুরু হওয়া তুমুল বৃষ্টিতে বাংলাদেশের পাঁচটি জেলায় ভূমিধস দেখা দিয়েছে এবং সবশেষে খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৫০ জনে মারা গেছেন বলেও জানা গেছে। অনেকেই নিজেদের থাকার জায়গা, বাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে অবস্থান নিয়েছে। অনেকেই এখনও পাহাড়ের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আছেন এবং আবহাওয়া প্রতিকূল না হওয়ার কারনে পূর্ণগতিতে উদ্ধার কাজও দ্রুত এগুচ্ছে না।

চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান জেলায় ইতিমধ্যে প্রায় হাজারেরও বেশি ঘর বাড়ি বিধ্বস্থ হয়েছে এবং প্রায় ১০,০০০ মানুষের এখন জরুরী থাকার জায়গা প্রয়োজন।

 

আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয়েছে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে কারণ উদ্ধারকারী দল সমস্যার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে পারছে না। সঠিক উদ্ধার পদ্ধতি ছাড়াই গ্রামের মানুষের মাটি সরিয়ে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এটাই প্রথম পাহাড় ধসের ঘটনা নয়। প্রতি বছর বৃষ্টিপাতের সময় বাংলাদেশ ঝড়, বন্যা এবং পাহাড় ধসের সম্মুখীন হয়। তবে এবারের ঘটনা আগের চেয়ে বেশ বড় আকারে হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থের আকার বেড়েছে। কয়েকটি জেলা, বিশেষ করে রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকার মানুষ বেশি সমস্যায় পড়েছে খাদ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ এবং খাবার পানির সংকটে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটির সংযোগ সড়কটি পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পর এখনও চালু হয়নি। আরেকটি পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়ির সাথে অন্য জেলার মূল সংযোগ সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়ছে।

আদিবাসী নয়ন ফেসবুকে লিখেছেন:

ভূমিধ্বসে এতগুলো যে প্রাণ হারালো এটুকুতে শেষ নয়, আরো অনেকের প্রাণ যাবে'। [..] বুঝতে পারছেন কি? পেট্রোল পাম্পে তেল, সংকট, বাজারে মরিচের দাম ৬০০ টাকা কেজি চালের দাম বেড়ে দিগুন, সবজির বাজার ধরা যাচ্ছে না আগুনের মত তাপ’ যে আলুর দাম কেজি ১৫ টাকা সে আলুর দাম দাম বেড়ে ৫০ টাকা কেজি হয়েছে” আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা তারপর ও কুলাচ্ছে না মজুদ শেষ, সারা দেশের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নৈসর্গিক স্বর্গ রাঙ্গামাটি।

 

রাঙ্গামাটির একটি ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক। ছবি তুলেছেন দিপু শ্রিং লাপচা। ছবি অনুমতিক্রমে প্রকাশ করা হয়েছে। 

দিপু শ্রিং লাপচা  ফেসবুকে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে রাঙ্গামাটির বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক। তিনি উল্লেখ করেন সড়কগুলোতে যান চলাচল করতে পারছে না জ্বালানির অভাবে।

পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সংযোগ সড়কটি ঠিক করতে নূণ্যতম দুই সপ্তাহ লাগবে। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তায় জমে যাওয়া মাটি, গাছ সরিয়ে তবেই রাস্তা সংস্কারের কাজ করা যাবে।

মুক্তশ্রী সাথি চাকমা ১৫ জুন, বৃহস্পতিবার ফেসবুকে ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন রাঙ্গামাটির পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত মানুষদের অভিজ্ঞতা:

আবার বৃষ্টি শুরু হলো… গত চারদিনের জীবন এমনই চলছে। প্রতিদিন রাতেই আমরা সবকিছু গুছিয়ে ব্যাগে ভরে ঘুমোতে যাই যাতে করে পাহাড় ধস শুরু হলে বা গাছ উপড়ে পড়লে আমরা জীবন বাঁচাতে দ্রুত ঘর থেকে বের হতে পারি। আর শুরু হয়েছে বৃষ্টি।

১৬ জুন শুক্রবার তিনি সতর্ক করে লিখেন:

আবার পুনরায় বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল! রাঙ্গামাটির স্থানীয় মানুষজন যারা ঝুঁকিপূর্ণ  ঘরে আছেন তারা নিরাপদে সরে যান। দয়া করে আপনার ঘরে থেকে বের হয়ে কোন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিন।

‘আমরা কিছুই করতে পারছি না, শুধুমাত্র লাশ গোনা ছাড়া’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশেরে এ হতাহতের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ার সমালোচনা করেছেন। মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ফেসবুকে লিখেছেন:

ম্যানচেস্টারের কয়েকটা মানুষের জন্য কেদে কেটে বুক ভাসায় ফেলার ভান করি।অথচ প্রায় ১৪০ টা মানুষ যারা পাহাড় ধ্বসে মিশে গেছে মাটির সাথে, যাদের মধ্যে ৪ জন সামরিক সেনাও ছিলেন তাদের নিয়ে কোন কোন হ্যাশট্যাগ হয়না, কোন ফ্রেম তৈরী হয় না, কোন সেফ মার্কিং হয়না।

দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশই বৃষ্টিকালীন সময়ে নিয়মিত ভাবেই বন্যা এবং পাহাড় ধসের মুখোমুখি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে শ্রীলংকায় এমন পাহাড় ধসের কারণে ২০০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ভারী বৃষ্টিপাত এবং পাহাড় ধসের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করেছিল। কর্তৃপক্ষ এর আগে পাহাড়ের পাশে থাকা ৬০০টি বসতী ঘরকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল যদিও সে ঘরগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়নি।

প্রতি বছরই আরো বেশি বেশি পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করা হচ্ছে এবং প্লট হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। সবুজে বাঁচো নামের একটি ব্লগে অভিযোগ করা হয়:

কিছু অর্থ-লোলুপ প্রভাবশালী মানুষ এবং সরকারের পাহাড় ও ভবন সংক্রান্ত কয়েকজন রুই কাতলা তাদের পাহাড়ের উপর অস্থায়ী ঘর তৈরী করে থাকতে দেয় এবং অর্থ উপার্জন করে। যার কারনে তাদের উচ্ছেদ অভিযান কখনও সফল হয় নি। পাহাড় কেটে বন ধ্বংস করে তারা ঘরবাড়ি বানায় ফলে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে মাটি ভেজা ও ভারী হয়ে পড়ে : যার ফলাফল ভূমিধ্বস।

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ফেসবুকে লিখেছেন:

পাহাড় কেটে, গাছ কেটে, বসতি গড়ে পাহাড়গুলোকে আমরা মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছি। এখন প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। আমরা অসহায়, নিহতদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .