- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চীনের ছায়াতলে: তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কি একাডেমিগত স্বাধীনতা বিক্রি করে দিবে?

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, চীন, তাইওয়ান (ROC), নাগরিক মাধ্যম, বাক স্বাধীনতা, রাজনীতি, সেন্সরশিপ
[1]

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফ্যান ইয়ুনের হাতে ধরা একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা আছে, “আমি জাতীয় তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যান ইয়ুন, একাডেমিক স্বাধীনতা বিক্রির জন্যে নয়।” ছবির কৃতজ্ঞতা: সংবাদের মাধ্যমে ফ্যান ইয়ুন

ব্রায়ান হিও’র লেখা পোস্টটি মূলতঃ ৭ মার্চ [1] তারিখে নিউ ব্লুমে প্রকাশিত কয়েছে। নিচের সম্পাদিত সংস্করণটি অংশীদারিত্ব চুক্তি অনুসারে গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনরায় প্রকাশিত হল।

তাইওয়ানের ১৫৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্ততঃ ৮০টি [2] ক্লাসে একত্রীকরণ/ স্বাধীনতার বিষয় অথবা “এক চীন, এক তাইওয়ান” ইস্যু নিয়ে আলোচনা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চীনের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে – সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারটি গত সপ্তাহে তাইওয়ানের সমাজে নাড়িয়ে দিয়েছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তাইওয়ানের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ৎসিং হুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় চেংচি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আরো সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্য যুক্তি দেখাচ্ছে যে চুক্তি স্বাক্ষরের মানে এই নয় যে তারা তাইওয়ান চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ দাবি করা “এক চীন নীতি” মেনে নিয়েছে।

একত্রীকরণ/ স্বাধীনতার বিষয়টি রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার একটি রঙ্গভূমিতে পরিণত হয়েছে যা উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষার মতো প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবইতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণীগুলোতে মিং রাজবংশের সময় থেকে তাইওয়ান রবং চীনকে একটি একক রাজনৈতিক স্বত্ত্বা বানিয়ে [3]  সাবেক ক্ষমতাসীন কুয়োমিনটাং পার্টির ইতিহাস সংশোধনের একটি চেষ্টার ফলে বিক্ষোভকারীরা আগস্ট ২০১৫ [4]-এ শিক্ষা মন্ত্রণালয় দখলে নিয়ে নিয়েছিল।

এসব কিছুর পরেও শিক্ষক এবং অধ্যাপকরা স্বাধীনভাবে তাদের পাঠ্যক্রম পরিকল্পনা করতে পারেন বলে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে তাইওয়ানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাক স্বাধীনতা ভোগ করে। এবার চীনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিগুলো অনেককে বিস্মিত করেছে।

তাইওয়ানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যেমন সামাজিক গণতান্ত্রিক পার্টির ফ্যান ইয়ুন এবং শিহ ৎসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি লাই তিং-মিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চুক্তির নিন্দা করে একটি পিটিশনের আয়োজন করেন [5]

জাতীয় তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সমিতি এবং জাতীয় তাইওয়ান বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ছাত্র সমিতিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমিতিগুলো গোপন চুক্তিটির নিন্দা করে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে।

উপরন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অধ্যাপকদের তাদের নাম, অন্তর্ভুক্তি এবং “একাডেমিগত স্বাধীনতা বিক্রয়ের জন্যে নয়’ লেখা একটি সাইনবোর্ড হাতে ধরে নিজেদের একটি করে ছবি তোলার আহবান জানিয়ে একটি অনলাইন প্রচারাভিযানের [6] আয়োজন করা হয়েছে।

তা সত্ত্বেও তাইওয়ানের তৃতীয় স্তরের শিক্ষা শিল্পের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নেয়া হলে এই চুক্তি মোটেই বিস্ময়কর কিছু নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলোর চীনা বিনিময়ের শিক্ষার্থী আকর্ষণ করার জন্যে চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার একটা প্রবণতা রয়েছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে যাদের সংখ্যা এমন কিছু কম নয়।

তাইওয়ানের পড়ন্ত জন্মের হারের পটভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনগুলো তাদের স্কুলগুলো চালু রাখার জন্যে যথেষ্ট শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করতে চায়। চুক্তিটি থেকে মনে হয় একাডেমিগত স্বাধীনতাই চীনা ছাত্র আকর্ষণের মাধ্যমে স্কুলগুলো কার্যকর রাখার মূল্য।

বড়ধরনের মুনাফা প্রত্যাশী তাইওয়ানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে অনেক বেশি মূল ভূখন্ডের চীনা শিক্ষার্থী্র মানে হলো অনেক বেশি রাজস্ব, কারণ মূল ভূখণ্ডের চীনা শিক্ষার্থীদেরকে তাইওয়ানীয় শিক্ষার্থীদের টিউশন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হয় [6]

এভাবে একাডেমিগত স্বাধীনতার বিনিময়ে বাণিজ্যের পিছনের যৌক্তিকতা হলো চীনা গোষ্ঠীগুলোর কাছে তাইওয়ানের মিডিয়া কোম্পানিগুলো বিক্রি করে দেয়ারই নামান্তর। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং একাডেমিগত স্বাধীনতা উভয়েরই একটি লিখিত মূল্য রয়েছে।

একই সময়ে যে বাস্তবতার কারণে অন্যান্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী্দের পাশাপাশি চীনা শিক্ষার্থী্রাও তাইওয়ানে পড়তে আসে তারা অন্যান্য স্বাধীনতাপ্রবণ সামাজিক আন্দোলনসহ সূর্যমূখী আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী [7]। এটা চীনকে নতুন ধারণা ও রাজনৈতিক সক্রিয়তার কাছে বেশি বেশি উন্মুক্ত তার তরুণ প্রজন্ম সম্পর্কে উদ্বিগ্ন করছে।

বেইজিংয়ের উদ্বেগের কারণ রয়েছে। আরও সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু তাইওয়ানে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থী তাইওয়ানের এলজিবিটি (লেসবিয়ান, সমকামী, দ্বিকামী, বহুকামী) আন্দোলনে অংশ নিয়েছে [8] এবং আরো কেউ কেউ চীনা রাষ্ট্রীয় নীতির বিষয়ে সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চুক্তিগুলোকে মূল ভূখন্ডের চীনা শিক্ষার্থীদেরকে স্বাধীনতাপন্থী অনুভূতি থেকে দূরে রাখার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

বেইজিংয়ের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গোপন চুক্তি নিয়ে জন-উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে তারা চীনা বিনিময়ের শিক্ষার্থীদের তাইওয়ানে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া এবং একাডেমিগত স্বাধীনতা রক্ষা নিশ্চিত করবে।

অবশ্য অনেক তাইওয়ানীয়র কাছে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে এমন অস্বস্তিকর অনুভূতিও হচ্ছে।