- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত ১ কোটি ২০ লক্ষ দাসের জন্যে ‘আমার স্বাধীনতা দিবস’ আনতে যুদ্ধ করছে

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, আইন, উন্নয়ন, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, মানবাধিকার, রাজনীতি, লিঙ্গ ও নারী
[1]

ফ্লিকার থেকে স্টিভেন ডেপোলোর চিত্র। সিসি বাই ২.০।

বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত সপ্তাহে আধুনিক দিনের দাসত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্যে #আমারস্বাধীনতাদিবস–কে স্বীকৃতি প্রদান করেছে [2] । সামাজিক গণমাধ্যমে এ্যাক্টিভিস্টরা তাদের কাছে স্বাধীনতা মানে কী ব্যাখ্যা করেছে। ভারতে অনেক শিক্ষার্থী দাসত্ব নির্মূল করতে তার দেশ আসলে কতদূর এগিয়ে এসেছে সেটা জিজ্ঞাসা করে আন্দোলনে যোগদান করেছে।

এই লজ্জা আমাদের – আমরা সব সময় আমাদের মাথা ঘুরিয়ে থাকি #ভারত [3] #হায়দ্রাবাদ [4] #আমারস্বাধীনতাদিবস [5] #শিশুবাঁচাও [6]

বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক ২০১৬ এমন একটি পরিস্থিতির সূচক যেখানে কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির শরীরের নিয়ন্ত্রণের স্বাধীনতা, তাদের কোন কাজ পছন্দ করার, করতে অস্বীকার করার বা কাজ বন্ধ করার স্বাধীনতা হরণ করে। এর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক, বাধ্যতামূলক ভিক্ষা, গার্হস্থ্য পরিষেবা এবং বাণিজ্যিক যৌন কাজ অন্তর্ভুক্ত।

#আমারস্বাধীনতাদিবস [9] শিশুশ্রম জোটের কাছে স্বাধীনতা কী? শিশুশ্রম, শিশু দাসত্ব ও শিশু পাচারমুক্ত একটি বিশ্ব

আমাদের কেন এই ধরনের সচেতনতার প্রয়োজন?

এমনকি ২১ শতকে এসেও দাসত্ব একটি গুরুতর উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক মুক্ত হাঁটা ফাউন্ডেশনের ইস্যুকৃত বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক ২০১৬ [12]-এর হিসেব অনুসারে ২০১৪ এবং ২০১৬ সালের মধ্যে ভারতের দাস জনসংখ্যা ৪১ লক্ষ বেড়ে সামগ্রিক দাস জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষ হয়েছে। এছাড়াও গবেষকরা জেনেছে যে আজকে ভারতে বসবাসকারী জনসংখ্যার অর্ধেকের চেয়ে বেশি মানুষ দাসত্ব গ্রহণে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

স্ক্রল.আইএন ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের তিন লক্ষের বেশি মানুষকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক এবং ৪২ লক্ষ মানুষকে গৃহস্থালী কর্মের যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে [13] । সব ছেলেদের মধ্যে আট শতাংশ এবং সব মেয়েদের মধ্যে ১৪ শতাংশ ভিক্ষুক রয়েছে বলে জানিয়েছে স্ক্রল.আইএন প্রতিবেদন। আর ৩০ লক্ষ নারী যৌন ব্যবসায় নিয়োজিত যাদের মধ্যে ১২ লক্ষ অপ্রাপ্তবয়স্ক। তার উপর, ভারতীয় নারীদের অর্ধেক বিয়ে করতে এবং তারপর একজন অবৈতনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়।

ভারতে আধুনিক দিনের দাসত্ব কী রকম?

অবরুদ্ধ নারী [14],” প্রকল্প অনুসারে, দরিদ্র পরিবারগুলোতে বসবাসকারী সম্ভাব্য শিকারদের সনাক্ত করার জন্যে কর্মরত বিভিন্ন ধরনের সংস্থা নিয়ে পুরো অপরাধমূলক নেটওয়ার্কগুলো গঠিত। প্রকল্পটি এই সংস্থাগুলোর অধিকাংশই সাধারণত পূর্ব ভারতের গ্রামগুলোতে কাজ করে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে [14]

#ভারত [3]-এ একটি কনে শিশুর ব্যাথ্যা-বন্দীদশা, আর আশা অবশেষে সে যখন মুক্ত। @সিএনএনস্বাধীনতা [15] #আমারস্বাধীনতাদিবস [5]

‘গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়': ভারতের দাস কনেরা #মেয়ে [19] #দাসত্ব [20] #ভারত [21] #নারীরপ্রতিসহিংসতা [22] @এজেইংরেজি [23]

২০১৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ১৫ বছর বয়সী মেয়ে তার মাথা ও মুখে ব্যান্ডেজ বাঁধা একাধিক ছড়ে যাওয়া, একটি কালসিটে পড়া চোখ, ফোলা ঠোঁট, সারা শরীরে পোড়া ও পাঁচড়া নিয়ে নয়াদিল্লির সাফদারজং হাসপাতালে ভর্তি হয় [14]। এই মেয়েটিকে গৃহস্থালী কর্মী হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল এবং প্রতিদিন তার নিয়োগকর্তা তাকে পেটাতো। দুঃখের বিষয় হলো এটা একটা খুবই সাধারণ মামলা।

ভারতীয় মেয়েদের কখনো কখনো দিনে ১৪-১৬ ঘন্টা রান্না ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সন্তানের দেখাশোনা পর্যন্ত দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এর জন্যে তারা প্রায় কিছুই পায় না এবং প্রায়শঃই তাদের মজুরি সরাসরি চলে যায় “কর্মসংস্থান সংস্থা” গুলোর কাছে। এই নারীদের অধিকাংশই জীবনের দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে আছে।

গার্হস্থ্য শ্রমিক এবং যৌন পাচারের মধ্যেই দাসত্ব সীমাবদ্ধ নয়: অনেকেই চুক্তিবদ্ধ কাজে আটকা পড়ে আছে [26]। মানুষ তার টাকা ধার মৌলিক (চাষবাস, বিয়ে এবং এরকম আরো) প্রয়োজনের জন্যে টাকা ঋণ নিতে গিয়ে তাদের নিরক্ষরতা এবং অসহায়ত্বের কারণে চুক্তিতে ফেঁসে যায়।

এর পরিসমাপ্তি ঘটানোর জন্যে কী করা হয়েছে?

১৯৭৬ সালে দাসত্ব নিষিদ্ধ করার [27] সময় ভারতে চুক্তিবদ্ধ শ্রম প্রতিরোধ আইন প্রণীত হলেও এর ব্যাপক অনুশীলন রয়ে গেছে। সরকার আজকে এখন চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের নির্দিষ্ট মজুরি [28]র জন্যে বিতর্ক করছে।

বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও [29]” (মেয়ে বাঁচাও, শিক্ষিত করো) প্রচারাভিযানসহ রাস্ট্রীয় অন্যান্য উদ্যোগগুলো হরিয়ানার মতো নারী-পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত পরিবর্তিত হয়েছে এমন সংকটাপন্ন রাজ্যে কাজ করছে বলে মনে হয়।

জন্মকালীন লিঙ্গ অনুপাতটি আগেকার ৮৫০ থেকে ৯৩৮-এ উন্নীত হয়েছে। এবছরের মধ্যে আমাদের সরকার লিঙ্গ অনুপাতের লক্ষ্য ৯৫০ অর্জন করবে।

প্রধানমন্ত্রী @নরেন্দ্রমোদী [31]র ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ যোজনা এবং এর @এমএলখাত্তার [32] জীর চমৎকার বাস্তবায়নের সৌজন্যে।
একেই #কাজবলাহয় [33] 🙂

আরেকটি প্রচারাভিযান “কন্যার সঙ্গে সেলফি [36]” হরিয়ানার ছোট একটি গ্রাম বিবিপুরে চালু করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্রচার করার উদ্যোগটি গতিবেগ লাভ করেছে:

#কন্যারসঙ্গেসেলফি [37] প্রচারাভিযানটি পছন্দ করি। আমার কন্যা যশস্বীনি @নরেন্দ্রমোদী [31]. #বেটিবাঁচাওবেটিপড়াও [38]

এছাড়াও প্রচারাভিযানটি বিশ্বজুড়ে মনযোগ আকর্ষণ করেছে:

হ্যালো #ভারত [3]-এর নতুন বন্ধুরা! আমার মেয়েটিকে বিস্কুট #বেক করা [41]র উপর একটি ক্লাস করাতে যাচ্ছি। #কন্যারসঙ্গেসেলফি [42]

আজ বেশ কয়েকটি সংগঠন দাসত্ব পরিসমাপ্তির জন্যে কাজ করছে। ভারত ও নেপালে মাইতি [45], মার্গ এনজিও [46], দাসদের মুক্ত কর [47], এবং অবরুদ্ধ নারী [48] হলো এই তালিকার মাত্র কয়েকটি কর্মসূচী এবং বেসরকারি সংস্থা।

স্থানীয় পর্যায়ে সম্প্রদায়ের জনগণ বিপজ্জনক ঝুঁকি রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, সেখানে গণবিয়ে [49]র প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে যা অর্থের সাশ্রয় করে ঋণের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে তাদেরকে ঋণগ্রস্ততার ফাঁদ থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে।

এবছর ভারতে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ দাস আমার স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পারেনি। ভারতের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের দাসত্বের জীবনে ঠেলে দেয়া দারিদ্র্য ও যৌনতার দুষ্টচক্রটি ভাঙ্গার জন্যে আরো কিছু করা না গেলে ২০৩০ সালে [50]র মধ্যে এই সংখ্যাটি বেড়ে ১ কোটি ৮০ লক্ষ হবে।