থাইল্যান্ডের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রক জাতীয় সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ কমিশন (এনবিটিসি) সেনা সমর্থিত জাতীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা পর্ষদ (এনসিপিও) এর তৈরি নিয়মের কথিত লঙ্ঘনের জন্যে ভয়েস টিভিকে সাত দিনের জন্যে স্থগিত করার আদেশ দিয়েছে।
২০১৪ সালে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে এনসিপিওতে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমলাতন্ত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ চালিয়ে যাচ্ছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার পরিবারের মালিকানাধীন ভয়েস টিভি। কেউ কেউ মনে করেন ক্ষমতাচ্যুত নেতাকে হুমকি দিয়ে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যেই টিভি নেটওয়ার্কের স্থগিতাদেশটি দেয়া হয়েছে।
১৫ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত থাই-কম্বোডীয় অমীমাংসীত অঞ্চলে অবস্থিত বিতর্কিত ক্যাসিনোতে একজন লাহু একটিভিস্ট হত্যায় রাস্ট্রের কথিত ভূমিকা এবং কিছু সামরিক কর্মী ও পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িত থাকা নিয়ে টিভি নেটওয়ার্কটির মিথ্যা প্রতিবেদন প্রদর্শনের যুক্তি দেখিয়ে সামরিক বাহিনী ভয়েস টিভির বন্ধের আবেদন করে।
কিন্তু স্টেশনটির বিষয়বস্তু ও সংবাদ পরিচালক প্রতীপ কংসিব সিদ্ধান্তটির সঙ্গে একমত নন:
আমাদেরকে স্থগিত কারণ হিসেবে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর প্রভাব সৃষ্টিকারী লঙ্ঘন পুনরাবৃত্তির এনবিটিসি দাবিটি একতরফা প্রতিবেদন যার সঙ্গে আমরা ভিন্নমত পোষণের ইচ্ছে প্রকাশ করি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি যে বাস্তব তথ্যভিত্তিক কোন মতামত জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হতে পারে না।
ভয়েস টিভি তাদের প্রতিবেদনগুলো গণমাধ্যমের নৈতিকতা মেনে চলেছে এবং তাদের কিছু কিছু অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় স্টেশনটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে বলে জোর দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে:
ভয়েস টিভি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে আমরা কঠোরভাবে গণমাধ্যমের নৈতিকতা মেনে প্রতিবেদন করছি। ভয়েস টিভি ভিন্ন মতামত প্রদান করে থাকলেও আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে বিষয়বস্তুগুলো জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষতি করবে না।
ভয়েস টিভি আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে এবং সর্বক্ষণ এনবিটিসি’র অনুষ্ঠান উপ-পর্ষদকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এছাড়াও আমরা তাদের অনুরোধ অনুসারে ক্রমাগত গণমাধ্যম পর্ষদ এবং জড়িত সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানগুলো সংশোধন করে যাচ্ছে।
জাতীয় নিরাপত্তাকে “হেয়” করার জন্যে এনবিটিসি এবারই প্রথম কোন গণমাধ্যম নেটওয়ার্ককে স্থগিত করেছে তা নয়। ২০১৪ সালে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর থেকেই এনবিটিসি এনসিপিও’কে কঠোরভাবে থাই জনগণের সামাজিক সম্প্রীতি ও “সুখ”-এর প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করার আদেশ দিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম গোষ্ঠী স্থগিতাদেশটির সমালোচনা করছে। থাই সাংবাদিক সমিতি এবং থাই সম্প্রচার সাংবাদিক সমিতি আদেশটির সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা লংঘনের বর্ণনা করে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সংবাদ মাধ্যমের জোট সমগ্র টিভি নেটওয়ার্কটি স্থগিত করার সিদ্ধান্তটিকে চরম বলে উল্লেখ করেছে:
The NBTC’s suspension of VOICE TV is an extremely disproportionate response — an overkill shutting down the entire station and all its programming — to broadcast content that is well within the station’s prerogative.
এনবিটিসি’র ভয়েস টিভির স্থগিতাদেশটি অত্যন্ত ভারসাম্যহীন একটি প্রতিক্রিয়া – বেশ ভালভাবেই স্টেশনের ক্ষমতার সীমার মধ্যে থাকা বিষয়বস্তু সম্প্রচারের জন্যে – এই সমগ্র একটি স্টেশন এবং এর সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াটা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি।
কিছু কিছু টুইটার ব্যবহারকারী ভেবে হয়রান এনবিটিসি কেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মালিকানাধীন টিভি নেটওয়ার্কের উপর মনযোগ নিবদ্ধ করেছে:
The TV channel owned by Thaksin’s son is targeted (and punished) by authorities and regulators repeatedly for their political commentary. https://t.co/lDneo5Afcc
— Saksith Saiyasombut (@SaksithCNA) March 27, 2017
রাজনৈতিক ভাষ্যের জন্যে থাকসিনের ছেলের মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল বারবার কর্তৃপক্ষ এবং নিয়ন্ত্রকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত (এবং শাস্তিপ্রাপ্ত)।
Funny how one outlet of all #ThaiMedia keeps getting punished for “one-sided” broadcast, or something or other. https://t.co/t8iI2pQ2yv
— Kaewmala (@Thai_Talk) March 27, 2017
মজার ব্যাপার কেন সব #থাই-গণমাধ্যম-এর একটি প্রতিষ্ঠান “পক্ষপাতদুষ্ট” সম্প্রচারের জন্যে, নাকি অন্যকিছু বা অন্য কারণে বারবার দণ্ডিত।
এনসিপিও রাজনৈতিক পুনর্মিলন ও বেসামরিক শাসনের অনুমোদনের মাধ্যমে দেশে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার আশার কথা বললেও এভাবে গণমাধ্যম খাতের কাজ সীমাবদ্ধ করে রেখে তারা কিভাবে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছে সেটা পরিষ্কার নয়।