নকল সংবাদ নিয়ে সংস্থাগুলো নিজেরাই অনেক বেশি চিন্তিত

এটা কী সমৃদ্ধ নয়? ছবি: পিক্সাবের মাধ্যমে পাবলিক ডোমেইনে

কুখ্যাত একনায়কতন্ত্র আর ডাহা মিথ্যাবাদীদের পরিচালিত প্রচারণার যন্ত্রের ছবিওয়ালা চটি পত্রিকাগুলোর একসময়ে একচ্ছত্র দখলে থাকা “নকল সংবাদ” হিসেবে পরিচিত জিনিসগুলো এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক অনলাইনের নানা মতের ব্যক্তিদের পাশাপাশি দ্রুত পয়সা খোঁজা ভাড়াটে অনুচর বা অন্যদের জন্যে সব ধরনের মিথ্যা, কল্পনা এবং কৃত্রিমতার উপর ভিত্তি করে বানানো এসব কাহিনী। এই দৃশ্যকল্পটি মহানগরী এবং “মাতৃভূমি”র ৬ষ্ঠ পর্ব ছাড়াও বলকানের ছোট ছোট শহরগুলোর মতো অসম্ভাব্য জায়গাগুলোতেও চলমান।

এই জাতীয় উপাদানের জন্যে একটি অতৃপ্ত ক্ষুধা নিয়ে গুজবের কুঠরীতে বসবাসকারী দর্শকের সঙ্গে সঙ্গে একটি বিশাল খাবারের পাত্র হিসেবে কাজ করা ফেসবুক এবং টুইটারের মতো সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের মঞ্চগুলোর অস্তিত্ব বিদ্যমান না থাকলে নকল সংবাদের হয়তো সামান্যই আকর্ষণ থাকতো। এইসব থামানোর চেষ্টায় আতংকিত হয়ে পড়া সংবাদ সংস্থা এবং মিডিয়া-কেন্দ্রিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনৈতিক লাইন জুড়ে সংলাপ উস্কে দেয়ার জন্যে মনগড়া সত্যতা যাচাই এবং ধাপ্পাবাজি-সনাক্তকরণ প্রকল্প ও উদ্যোগের কাহিনী বানাতে শুরু করে।

তবে কেউ হয়তো বৈশ্বিক এপ্রিল ফুল দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে গোপন কমিটি এপ্রিল ফুলের সম্মিলিত মহাসভা (এএফইউসি)-এর চালাকির গভীর চোরাবালির মতো এতটা হুমকির মুখে পড়েনি। “কৌতুক জগতের বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন” হিসেবে প্রায়শঃই অভিহিত এই এএফইউসি বৈশ্বিক গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অতি দ্রুত বেড়ে চলা সত্যের ছদ্মাবরণে স্থূল মিথ্যার ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার আলোকে অনলাইন অংশে ২০১৭ সালের এপ্রিল ফুল উদযাপন বাতিলের ঝুঁকি নেয়ার গুজব মোকাবেলা করার জন্যে গত সপ্তাহে একটি জরুরী অধিবেশনের আয়োজন করে।

প্রতি বছর ১ এপ্রিল অনেক দেশে কৌতুক ও ব্যবহারিক রসিকতাসহ এপ্রিলের বোকা দিবস উদযাপন ছাড়াও এএফইউসি ২৮ ডিসেম্বর তারিখে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সাধু নির্দোষের দিবস এবং স্বল্প পরিচিত – বাবা-মায়ের তাদের প্রাক-কৈশোর শিশুদের দত্তক নেয়া হয়েছে বলে মজা করা – ফিনিশীয় উৎসব পালন করে থাকে। এএফইউসি এছাড়াও নামকরা সংবাদ সংস্থাগুলো যেমন গার্ডিয়ান, বিবিসি এবং অবশ্যই, গ্লোবাল ভয়েসেসের এপ্রিলের ১ তারিখকে স্মরণ করে করা ধোঁকাকেও প্রত্যয়ন করে থাকে। গ্লোবাল ভয়েসেসের একটি তিন বছর আগের এপিলের বোকা দিবসের পোস্ট অস্বাভাবিকভাবে দূরদর্শী নকল সংবাদের ঘটনা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ২০১৭ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে এএফইউসি মহাসচিব জেমে সেরিউ (ফরাসী ভাষায় – সবসময় গম্ভীর) এর করা মন্তব্য তৈরি হওয়া এএফইউসি-এর গুজবটি প্রথমে ব্রেইটবার্ট সংবাদ প্রতিবেদন করে। কথিত রয়েছে ক্যাভিয়ারের স্বাদ পরীক্ষণের অভিযোগ করার সময় সেরিউকে বলতে শোনা গিয়েছে যে সাধারণ মানুষ “ওখানে ছড়িয়ে পড়া কিছু নকল বিষ্ঠা” আর এপ্রিল ফুলের কৌতুকের টুকরোগুলোর পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে না। সেরিউ এধরনের বক্তব্য প্রদানের কথা অস্বীকার করলেও জরুরী অধিবেশনের সভাপতিত্ব করা এএফইউসি’র লাতিন আমেরিকা প্রতিনিধি মু ই. চিস্তোসো (স্পেনীয় ভাষায় – মজার) জানান, “আন্তর্জাতিক সংবাদেদ অতিরিক্ত মিথ্যা বলার প্রবণতার বৃদ্ধি এএফইউসি’র জন্যে গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

সব এএফইউসি সভার মতোই অধিবেশনটি একটি অপ্রকাশিত স্থানে কঠোরভাবে শুধুমাত্র সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে তবে পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এএফইউসি এর জনসংযোগ কর্মকর্তা ও পশ্চিম ইউরোপীয় প্রতিনিধি নে আর্নস্ট (জার্মান ভাষায় – কখনো গম্ভীর নয়)  আনুষ্ঠানিকভাবে গুজবটি বাতিল করে দিয়ে ২০১৭ সালের উদযাপন পূর্বপরিকল্পনা মতো চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন। আর্নস্ট এএফইউসি’র “বাঁধাহীন কৌতুক ও ব্যবহারিক রসিকতা” অব্যহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন নকল সংবাদ সংঘটন সম্পর্কে এএফইউসি’র উদ্বেগ স্বত্তেও যারা আমাদের সুন্দর কোন কিছু করা থেকে বঞ্চিত করে বিদ্রুপ করার জায়গাটি ছিনতাই করে পাষণ্ডের মতো ঘৃণা ও অনৈক্যের বীজ বপন করার চেষ্টা করে তাদের কাছে আমাদের সংগঠন ভয় পেয়ে মাথা নত করতে চায় না।”

অবয়বহীন কাঠামোটির সমালোচকরা এএফইউসির কথিতভাবে “অবাস্তব বানিয়ে ফেলা বিষয়বস্তু” আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বলে ইনফোওয়ার.কম এর মার্চ মাসের গল্পের একটি সংবাদ নিবন্ধে লেখা হয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র রশ্যিস্কি গ্যাজেটার (রুশ সংবাদপত্র) একটি সাম্প্রতিক সম্পাদকীয় ঘোষণা করেছে যে “বানোয়াট কাহিনীর উপর একাধিপত্য ধরে রাখার অশ্লীল ইচ্ছে বিপজ্জনকভাবে অ-প্রতিযোগিতামূলক।”

এএফইউসি সংবাদ সম্মেলনে প্রচার কর্মকর্তা ওশেন স্মেশনো (রুশ ভাষায় – খুব মজার) নিশ্চিত করেছেন যে ইতোমধ্যে মার্কিন কট্টর-ডান এবং তাদের সমগোত্রীয় ইউরোপীয় হাতেগোনা কয়েকটি আগন্তুকসহ বেশ কিছু সংবাদ সংস্থা ১ এপ্রিল থেকে তাদের বিদ্রুপাত্মক লেখা প্রকাশের সংকেত দিয়ে রেখেছে। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ফ্রান্সের জাতীয় হেবদোর এপ্রিল ফুলের লেখাটি মেরিঁ লে পেন (ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী ফ্রান্সের ডানপন্থী জাতীয় ফ্রন্ট-এর সভাপতি) লিখবেন।

“অবশ্য পাঠকরা তাদের অন্য গল্পগুলি থেকে কট্টর ডানপন্থী বিদ্রুপাত্মক লেখাগুলোকে আলাদা করতে পারে কিনা এটা দেখা এখনো বাকি রয়েছে,” বলেছেন এএফইউসি’র দক্ষিণ এশীয় প্রতিনিধি ইওমোম্মা সোফ্যাট।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .