- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কেন সিঙ্গাপুর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রদর্শনীর নাম পরিবর্তন করেছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি
[1]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গ্যালারিটিকে প্রথমদিকে সায়োনান নামে ডাকা হতো, যেটা জাপানী দখলদারিত্বের সময় ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের নাম ছিল। সিসি ৩.০

নতুন প্রজন্মদেরকে যুদ্ধের বিভীষিকা, বিশেষ করে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জাপানী দখলদারিত্বের সময় হাজার হাজার সিঙ্গাপুরবাসীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা সম্পর্কে  শিক্ষা দেয়ার জন্যে [2] সিঙ্গাপুরের সরকার ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন প্রদর্শনী [3] খুলেছে, প্রাথমিকভাবে  যার নাম হয়েছে “সায়োনান গ্যালারি: যুদ্ধ এবং এর উত্তরাধিকার।”

তবে খোলার একদিন পর সরকার গ্যালারিটির নাম পরিবর্তন করে “জাপানী দখলদারিত্ব পেরিয়ে: যুদ্ধ এবং এর উত্তরাধিকার” রেখেছে।

অনেকেই কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেন যে “সায়োনান-তো” – যার মানে হলো “দক্ষিণের আলো”-  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিঙ্গাপুর দখলকারী সাম্রাজ্যবাদী জাপানী সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা নাম। অনেকে মনে করেন নামটি পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত জাপানী দখলদারিত্বের সময় ভুক্তভোগী হাজার হাজার মানুষের জন্যে অপমানজনক।

গ্যালারিটি পরিচালনাকারী জাতীয় গ্রন্থাগার বোর্ড ব্যাখ্যা করেছে [7] কেন তারা সায়োনান নামটি পছন্দ করেছিল:

গ্যালারির নতুন নামটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের সার্বভৌমত্ব কতটা ঠুনকো  হতে পারে কারণ জাপানী দখলদারিত্বের সময় সিঙ্গাপুর শুধুমাত্র তার স্বাধীনতা নয় তার নাম পর্যন্ত হারিয়েছিল।

কিন্তু লেখক তান ওয়াহ পিয়ো প্রশ্ন করেছেন [8] কেন গ্যালারিটি জাপানের সিঙ্গাপুর আগ্রাসনের বার্ষিকীর দিনে খোলা হলো:

এমনকি জাপানের সিঙ্গাপুর দখলের দিনে সায়োনান গ্যালারি খোলা আরো উদ্ভট। কৌতুকটি পরিপূর্ণ করার জন্যে সিঙ্গাপুর সরকার পাশাপাশি জাদুঘরটি খোলার আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্ব করার জন্যে উন্মাদনার চরমে থাকা জাপানী কট্টর-ডানপন্থীদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে পারতো।

ভারনন চ্যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গ্যালারিতে থিম (মূল বিষয়বস্তু) প্রসারিত [9] করার জন্যে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন:

কেন আমাদের ঐতিহাসিক স্মৃতিতে জাপানীদের আত্মসমর্পণের চিত্রের চেয়ে জাপানীদের কাছে আত্মসমর্পণের চিত্রটি বেশি উজ্জ্বল?

বহুমেরু বিশ্বে চুক্তি এবং মিত্রদের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়ার কী হলো?

যুদ্ধে আমাদের মিত্রদের – মালয় ও বোর্নিও মুক্ত করার জন্যে যৌথভাবে তাদের সম্পদকে একত্রিত করা কমিউনিস্ট, কেএমটি (কুয়োমিনটাং [10]), ব্রিটিশ, অস্ট্রেলীয় এবং আমেরিকানদের – সম্মান প্রদর্শনের কী হলো?

একটি বিশ্বযুদ্ধে হারানো বা ফিরে পাওয়া ভূখণ্ডের স্বীকৃতি – এবং “সিঙ্গাপুরের  পতন” এর সঙ্গে “সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার” সামঞ্জস্য বিধানের কী হলো?

প্রবীণ সাংবাদিক পি এন বালজী লিখেছেন যে বিষয়টি দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে সরকার দেশের বয়স্ক জনগণের মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে [11]:

এটা একটা বিরক্তিকর বাস্তবতাকে ইঙ্গিত করে: যে মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে পরিচালনাকারী মানুষেরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের সংস্পর্শ হারাচ্ছে। সরকার তার নিজের বিপদ তৈরি করার জন্যে বয়স্ক নাগরিকদের ভোট ব্যাংকটিকে অগ্রাহ্য করবে।

অনেক নাগরিকের সমালোচনা  উত্থাপনের কথা শোনার পর যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রী ইয়াকব ইব্রাহিম সায়োনান নাম ব্যবহারের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন [12]। এছাড়াও তিনি ঘোষণা করেছেন যে গ্যালারিটির একটি নতুন নাম দেয়া হবে:

জাপানী দখলদারিত্ব অনুমোদন থেকে অনেক দূরে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের পূর্বপুরুষরা যার মধ্য দিয়ে গিয়েছেন সেটা স্মরণ করা, জাপানী দখলদারিত্বের অভিজ্ঞতালব্ধ সিঙ্গাপুরের প্রজন্মটিকে স্মরণ করা এবং আমাদের সমষ্টিগত প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করা এটা যেন আর ঘটতে না দেওয়া হয়।

এটা কখনোই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না এবং ব্যথা ঘটানোর কারণটির জন্যে আমি দুঃখিত।

আমি যা শুনেছি তা আমি গভীরভাবে ভেবে দেখেছি। আমাদেরকে অবশ্যই জাপানী দখলদারিত্বের সময় মারাত্মকভাবে ভুক্তভোগী এবং যারা তাদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের অনুভূতিকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা করতে হবে

এই ঘোষণার পর সায়োনান নামটি আগেভাগেই জাদুঘরের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে:

প্রধানমন্ত্রী লি শিয়েন লুং নিশ্চিত করেছেন [16] যে গ্যালারিটিকে আর সায়োনান বলা হবে না:

সব ধরনের গোষ্ঠীর অনেক সিঙ্গাপুরবাসী অথবা তাদের পরিবারে এমন সদস্য রয়েছেন যারা জাপানী দখলদারিত্বের সময় ভয়ানক নৃশংসতার ভোগ করেছিলেন।

আমার সহকর্মীরা এবং আমি তাদের এই গভীর অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানাই। সুতরাং আমরা এসব বেদনাদায়ক স্মৃতির সাক্ষ্য দেয়া প্রদর্শনীটির নাম পালটে দিতে পেরেছি।