
একটি কার্টুনে রূপায়িত হোসনি মুবারকের শাসনের পতন ঘটানো ২০১১ সালের মিশরীয় বিপ্লব। উত্স: উইকিমিডিয়া কমন্স।
ঐতিহাসিক বিবরণগুলো নতুন করে বলার জন্যে কারো গল্প বলার একটা ভাল দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে একটা রূপালী জিভ আর তার ইচ্ছের প্রয়োজন রয়েছে। আপনার গল্প বলার ধরনটিই শ্রোতার কল্পনার মধ্যে একটা শক্তিশালী পার্থক্য তৈরি করে দিতে পারেন।
আমি সবসময়ই কৌশলে মিশরীয় বিপ্লব নিয়ে – যারা এর সম্পর্কে খুব সামান্যই জানেন – তাদের উদ্দেশ্যহীন আলোচনাগুলো এড়িয়ে গিয়েছি পাছে কথাগুলো আমাকে ব্যর্থ করে দেয়। আর তাই এই ঘটনার স্মৃতি কোথাও বয়ে নিয়ে গেলেও এটা নিয়ে আমি খুব কমই কথা বলেছি।
ছয় বছর আগে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারির এক রাতে বছরের পর বছরের অর্থনৈতিক মন্দা আর অন্ধকারের পর একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সংকেত দিয়ে মিশরের ইতিহাসের গতিপথ বদলে গিয়েছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের উত্খাত তাহরির স্কোয়ারের হৃদয়ে উচ্ছ্বাস আর এবং গুঞ্জন তুলেছিল। দৃশ্যটিতে একটি ক্ষণস্থায়ী পুলক প্রাধান্য বিস্তার করেছিল; আজকেও আমি যখন ভাবি তখন আমার রোমে শিহরণ জাগানো একেবারে স্বকীয়-এক-ধরনের একটি অনুভূতি। এটা ছিল অনেকগুলো অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর একটি পরিসমাপ্তি আর একটি সম্ভাবনাময় নতুন কালপর্বের সূচনা।
অথবা এটাকে যেমন মনে হতো।
সেই বছর থেকে মিশর প্রথমে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বে, তারপরে সেনা-সমর্থিত আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসির অধীনে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখছে। রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর অভিযান, ঘোর দুর্নীতি আর জমির অবৈধ বাণিজ্য রীতিতে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতিটি আশা করার মতো সম্ভাবনাগুলোকে ধরে রাখতে না পারায় পরিবর্তনের উদ্দীপনাটা চরম হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে।
অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা উজ্জ্বল দিন ফিরে আসার কোন প্রত্যাশা না থাকায় বিশেষ করে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার কোন একটি সুযোগ লাভের প্রচেষ্টা শুরু করে দেয়।
অনেকের কাছেই ২০১১ সালের জানুয়ারি কেবলই একটি স্মৃতি ছাড়া কিছু নয়। আর তার বিকৃত একটা কিছু।
তবে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত এক জিনিসের জ্ঞান যেটা কারো মৌলিক ন্যায় বিচারের তৃষ্ণা নিবারণ করেছে সেটা হলো মুবারক এবং তার অনুচরদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রিয়তার ক্ষমতা যে একটা দীর্ঘদিনের একনায়কতন্ত্রকে উত্খাত করতে পেরেছে সেটা জানার অনুভূতিটি বিক্ষিপ্তভাবে আবার আশা জাগিয়েছে। সহজভাবে বলতে গেলে মিশরীয়রা নিজেদেরকে বলতে পারে যে অন্তত: ২০১১ সালের জানুয়ারির অন্যতম প্রধান একটি লক্ষ্য একটি স্থায়ী সফলতা লাভ করেছে।
কিন্তু আশার এই কুটোটিও আর সেখানে থাকবে না বলে মনে হচ্ছে।

একজন বিক্ষোভকারী ২৫ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে মিশরীয় পতাকা দোলাচ্ছে। উত্স: জেইনাব মোহাম্মদ।
কিছুদিন আগে মিশরের বাতিলকরণ আদালত একটি চূড়ান্ত রায়ে পুনরায় আপিল বা পুনর্বিচারের জন্যে কোন সুযোগ না রেখে ২০১১ সালে বিক্ষোভকারীদের হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে হোসনি মুবারককে মুক্ত করে দিয়েছে।
১৮ দিন ধরে চলা অভ্যুত্থানে প্রায় ৯০০ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু উস্কে দেয়ার দায়ে ২০১২ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত মুবারক ২০১৭ সালের মার্চে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন। আদালতে সারাদিন ধরে শুনানির পর বিচারক আহমেদ আবদেল কাভি ঘোষণা করেছেন “আদালত আসামীকে নির্দোষ পেয়েছে।” “এটা ছিল আরব বসন্তে নিহত এবং লক্ষ লক্ষ অংশগ্রহণকারীদেরকে দিয়ে দেয়া ন্যায়বিচারের কোনো সুযোগ লাভের ভাগ্যনির্ধারণী রায় ঘোষণা,” কায়রো-ভিত্তিক সাংবাদিক ফরিদ ওয়াই ফরিদ যেমন ব্যাখ্যা করেছেন।
একটি জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিপাতিত মুবারক হলেন এমনকি তিনি এবং তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে গণহত্যার জন্যে বিচারের মুখোমুখি হওয়া একমাত্র আরব রাষ্ট্রপ্রধান।
আজকে বিশ্ব তার অন্যতম একজন একনায়ককে মুক্তভাবে বিচরণ করতে দেখতে পাচ্ছে। তবে ইতিহাস তাকে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মোড়কে ক্ষমতা দখল করে একটি জাতিকে নিপীড়নকারী একটি সামরিক শাসনের প্রতিমূর্তি ছাড়া আর কোন কিছু হিসেবেই স্মরণ করবে না।
মিশরীয়রা যখন অন্ধভাবে অপরাধীদের নিজেদের মতো করে বানানো আইনের যুগের আদালতের রায়কে সমর্থন করতো – অজ্ঞ থাকার সেই দিনগুলো ফুরিয়েছে। আদালতের যুক্তি খণ্ডন শুনুন অথবা মামলাটি অনুসরণ করুন – রায়টিতে কিছু ভুল রয়েছে কিনা এটা বুঝার জন্যে কারো আইনী ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই। ভয়ংকর কিছু একটা ভুল।
সময়কালটিকে দোষারোপ করুন।
কয়েক বছর আগে মিশরীয়রা হয়তো এই ধরনের একটি রায় দেয়া হলে রাস্তায় নেমে পড়তো। আমি অবশ্যই সেটা হলফ করে বলতে পারি।
সময়কালটিকে দোষারোপ করুন।
আজ আমি বুঝতে পারি যে কি ঘটছে এবং কি হবে এসব নিয়ে আগ্রহের অভাব একটা বাস্তবতা এবং পরিবর্তনের জন্যে অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছার অস্তিত্বের মৃত্যু হয়েছে। এটা এমন কিছু বিষয় যা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বুঝতে পারছি কিন্তু স্বস্তির সঙ্গে মেনে নিতে পারছিলাম না।
তবে সামাজিক গণমাধ্যমে আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি এ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ এবং মানবাধিকার প্রচারকর্মীদের দেয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ছিল।
মিশরীয় এ্যাক্টিভিস্ট হাওয়া রেহিম টুইট করেছেন:
سلاما علي “شهداء يناير” يرقدون بكرامة أرواحهم الطاهرة
براءة مبارك خزي وعار لشعب هانت عليه دماء اولادهم #براءه_لهم_وقمع_لنا— ثــــــــــورةحرة⚡ (@Hawa_Rhim) March 5, 2017
জানুয়ারির – বিশুদ্ধ আত্মার মর্যাদা নিয়ে বিশ্রামরত – শহীদদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। মুবারকের বেকসুর খালাস প্রাপ্তি ভাইদের রক্তদানের প্রতি উদাসীন কোন জাতির জন্যে একটা বড় লজ্জা।”
আরেকজন মিশরীয় টুইটার ব্যবহারকারী বলেছেন:
كان نفسي اسِفّ واهَزّر في حوار براءة مبارك بس ماعرفتش، الله يرআমি মুবারকের রায় নিয়ে উপহাস করতে চেয়েছি, কিন্তু দিব্যি করে বলছি আমি পারিনি। যারা মৃত্যুবরণ করেছে ঈশ্বর তাদের উপর দয়া করুন।حم اللي ماتوا..
— Rasputin (@EvanRasputin) March 2, 2017
আমি মুবারকের রায় নিয়ে উপহাস করতে চেয়েছি, কিন্তু দিব্যি করে বলছি আমি পারিনি। যারা মৃত্যুবরণ করেছে ঈশ্বর তাদের উপর দয়া করুন।
আলজেরীয় উপস্থাপক ওয়াসিলা আওলামি “আমি মিশরে বিচারের মুখোমুখি হতে চাই,” বলা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার এল আসাদের একটি ছবি দিয়ে রায়টিকে ঠাট্টা করে টুইট করেছেন:
بعد #براءة_حسني_مبارك .. pic.twitter.com/hy1vbnQvZT
— وسيلة عولمي (@wassilaoulmi) March 2, 2017
#মোবারকনির্দোষেরপর
সময়কালটিকে দোষারোপ করুন।