২২ মার্চ তারিখে তিবলিসিতে একটি গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মা ও তার মেয়েকে আঘাত করলে ১১ বছর বয়সী মেয়েটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়, আর গুরুতর আহত অবস্থায় তার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ‘মানুষের জীবনহানি ঘটানো ট্রাফিক নিরাপত্তা বিধি লঙ্ঘন’ এর তদন্ত শুরু করেছে, যা চার থেকে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গাড়িটি দিক ভুল করে প্রথমে যখন একটি বিলবোর্ডের পর মা ও মেয়েকে আঘাত করে তখন তারা বাস থামানোর একটি স্থানে দাঁড়িয়ে ছিল।
২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে প্রতি বছর সাড়ে ১২ লক্ষ মানুষ গাড়ি দুর্ঘটনার ফলে মারা যায়। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) অনুসারে, ইউরোপের জর্জিয়াতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি (প্রতি লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ১৬.৩৬ জন) ছিল। জর্জিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর চব্বিশ শতাংশই পথচারী।
জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান (নিচে দেখুন) অনুসারে, ২০০৮ সাল থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমতে থাকলেও ২০১১ সাল থেকে এটা আবার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। মন্ত্রণালয়টি তার প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে সড়ক দুর্ঘটনার সবচেয়ে সাধারণ ঝুঁকিটি হচ্ছে এলকোহলের প্রভাবে গাড়ি চালনা এবং গতিবেগ বাড়ানো।
২০১১ সালে জর্জিয়াতে সংঘটিত ৪,৫০০ ট্রাফিক দুর্ঘটনায় ৬,৬০০ জন আহত এবং ৫০০ জনের জীবনহানি ঘটেছে। ২০১৬ সালে ৭,০০০ প্রতিবেদিত সড়ক দুর্ঘটনায় ১০,০০০ জন আহত এবং ৬০০ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
ট্রাফিক লঙ্ঘনে শিথিলতা বাড়ছে
মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকা সত্ত্বেও ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাফিক লঙ্ঘনের জরিমানা কমিয়ে প্রশাসনিক বিধির একটি সংশোধনী প্রস্তুত করেছে। প্রস্তাবিত বিধি অনুসারে, মাঝের লাইন পরিবর্তনের বর্তমানের ১০০ লারি (প্রায় ৩,২৮০ টাকা) অর্থদণ্ড থেকে কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে। পুনরাবৃত্তি করা অপরাধের জন্যে জরিমানা ২০০ লারি (প্রায় ৬,৫৬০ টাকা) থেকে কমিয়ে ১০০ লারিতে (প্রায় ৩,২৮০ টাকা) হ্রাস করা হবে।
যথাসময়ে ট্রাফিক লঙ্ঘনের জরিমানা না পরিশোধের অপরাধীদের বর্তমানের ১৫০ লারির (প্রায় ৪,৮৮০ টাকা) পরিবর্তে এখন দিতে হবে ৪০ লারি (প্রায় ১,২৮০ টাকা) জরিমানা।
২০১৬ সালে জর্জিয়ার সরকার জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কৌশল অনুমোদন করেছে। লেখকরা উল্লেখ করেছেন যে সড়ক দুর্ঘটনায় উচ্চ মৃত্যু হারের কারণে কৌশলটি গ্রহণের প্রয়োজন ছিল। যৌথভাবে অর্থনীতি, আঞ্চলিক উন্নয়ন, শ্রম ও সামাজিক বিষয়ক, শিক্ষা ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় এবং তিবলিসি সিটি হল কৌশলটি পাঁচ বছরের জন্যে গ্রহণ করেছে।
কৌশলটির মধ্যে স্কুল পরিবহণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সময়মত জরুরী চিকিৎসা পরিষেবা এবং স্কুলে সড়ক নিরাপত্তা প্রশিক্ষণসহ আরো অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার জন্যে অর্থনীতি মন্ত্রণালয় একটি আন্তঃপ্রতিষ্ঠান কমিশন এবং কর্মী দল গঠন করেছে।
একটি বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী গিওর্গি ভিরিকাশভিলি বলেছেন যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের তৈরি সুপারিশের কারণে উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে।
‘এটি জর্জিয়াতে সফল এবং টেকসই দীর্ঘমেয়াদী সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল,’ রাষ্ট্রপতি বলেছেন।
আরএফই/আরএল এর সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠী সড়ক নিরাপত্তা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা গেলা ভাশিলেভা বলেছেন যে জর্জিয়ার সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত মূল সমস্যাটি হলো রাস্তাগুলো মানুষের পরিবর্তে (শুধু) গাড়ির কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে।
পঞ্চ-বার্ষিক কৌশলটির সড়ক নিরাপত্তা, শহর ট্রাফিক এবং গাড়ি রাখার স্থানের অভাবের বিষয় মোকাবেলা করার কথা।