একজন মানবাধিকার কর্মীকে একটি মালয়েশীয় আদালত দেশটির চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ আইন লংঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং সরকারি অনুমোদন না থাকায় ভিডিও প্রদর্শনীটিও নিষিদ্ধ করেছে।
২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে দেয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ে বলা হয়েছে যে সেন্সরশিপ বোর্ডের অনুমতি ছাড়া তার গ্রুপ “গুলি ছোড়া নিষেধ: শ্রীলংকার বধ্যভূমি” শীর্ষক তথ্যচিত্রটির একটি ব্যক্তিগত প্রদর্শনীর আয়োজন করায় লেনা হেন্ডরির তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
৩ জুলাই, ২০১২ তারিখে ১৫০ জনের উপস্থিতিতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীটি করা হয়েছিল। প্রদর্শনীটি চলাকালীন ৩০জন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলটিতে অভিযান চালিয়ে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। শ্রীলংকার দূতাবাসের কথিত চাপে মালয়েশীয় সরকার তথ্যচিত্রটির প্রদর্শনীটি বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীকালে পুলিশ মালয়েশিয়া-ভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠী পুসাত কোমাস (কমিউনিটি যোগাযোগ কেন্দ্র)-এর একজন কর্মসূচী কর্মকর্তা হেন্ডরির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। ২০১৬ সালে স্থানীয় আদালত লেনা হেন্ডরিকে খালাস দিলেও সরকারি আইনজীবীরা সিদ্ধান্তটিতে আপিল করে।
“গুলি না করা অঞ্চল” ২০০৯ সালের শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধটিকে ধারণ করেছে যাতে ৭০,০০০-এর বেশি বেসামরিক তামিল জনগণ নিহত হয়েছে বলে কথিত। প্রযোজক দাবি করেছেন চলচ্চিত্রটি জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদে প্রতিনিধিদেরকে শ্রীলংকার পরিস্থিতি সম্পর্কে শিক্ষাদানে সাহায্য করেছে।
তথ্যচিত্রটি মালয়েশিয়ায় বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এবং এমনকি দেশের জাতীয় সংসদ ভবনেও দেখানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কেন চলচ্চিত্রটি প্রদর্শণের জন্যে হেন্ডরিকে আলাদা করে ফেললো সেটা রহস্যজনক।
অনেক সক্রিয় কর্মী মনে করেন বিচারকের আদালতের আদেশটি প্রমাণ করে দেয় যে আইনটি সেন্সরশিপের একটি হাতিয়ার যা বাক-স্বাধীনতাকে অবনমন করে। তারা এই “বস্তাপচা” এবং “নিপীড়নমূলক” আইনটি বাতিলের জন্যে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। সমাজে এই সিদ্ধান্তটির একটি শীতল প্রভাব পড়বে বলে তারা আবারও সতর্ক করেছেন। কারণ এটি রাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করা অন্যান্য ভিডিও এবং প্রামান্যচিত্রগুলোর জন্যে দমনমূলক অভিযানের একটি নজির হয়ে থাকবে।
গত সপ্তাহে আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হেন্ডরির বন্ধু এবং সমর্থকরা জনসমর্থন যোগাড় করার জন্যে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানান।
নিচে তথ্যচিত্রটির প্রযোজকের দেয়া একটি চিঠির একটি উদ্ধৃতাংশ রয়েছে। এতে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষকে সম্বোধন করা হয়েছে:
বাস্তবতা হলো আইনটি রাজনৈতিক নজরদারীর জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং লেনাকে দোষী সাব্যস্ত করার পিছনে এই কারণটিই রয়েছে বলে প্রতিভাত হচ্ছে।
ইতিহাস চলচ্চিত্রটির সত্যতা প্রতিপন্ন করেছে। এখনো এটিকে আলোর মুখ দেখানো অপরাধ সংঘটনকারীরা মুক্তভাবে হেঁটে বেড়াচ্ছে, অথচ এটা দেখানোর জন্যে লেনাকে জেল খাটতে হয়েছে। তাকে দোষী সাব্যস্ত করাটা হলো বাক-স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা যা মালয়েশিয়ার জন্যে লজ্জা বয়ে আনছে আর তাই অবিলম্বে এটা পরিত্যাগ করা উচিৎ।
মানবাধিকার প্রচারকারী পুসাত কোমাস পুলিশের উদ্দেশ্যকে প্রশ্ন করেছে:
আমাদের এখনো ধাঁধা লাগছে একই ইভেন্টে লেনার সহকর্মীদের উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বেও পুলিশ কেন তাকে একা আলাদা করে একটি অপরাধ সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল। এই পরস্পরবিরোধী দ্বৈতমান কর্মটি দোষী সাব্যস্তকরণের অসঙ্গতি এবং লেনার গ্রেপ্তার ও পরবর্তীতে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শণের জন্যে শাস্তি প্রদানের হাস্যকর প্রকৃতিটিকে প্রতিফলিত করে।
স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্র আদালতের রায়টিকে বাক-স্বাধীনতার ওপর হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছে:
মালয়েশীয় সরকারের সুশীল সমাজকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা মানবাধিকার ও রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের উপর আলোচনার আশু দাবি রাখে। নজরদারী (সেন্সরশিপ) আইন – সাংবাদিকতা অথবা সৃজনশীল বিষয়বস্তু যাকেই প্রভাবিত করার জন্যে হোক – ইচ্ছেমতো প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয় এবং ঐতিহাসিকভাবে সমালোচনামূলক বিষয়বস্তুগুলোকে নীরব করে দেয়ার জন্যেই অপব্যবহৃত হয়।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রেস জোট আইনটি বাতিল করার দাবিতে মালয়েশীয় এ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে যোগদান করেছে:
বিশেষ করে চলচ্চিত্র নজরদারী আইনটির ৬ ধারা – একটি ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত যে কোন ব্যক্তিকে কোনরকম সেন্সরশিপের মধ্য দিয়ে না গিয়ে সীমাহীন সংখ্যক চলচ্চিত্রে প্রবেশ করতে দেয়া – আজকের যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রেক্ষাপটে হাস্যকরভাবে অচল।
হেন্ডরির সমর্থনকারীরা মামলাটির বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্যে #লেনাকেরক্ষাকর হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করছেন।
Screening, sharing, watching and making films is not a crime. #defendlena #nofirezone
— KOMAS (@pusatkomas) February 27, 2017
প্রদর্শন, ভাগাভাগি করা, দেখা এবং চলচ্চিত্র তৈরি কোন অপরাধ নয়। #লেনাকেরক্ষাকর
I hope more and more people especially of the film community do their part to #DefendLena and not just stay silent about it
— fitri (@shufitri) February 27, 2017
আমি আশা করি বিশেষ করে চলচ্চিত্র সম্প্রদায়ের আরো অনেক বেশি লোক তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং শুধু এই বিষয়ে নীরব থাকবে না। #লেনাকেরক্ষাকর
We concerned by #Malaysia conviction of Lena Hendry 4 screening film abt #SriLanka war. Chilling effect on freedom expression @davidakaye pic.twitter.com/hVwSPPKxxJ
— UN Human Rights Asia (@OHCHRAsia) February 22, 2017
আমরা #শ্রীলংকা যুদ্ধবিষয়ক সিনেমা দেখানোর জন্যে লেনা হেন্ডরিকে দোষী সাব্যস্ত করায় উদ্বিগ্ন। #মালয়েশিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর শীতল প্রভাব