ইকুয়েডরীয় নির্বাচনের সময় ওয়েবসাইট বিভ্রাট, টুইটার স্থগিত

“ভোট গোপণীয়।” ইকুয়েডরীয়রা বেনালকাজার কলেজ কেন্দ্রে ২০১৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে। ছবি: ইকুয়েডরের মন্ত্রীসভা দপ্তরের ফের্নান্দা লে-মারি, ফ্লিকারের মাধ্যমে (সিসি বাই-এসএ ২.০)

ইকুয়েডরের খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ২ এপ্রিলের প্রাথমিক নির্বাচনের কাছাকাছি দিনগুলিতে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ডিজিটাল অধিকার সংগঠনগুলো সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়ে যাওয়া আর প্রযুক্তিগত আক্রমণের ঢেউ প্রত্যক্ষ করেছে। তারা এগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে সন্দেহ করছে।

অনলাইনে যারা প্রার্থীদের সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশ করছিলেন তাদের কাছে এটা অবাক হওয়ার মতো কোন ব্যাপার ছিল না। ফান্দামেদিওস এবং উজুয়ারিওস দিজিতালেসসহ গণযোগাযোগ মাধ্যমের অধিকার নিয়ে কথা বলা এনজিও প্রতিনিধিরা বলেছে কোথায়, কিভাবে আপনার ভোট দিবেন এবং আপনার ভোটার নম্বর আসার পর সেটা কিভাবে অনুসরণ করবেন এসবের নির্দেশিকার মতো নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট উপকরণ প্রকাশের অব্যবহিত পর থেকেই গত তিন মাস ধরে তাদের ওয়েবসাইটগুলো প্রযুক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছে। বিরোধীদলীয় ওয়েবসাইটগুলোসহ তারা নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় আইএসপি (ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী) গুলোতে ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সাংঘাতিকভাবে কমে যেতে দেখেছে।

৩০ মার্চ বিকেলে হঠাৎ করেই ২০১৬ সালের জুলাই মাসে একটি কিটো-ভিত্তিক ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার এবং অন্যান্য ইন্টারনেট-সম্পর্কিত নীতি বিশেষজ্ঞ এনজিও উজুয়ারিওস দিজিতালেসকে (ডিজিটাল ব্যবহারকারী) তাদের প্রকাশিত একটি টুইটের জন্যে টুইটার থেকে নোটিশ দেয়া হলে চাপ বাড়তে শুরু করে:

প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সম্পর্কিত বিষয়বস্তুর জন্যে @উজুয়ারিওসদিজিতাল-এর #ডিজিটালাএ্যালার্টইসি টুইটার একাউন্টটি অবরোধ করা হয়েছে

আপত্তিজনক হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার নয় মাস আগেই প্রকাশিত – না টুইটারের বিধি, না ইকুয়েডরের আইন, কোনকিছুই লঙ্ঘন না করা – আপত্তিকর টুইটটি নিচে দেখানো হয়েছে।

অনুবাদ: @লেনিনমোরেনোপাইস-এর কর-সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত একটি টুইটের জন্যে @সাথবস-এর #ডিজিটালাএ্যালার্টইসি অ্যাকাউন্ট স্থগিত

ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে উজুয়ারিওস দিজিতালেস একটি ব্লগপোস্টে  লিখেছে:

Esta situación altera el normal desenvolvimiento de nuestro trabajo y nos mantiene al margen de nuestra competencia de monitorear amenazas al libre ejercicio de los derechos en internet.

Nuestro trabajo lo hacemos con el fin de que autoridades e involucrados garanticen el libre ejercicio de los derechos en internet y que los sectores involucrados en la gobernanza en internet tengan un panorama completo de la situación para generar mejores políticas públicas desde un punto de protección de derechos humanos.

এই পরিস্থিতিটি আমাদের কাজের নিয়মিত ধারাকে প্রভাবিত করে এবং অনলাইন অধিকারের বিরুদ্ধের হুমকিগুলোকে নিরীক্ষণ করতে আমাদের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে সীমিত করে।

মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে জননীতিগুলো উন্নত করার লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ এবং ক্ষমতার অবস্থানগুলো যেন অনলাইন অধিকারের মুক্ত চর্চার নিশ্চয়তা প্রদান করে এবং ইন্টারনেট প্রশাসনে জড়িত সংস্থাগুলো যেন সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝে, সেটা নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।

পরের দিন ৩১ মার্চ তারিখে উজুয়ারিওস দিজিতালেস-এর ওয়েব সার্ভারটি তাদের মতে একটি ডিডিওএস (বন্টিত পরিষেবা অস্বীকার) আক্রমণের শিকার হয়েছিল। নেতৃস্থানীয় বিরোধী প্রার্থী গুইলারমো লাসোর ওয়েবসাইটটি  অফলাইনে চলে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে তারা একটি টুইট প্রকাশ করার খুব অল্পক্ষণ পরেই এটা সংঘটিত হয়েছে।

এপ্রিলের ২ তারিখে উজুয়ারিওস দিজিতালেসের গবেষকদের করা কারিগরী পরীক্ষাগুলো দেখাচ্ছে যে ১৮:০৫ থেকে ১৯:২০ পর্যন্ত মোভিস্টার, সেএনেতে এবং নেটলাইফসহ স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের নেটওয়ার্কব্যাপী ট্রাফিক এলোমেলো ছিল। এই এলোমেলো হয়ে যাওয়ার পর গবেষকরা আলিয়াঞ্জা পাইস (গর্বিত ও সার্বভৌম পিতৃভূমি জোট)-এর প্রার্থী লেনিন মোরানো বিরোধী মতামতের জন্যে পরিচিত ওয়েবসাইটগুলোতে ট্রাফিক সংখ্যা আচমকা কমে যেতে দেখে। অথচ এসময় জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্রের ওয়েবসাইটটি স্বাভাবিক কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছিল। ভিপিএন পরিষেবা ক্লারো এবং টিভিকেবলের একইধরনের ওয়েবসাইটগুলোও আক্রান্ত হয়নি।

এই গল্পটি লেখা শুরুর পর থেকে এপ্রিলের ৩ তারিখে সংঘটিত ঘটনাটিসহ উজুয়ারিওস দিজিতালেসের ওয়েবসাইটটিতে বেশ কয়েকবার সাময়িক সার্ভার ব্যর্থতার ঘটনা ঘটেছে:

নির্বাচন এগিয়ে আসায় সামাজিক গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে রাজনৈতিক কর্মীদের উপর অনলাইন আক্রমণ নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। ইকুয়েডরের সাবেক উপরাষ্ট্রপতি এবং জালিয়াতির অভিযোগ  থাকা সত্ত্বেও সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হিসেবে বিবেচিত প্রার্থী লেনিন মোরেনোর সমালোচনা প্রকাশকারী টুইটার ব্যবহারকারীদের প্রায় এক বছর ধরে অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়ে রয়েছে। কপিস্বত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এদের মধ্যে অনেককেই নিন্দা করা হলেও একটি রাজনৈতিক অভিপ্রায়ে এগুলো দায়ের করা হয়েছে বলে ব্যবহারকারীরা সন্দেহ করছে।

অনেকের কাছেই রাষ্ট্রপতিত্বে লেনিন মোরেনো থাকার মানে ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোড়িয়ার ক্ষমতারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। সাম্প্রতিক কয়েক মাসে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার কারণে দরিদ্রদের উপকারের জন্যে অর্থনৈতিক নীতি সংস্কার করে অনেকের প্রশংসা পাওয়া একজন জনপ্রিয় বামপন্থী নেতা হিসেবে কোড়িয়া জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন

কোড়িয়া এছাড়াও ইকুয়েডরে বাক-স্বাধীনতার সুরক্ষা দুর্বল করার এবং তার অনুগ্রহের বাইরে চলে যাওয়া নাগরিকদের (রাষ্ট্রের কর্মচারীসহ) নিন্দা করতে দ্বিধাবোধ না করার জন্যে সমালোচিত হচ্ছেন। কোড়িয়া এবং তার নীতির সমালোচনা করার পর অনেক সাংবাদিকঅ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্যাঙ্গ-রচয়িতার হয়রানির অভিজ্ঞতা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .