- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

স্থানীয় ভাষা/ বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক: আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্যে মোবাইল প্রযুক্তি পরিকল্পনা

বিষয়বস্তু: আয়ারল্যান্ড, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, ভাষা, রাইজিং ভয়েসেস

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আয়ারল্যান্ডের গ্রামীণ কাউন্টি গলওয়ে-তে ডেরেক লাকাফের তোলা ছবি

এই পোস্টের একটি সংস্করণ [1]  এর আগে একটি মাধ্যমে আর১২-তে প্রকাশিত হয়েছে।

গত গ্রীষ্মে, একজন আইরিশ নারী কায়োইমহে নি চাথাইল তার মোবাইল কোম্পানিকে একটি টুইট পাঠিয়েছিলেন [2] তাদেরকে জানানোর জন্যে যে তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহারে তার কিছু সমস্যা হচ্ছে। মাসের পর মাস ধরে সাইটটি তার নামে স্বরাঘাতবিশিষ্ট (অ্যাক্সেন্টেড) একটি আইরিশ অক্ষর (í) থাকার কারণে তার নাম  “অকার্যকর” হিসেবে প্রত্যাখ্যান করছে। মোবাইল কোম্পানিটির প্রতিক্রিয়া ছিল কায়োইমহে শুধু তার নামের “ইংরেজি সংস্করণ”টি ব্যবহার করতে পারেন কিনা। এই খুব প্রকাশ্য বিনিময়টি আইরিশ টুইটারে একটি ছোটখাট হৈচৈ বাঁধিয়ে দেয়: একটি আইরিশ কোম্পানি আয়ারল্যান্ডের আইরিশ ভাষা অনলাইনে ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করছে।  কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কোম্পানিটি আসলেই তার সাইটের আপডেট করেছিল যাতে এটা কিছু আইরিশ নাম প্রত্যাখ্যান না করে। কিন্তু এই ছোট ঘটনাটি ডিজিটাল মিডিয়াতে ভাব আদান-প্রদানের সময় আইরিশ ভাষীদের প্রায়শই মুখোমুখি হওয়া ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ধরনটিকে তুলে ধরে।

আইরিশ [3] (গেইলজ) আয়ারল্যান্ডের প্রথম সরকারি ভাষা, উত্তর আয়ারল্যান্ডের সংখ্যালঘুদের স্বীকৃত একটি ভাষা সম্মানিত এর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সরকারি ভাষা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে সর্বত্র এই ভাষায় নির্দেশনা দেয়া বাধ্যতামূলক। ভাষাটির একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে, এবং রেডিও, টেলিভিশন এবং ইন্টারনেট জুড়ে এটি ব্যবহার করা হয়। আয়ারল্যান্ডের বাইরের দ্বিতীয় ভাষা শিক্ষার্থীরা [4] এ ভাষা অধ্যয়নের আনুষ্ঠানিক সুযোগ পেতে পারেন নোটর ডেম [5] বা সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে [6], অথবা আরেকটু অনানুষ্ঠানিকভাবে মিট-আপ [7]-এ বা বিনামূল্যের অ্যাপ্লিকেশন ডুওলিঙ্গো [8] ব্যবহার করে। এই সমর্থন ও আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও আইরিশকে “স্পষ্টভাবেই বিপন্ন [9]”  হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  বর্তমানের একটি হিসেব অনুসারে ৪৬ লক্ষ আইরিশ জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিদিন এই ভাষা ব্যবহার করেন মাত্র ৪০ থেকে ৭০ হাজার জন। গেইলটাখট নামের বিশেষভাবে মর্যাদাপ্রাপ্ত গ্রামীণ অঞ্চলগুলো [10] ছাড়া স্কুলের বাইরে খুব অল্প কয়েকটি এলাকায় সম্প্রদায়ের কথ্য ভাষা হিসেবে আইরিশ ব্যবহৃত হয়।

শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে প্রতিদিন আইরিশ ভাষায় কথা বলা জনগণের শতকরা হার, ২০১১ সালের শুমারী। স্কেট-টায়ার-এর মাধ্যমে সিসি বাই-এসএ ৩.০ উইকিমিডিয়া কমন্স

একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দিয়েছে যে এক বা দুই দশকের মধ্যে সম্প্রদায়ের ভাষা হিসেবে আইরিশের মৃত্যু হতে পারে [11] । কোন সক্রিয় হস্তক্ষেপ করা না হলে আইরিশ আগামী কয়েক বছর বা দশকের মধ্যেই অদৃশ্য হতে যাওয়া আরো হাজারটি মানব ভাষার দলভুক্ত হতে পারে। ইংরেজি, স্পেনীয়, অথবা চীনা স্থানীয় এবং আদিবাসী ভাষাগুলোকে স্থানচ্যুত করায় কম ভাষাগত বৈচিত্র্যের বিশ্বব্যাপী প্রবণতা ভাষার কারিগরী বিভাজন [12] এবং তাদের বিপন্নতার স্তর [13]কে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন করেছে। মানব ইতিহাস জুড়ে ভাষাগুলোর আসা আসা-যাওয়া অব্যহত থাকলেও বিগত শতাব্দীতে কম কথা বলা মানুষের ভাষাগুলোর উপর উপনিবেশবাদ, আত্মীকরণ কর্মসূচী [14] এবং বিশ্বায়ন বিশাল চাপ সৃষ্টি করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রে ১৫০টির বেশি আদিবাসী ভাষা [15]য় এখনো জীবন্ত কথা বলার লোকজন থাকলেও সাংস্কৃতিক অবদমন এসব ভাষাকে খুবই নিরাপত্তাহীন অবস্থানে নিয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২,০০০ ল্যাকোটা ভাষী [16]  থাকলেও প্রথম ভাষা হিসেবে ল্যাকোটা’তে কথা বলাদের বেশিরভাগের বয়স ৬০ বা ৭০-এর কোটায়। দাদা-নানা আর পিতা-মাতার মাধ্যমে শিশুদের কাছে একটি ভাষার আন্ত:প্রজন্ম সম্প্রচার হলো ভাষার অস্তিত্ব রক্ষার মৌল প্রক্রিয়া। আর তাই ভাষা সংরক্ষণ  এবং পুনরুজ্জীবিতকরণ হলো এক অর্থে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দেয়া।

ব্যবহারকারীদের কেন তাদের নিজেদের ভাষা ব্যবহারের এবং ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে তার অনেক কারণ রয়েছে। একটি ভাষা একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতি এবং দৃষ্টিকোণের একটি অবিচ্ছিন্ন সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করে, এবং মানুষ এবং বিশ্ব সম্পর্কে অনন্য তথ্যের সংকেত তৈরি করে। উপনিবেশবাদকে প্রতিরোধ করা এবং সেটা থেকে বেরিয়ে আসা জনগণের জন্যে ঐতিহ্যগত ভাষা দার্শনিক সুবিধা তৈরি করে। আমি এবং আমার সহকর্মী উইলিয়াম জে মনার [17]  সম্প্রতি মোবাইল মিডিয়া জুড়ে একটি সংখ্যালঘু ভাষা – আইরিশ – ব্যবহার পরীক্ষা করার একটি গবেষণা প্রকল্প শুরু করেছি। আমরা সুপারিশ করছি যে আইরিশ অভিজ্ঞতা থেকে নেয়া পাঠগুলো অন্যান্য হাজারটা মানুষের বিপন্ন ভাষায় প্রয়োগ করা যেতে পারে এবং ভাষা পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়ায় ভাবের আদান-প্রদান পরিকল্পনাকারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে হবে।

সংখ্যালঘুদের ভাষা কম্পিউটারজাতকরণ

যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যম সংখ্যালঘু ভাষা সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন প্রচেষ্টার জন্যে একাধারে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ। উপকারিতার মধ্যে ব্যাপকভাবে সাংস্কৃতিক এবং সংবাদ মাধ্যম ছাড়াও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ ক্ষমতা; এবং ভাষাটির মর্যাদা উন্নয়ন ও নিচের প্রজন্মের কাছে এর ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ। এই শেষোক্ত দিকটি ক্রমেই আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বিশ্ব যুব সংস্কৃতি উদাহরণস্বরূপ স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক মেসেঞ্জার, এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর মতো মোবাইল মেসেজিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সবসময় সংযুক্ত যোগাযোগ প্রেক্ষিতের দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে।

ডিজিটাল যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলো কাছের বা দূরের যাই হোক না কেন পরস্পরের সংস্পর্শে থাকতে চাওয়া ভাষা সম্প্রদায়ের সদস্যদের সম্ভাবনাময়ভাবে সক্রিয় করে। তবে যোগাযোগের ভ্রাম্যমাণ যন্ত্রপাতির কাছে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং ইনপুট প্রচলিত কীবোর্ডে টাইপ করার পরিবর্তে কথা চিনতে পারা এবং ইশারায় টাইপ করার মতো উন্নততর প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। মৌলিক কি-বোর্ড ইনপুটকে মেনে নেয়া কম্পিউটারের একটি তুচ্ছ ব্যবহার হলেও বানান সংশোধন বা বক্তৃতা প্রক্রিয়াকরণের মতো উন্নত কর্মকাণ্ড সময় এবং সম্পদের বিচারে বেশি দামী। কবি এবং সঙ্গীতশিল্পী সিও [18]-এর মতো কিছু কিছু পর্যবেক্ষক তার নিজের আইসল্যান্ডীয় (৩,৩০,০০০ ভাষাভাষী সমৃদ্ধ) ভাষা সম্পর্কে সংকেত বাজাতে শুরু করেছেন:

দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হওয়া ভাষার জন্যে আরো বৃহত্তর এবং গুরুতর বিষয়। প্রযুক্তি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এবং বাক-নিয়ন্ত্রিত অ্যাপ্লিকেশনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং এগুলো তৈরি করা কোম্পানিগুলো মুষ্টিমেয় মানুষের কথা বলা ভাষা সংরক্ষণকে তাদের দায়িত্ব হিসেবে দেখতে পাচ্ছে না। দিন আসছে যখন আমাদেরকে রেফ্রিজারেটরের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে (আমি বিশ্বাস করি সেই ভবিষ্যত দূ্রে নয়), আইসল্যান্ডীয় ভাষাও খুব দ্রুত পশ্চাদপসরণ করবে।

আর এমনকি আইসল্যান্ডীয় (ভাষা) কারিগরী দিক থেকে বিপন্ন নয়।

সংখ্যালঘু ভাষা কম্পিউটারজাতকরণ ভাষার সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবিতকরণের জন্যে কয়েকটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। এই সুযোগগুলোর একট হলো যেমন আইকুমা’র মতো মোবাইল অ্যাপস [19] ব্যবহার করে সহজ এবং কম বাধায় ভাষার নথিভুক্তকরণ (ডকুমেন্টেশন)। এগুলোর মধ্যে নতুন লেখা (টেক্সট), অডিও, ভিডিও, এবং কম্পিউটার সাহায্যপুষ্ট শেখার সফটওয়্যার উৎপাদন এবং বিতরণ করা সহজ হওয়ার কারণে শিক্ষাবিজ্ঞান এবং শেখার জন্যে নতুন নতুন সুযোগ অন্তর্ভুক্ত। আমার প্রিয় উদাহরণগুলোর একটি হলো আলাস্কার আদিবাসী গল্পকথকদের ঘনিষ্ট সহযোগিতা [20] নিয়ে তৈরি  কখনো একাকী নয় [21] খেলাটি।

আরেকটি মজার উদাহরণ হলো বেরেনস্টেটেইন ভালু্কের ল্যাকোটা ভাষায় কথাবলা সংস্করণ [22] যা এখন ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত, সফটওয়্যার স্থানীয়করণ বা অনুবাদ করা – বিশেষ করে মুক্ত-উৎস সফটওয়্যার – সংখ্যালঘু ভাষাগুলির জন্যে বিশেষ সম্ভাবনাময়। কেভিন সেন্ট লুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী কেভিন স্ক্যানেল [23]  তালিকা করেছেন অনেক সফটওয়্যার অ্যাপ্লিকেশনের [24] – ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন মজিলা, ফায়ারফক্স এবং লিবরঅফিস আর জিমেইল ও টুইটার মতো ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনের – যেগুলো এখন আইরিশে পাওয়া যায়।  তার এবং অন্যদের অবদানকে ধন্যবাদ।

বিশ্বকে খাচ্ছে মোবাইল

মোবাইলের দিকে বিশ্বব্যাপী একটি বড় আকারের স্থানান্তর ঘটেছে এবং এটা স্পষ্ট মোবাইল যন্ত্রপাতি ব্যক্তিগত কম্পিউটারের চেয়ে বিভিন্ন উপায়ে একটি ভাষার ব্যবহারকে আকৃতি দিচ্ছে। প্রথম প্রজন্মের মোবাইল টেক্সট প্ল্যাটফর্মটি ছিল ছোট পর্দা এবং কিছু সংখ্যাগত ইনপুট প্যাডসম্পন্ন। আদর্শমান  সংখ্যাগত কি-প্যাডে মাত্র ১২টি বোতাম থাকায় প্রাপ্ত বিকল্পগুলোর চক্রের ভিত্তিতে একাধিকবার বোতাম চেপে বেশিরভাগ অক্ষর প্রবেশ করাতে হতো। উদাহরণস্বরূপ, একটি ব্যবহারকারীকে একটি Á অক্ষর লেখার জন্যে “2” বোতামটি ছয় বার টিপতে হতো যেটা চক্রাকারে A, B, C, 2, এবং Ä এর পর হাজির হতো। পূর্বানুমানযুক্ত টেক্সট হলো এধরনের কিছু সমস্যা দূর করার জন্যে পরিকল্পিত একটি ইনপুট প্রযুক্তি যাতে সফটওয়্যারকে যে শব্দটি ব্যবহারকারী লিখতে চায় সেটি কম সংখ্যক বোতামের চাপের মাধ্যমে “পূর্বানুমান” করতে দেয়া হয়। পূর্বানুমানযুক্ত টেক্সট ইনপুটের গতি প্রায় ৩০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয় এবং বৈশ্বিক ভাষার জন্যে ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়, কিন্তু ছোট বাণিজ্যিক বাজারের সঙ্গে সংখ্যালঘু ভাষাগুলোর জন্যে সেই সমর্থন অবহেলিত পড়ে থাকে।

ফিচার ফোনের শিওর বিটস বোতাম চাপা।

অ্যাপল আইফোন এবং আইপ্যাড-এর মতো পর্দা-ছোঁয়া (টাচস্ক্রিন) ডিভাইস হলো দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল প্ল্যাটফর্ম। এধরনের ডিভাইসে টেক্সট লেখার প্রয়োজনের সময় সাধারণত পর্দায় প্রদর্শিত একটি “নরম কি-বোর্ড” ব্যবহার করা হয়। একটি সংখ্যালঘু ভাষার জন্যে এর স্ক্রিপ্টের সঙ্গে খুব মিল আছে এমন একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা থেকে টেক্সটের মৌলিক ইনপুট মনে হয় কোন সমস্যা নয়। উদাহরণস্বরূপ, আধুনিক আইরিশ [25] পাঁচটি স্বরঘোষিত স্বরবর্ণের অক্ষরসহ (সিনেইধ ফাদা-) লাতিন বর্ণমালা্র বেশিরভাগ অক্ষর ইংরেজি কি-বোর্ডে শুধু একটি অতিরিক্ত টোকা দিয়ে ব্যবহার করা যায়। একবারে শুধু একটা  অক্ষর টাইপ করা পর্দা-ছোঁয়া (টাচস্ক্রিন) ডিভাইস ব্যবহারকারীদের জন্যে সম্ভবত: সবচেয়ে অজানা একটি ধারণা। বৈশ্বিক ভাষার ব্যবহারকারীদেরকে সফ্টওয়্যার কি-বোর্ড অঙ্গভঙ্গি টাইপিং, বানান পরীক্ষণ, এবং স্বয়ংক্রিয় সংশোধনের মতো উন্নত বৈশিষ্ট্যের সুবিধা দেয়। এসব ধরনের ইন্টারফেস প্রযুক্তি মোবাইল ডিভাইসের সুবিধা, নির্ভুলতা এবং টেক্সট ইনপুটের গতি ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেয়ার ফলে এমনকি দক্ষ সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীদের বিপরীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা দিকে হয়তো আরো একটি পক্ষপাতের প্রবর্তন ঘটেছে।

মোবাইলে কিভাবে আইরিশ ব্যবহৃত হয়?

সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীরা মোবাইল প্রযুক্তির সঙ্গে কিভাবে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সেটা ভাল করে জানার জন্যে আমরা আয়ারল্যান্ডের আইরিশে কথা বলা এবং আইরিশ শিক্ষারত তরুণ-তরুণীদের  একটি অনলাইন জরিপ তৈরি এবং পরিচালনা করেছি। জরিপটি নেদারল্যান্ডের একটি সংখ্যালঘু কথ্যভাষা ফ্রিজিয়ানে কথাবলা কিশোর-কিশোরীদের উপর একটি পূর্ববর্তী গবেষণা [26] থেকে উদ্ভূত। যেমন আশা করা হয়েছিল, অংশগ্রহণকারীরা সামাজিক মিডিয়ার – বিশেষ করে মোবাইল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনের – খুব বেশি ব্যবহারকারী। তারা নানা ধরনের ভাষা দক্ষতার কথা বলেছিল: আইরিশ বুঝতে পারা মোটামুটি উচ্চ, কথাবলার দক্ষতা আরেকটু কম, আর লেখার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল।

এসব ব্যবহারকারীদের সামাজিক ও মোবাইল মিডিয়াতে আইরিশ ব্যবহার, তাদের মুখোমুখি হওয়া নানা ধরনের বাঁধা এবং মুক্ত প্রশ্নগুলোর জবাবে হাজির হওয়া তিনটি বিস্তৃত থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে অনেক কিছু বলার আছে। প্রথম থিমটি হলো ইংরেজির তুলনায় আইরিশের শ্রোতা অনেক ক্ষুদ্র। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগেরই আইরিশ বলা অনেক বন্ধু ছিল কিন্তু অনেকেই ডিজিটাল মিডিয়াতে সামাজিকভাবে ভাষাটি ব্যবহার করতে দ্বিধা বোধ করে। বাস্তবে অনেকে জানিয়েছে যে তাদের ফিডে আইরিশ দেখতে কিছুটা “অস্বভাবী” বা “অস্বাভাবিক” লাগবে। কোনো ব্যবহারকারীই তাদের শ্রোতাদের উদাহরণস্বরূপ ফেসবুক তালিকা ব্যবহার করে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা্র কথা বলেনি।

আর দ্বিতীয় সংশ্লিষ্ট থিমটি হলো ব্যবহারকারীরা তাদের নেটওয়ার্ককে ভাষাগত বহুত্ববাদী দৃষ্টিকোন থেকে দেখে এবং তারা উদ্বিগ্ন যে আইরিশে কিছু পোস্ট করার মানে যারা ঐ ভাষাটিতে কথা বলে না তাদের অগ্রাহ্য বা আঘাত করা হতে পারে। গবেষণার এই আবিষ্কারটি অনেকের কাছে আপাত বিরোধী, কারণ অংশগ্রহণকারীরা সাধারণভাবে এটাও মনে করে যে ভাষা তাদের সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তৃতীয় থিমটি হলো যে  মোবাইল মিডিয়া প্রেক্ষাপট নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে। স্বয়ংক্রিয়-সংশোধক (অটোকারেক্ট) সংযুক্ত উন্নতমানের অঙ্গভঙ্গি টাইপিং ব্যবহার না করে একটি মোবাইল ডিভাইসে লিখিত আইরিশ উৎপাদন করতে গিয়ে এমনকি কথা বলায় দক্ষ ব্যবহারকারীরাও অতিরিক্ত কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তারা অনেক পরিশ্রম করে একটা একটা অক্ষর ইনপুট করতে বাধ্য হয়। অনেক ক্ষেত্রে কি-বোর্ডটি তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যেমন ইংরেজি স্বয়ংক্রিয়-সংশোধক সব আইরিশকে বানান ভুল হিসেবে চিহ্নিত করে, অথবা তাদের আইরিশ শব্দগুলোকে ইংরেজিতে “সংশোধন” করে ফেলে। একটি মোবাইল কি-বোর্ডে “সঠিক” আইরিশ উৎপাদন করার চ্যালেঞ্জ অনেক সম্ভাব্য আইরিশ ব্যবহারকারী যারা পুরোপুরি চালু নয় তাদেরকে বিরক্ত করে ফেলে। কয়েকজন উল্লেখ করেছে যে অনলাইনে “ভুল” আইরিশ লেখার জন্যে “ব্যাকরণ উন্নাসিক” বা পরামর্শ বিতরণকারীরা প্রকাশ্যে তাদেরকে সমালোচনা করেছে বা দুয়ো দিয়েছে।

প্রাপ্ত এসব তথ্য কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ের কথা বলে যা সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্যে পরিকল্পনা করার সময় ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাকারীরা হয়তো বিবেচনা করতে পারেন।

প্রযুক্তিগত বিষয়গুলি

আমাদের উত্তরদাতাদের অধিকাংশ বর্তমান মোবাইল ইন্টারফেসগুলোকে  আইরিশ ব্যবহার প্রতিরোধী হিসেবে পেয়েছে। সেটা উচ্চারণ কৃত অক্ষরে প্রবেশ করা হোক অথবা অন্য ভাষায় স্বয়ংক্রিয়-সংশোধন নিয়ে যুদ্ধ করা হোক, ইন্টারফেসটি নিজেই ব্যবহারকারীদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কিছু ছোট ভাষা সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবহারকারীদের অঙ্গভঙ্গি টাইপিং এবং স্বয়ংক্রিয়-সংশোধনের মতো সহকারী প্রযুক্তি নিষ্ক্রিয় করে কি-বোর্ড লেআউট পরিবর্তন করে একই সময়ে একটি অক্ষর থেকে শব্দ টাইপ করতে কোন সমস্যা হয় না। তবে, একটি সংখ্যালঘু ভাষার উদাহরণস্বরূপ আইরিশের মতো প্রেক্ষাপটে ব্যবহারকারীরা নেটওয়ার্কের মধ্যে  সবাইকে ইংরেজিতে দক্ষ ভেবে নেয়ার বৈধ অনুমান করে নিতে হয় এবং এভাবে ভাষা ও প্রযুক্তিগত ন্যুনতম প্রতিরোধের পথ বেঁছে নিতে হয়। আমাদের নমুনার (স্যাম্পলের) স্বচ্ছন্দ আইরিশ ব্যবহারকারীদের অনেকে তাদের আইরিশ ভাষী বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এমনকি সরাসরি  এবং ফোনে আইরিশে কথা বলতে অভ্যস্ত হলেও বার্তাগুলো ইংরেজিতে পাঠিয়ে থাকেন।

আমরা আরও জেনেছি যে সামাজিক মিডিয়ার জনপ্রিয়তার উপকরণগুলো (মেট্রিকগুলো) আইরিশ ব্যবহারকারীদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষা ব্যবহারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এধরনের উপকরণগুলো সরলীকৃত ধরনের হলেও সুস্পষ্টভাবে সব পোস্টে বা আপডেটে: “পছন্দ সংখ্যা” বা “মন্তব্য সংখ্যা” বা “পুন:টুইট” এসব প্রদর্শন করা হয়। মনোযোগ আকর্ষণের অর্থনীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে তৎপর থাকা সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়ার মতো – একটা সংখ্যালঘু ভাষার ব্যবহার – এড়িয়ে যাবে।

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিত

দ্বিতীয়ত: সব সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীরা একটি জটিল সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বসবাস এবং যোগাযোগ করে। আইরিশে ঐতিহ্য এবং গর্বের ধারনা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা স্কুলে ভাষা শেখার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে উদ্বেগ পর্যন্ত আইরিশ মানুষের জন্যে একদল গভীর এবং জটিল অনুষঙ্গ রয়েছে। তার ওপর, আইরিশ ব্যবহারকারীদের তাদের সমগ্র স্থানীয় নেটওয়ার্ক ইংরেজি বুঝবে আর বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের সবাই বাদে শুধু আইরিশ নেটওয়ার্কের কেউ কেউ আইরিশ বুঝবে সেটা অনুমান করে নেয়াটাই নিরাপদ। এটা আইরিশের টেকসই ব্যবহারকে জটিল করে তুলছে বিশেষ করে কনিষ্ঠ প্রজন্মগুলোর জন্যে। ভাষার অনিয়মিত ও সৃজনশীল ব্যবহারকে  অনুপ্রেরণা দেয়া যদি লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে হয়তো ভাষার নতুন নিয়ম উন্নীত করা উদাহরণস্বরূপ দ্বিভাষা ব্যবহারের সামাজিক অস্পষ্টতা দূর করে একভাষী প্ল্যাটফর্মের পরিকল্পনা করার একটা মূল্য রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষার সঙ্গে অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষাগুলোর সম্পর্ক হবে ভিন্নতর যা অন্য ধরনের পরিকল্পণার দাবি রাখে।

ভাষাতাত্ত্বিক প্রয়োজনীয়তা

অবশেষে, ভাষাগুলোর বানানপদ্ধতি, রূপমূলতত্ত্ব এবং গণনামূলক উপাদান সম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট এবং স্বকীয় ভাষাতাত্ত্বিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার দিক থেকে সংখ্যালঘু একটি ভাষা হিসেবে আইরিশ অনেকটাই অনন্য। উদাহরণস্বরূপ, এরই মধ্যে মোবাইল ডিভাইসের জন্যে বিভিন্ন সস্তা বা বিনামূল্যের কার্যকরী আইরিশ কি-বোর্ড ইনপুট প্রযুক্তি পাওয়া গেলেও আমাদের জরিপ অনুসারে সম্ভাব্য ব্যবহারকারী-ভিত্তিগুলোর মধ্যে এসবের গ্রহণযোগ্যতা ধীর গতিসম্পন্ন মনে হচ্ছে। আমাদের অংশগ্রহণকারীদের কেউ একটি বিনামূল্যের উচ্চমানের আইরিশ পূর্বানুমাণ এবং স্বয়ংক্রিয়-সংশোধনের কার্যকারিতা সম্পন্ন এবং সহজ ভাষা বদলকারী আইওএস (আইফোন অপারেটিং সিস্টেম) এবং অ্যান্ড্রয়েড কি-বোর্ড অ্যাডাপ্টএক্সটি (Adaptxt) কি-বোর্ড [27] এর কথা উল্লেখ করেনি। মাত্র কয়েকজন ব্যবহারকারী তারা ভিন্ন একটি ডাউনলোডের আইরিশের পূর্ণ সমর্থনযুক্ত সোয়াইপ (Swype) কি-বোর্ড ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। আইরিশ গণনীয় ভাষাতত্ত্ব গবেষণায় ডাবলিনে সহযোগিতামূলক অ্যাডাপ্ট (ADAPT) কেন্দ্র [28] -এর মতো বিভিন্ন সক্রিয় কেন্দ্র রয়েছে। কেভিন স্ক্যানেল মনে করেন প্রযুক্তিগত সম্পদ বা সমর্থনের অপ্রাচুর্যতা আইরিশের জন্যে চ্যালেঞ্জ নয়, বরং সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের কাছে আইরিশ ভাষা সফ্টওয়্যার ও ইন্টারফেসগুলোর বাজার তৈরি করা এবং অপারেটিং সিস্টেম ডেভেলপার ও  ডিভাইস নির্মাতাদেরকে তাদের পণ্যের মধ্যে আইরিশ ভাষা প্রযুক্তি সমন্বয় করতে রাজি করানোর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদেরকে এসব সম্পদের সঙ্গে সংযুক্ত করাটাই আসল কাজ। কিছু কিছু ভাষার ক্ষেত্রে এটা হয়তো বাস্তব হয়ে যেতে পারে তার  ইঙ্গিত রয়েছে – গুগলের জিবোর্ড কি-বোর্ড অ্যাপের সর্বশেষ সংস্করণ [29] আইরিশে আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড সমর্থন করে এবং একইসঙ্গে একাধিক ভাষায় স্বয়ংক্রিয়-সংশোধক ও পূর্বানুমান ব্যবহার করা যায়।

এডিএপিটি সেন্টারের গবেষক তেরেসা লিন, আইরিশ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর তেএদেইক্স (TEDx)-এ একটি ক্ষুদ্র ভাষণ দিচ্ছেন।

ভাষার জীবনীশক্তির জন্যে জনগণ যেখানে পারস্পরিক বিনিময়ে সক্রিয় অথবা হয়তো কথোপকথনে ব্যস্ত এমন একটি স্থানে এটির অনুশীলন প্রয়োজন। ফেসবুক এবং গুগলের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তি দৈত্যরা যেভাবে উদাহরণস্বরূপ, আগ্রাসীভাবে বিশ্বের উন্নয়নশীল অঞ্চলের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে [30] তাতে ভাষাতাত্ত্বিক আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং ঔপনিবেশিক প্রতিরোধের প্রশ্ন ক্রমেই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিপন্ন ভাষাগুলোর দৈনন্দিন ব্যবহারে উৎসাহিত করা – অফলাইন এবং অনলাইন উভয় প্রেক্ষিতে – সংখ্যালঘু ভাষা নিয়ে আন্দোলনকারী, পরিকল্পণাকারী ও উন্নয়নকারীদের এসব স্থানে অংশগ্রহণ ও জড়িত থাকার একটি জোর ধাক্কা দাবি করে।

যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্রমাগত আরো ঘনিষ্ঠ এবং উন্নয়নশীল সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের দিকে ধাবমান হতে এবং এধরনের প্রেক্ষিতগুলোতে সামাজিক মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোর যোগাযোগ সুবিধা দিতে থাকায় স্থানীয় ভাষা এবং বৈশ্বিক প্রযুক্তির মধ্যেকার উত্তেজনা স্থানীয় সম্প্রদায় এবং ভাষা পরিকল্পণাকারীদের ক্রমাগতভাবে হয়রান করে ফেলছে। আইরিশ একটি অনন্য সংখ্যালঘু ভাষা হলেও এর অনুসন্ধান কিভাবে মোবাইল ইন্টারফেসগুলোর মাধ্যমে বৈশ্বিক এবং স্থানীয় চর্চাগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করা হচ্ছে সে বিষয়ে কিছু অর্ন্তদৃষ্টি প্রদান করেছে।

আরো তথ্যের জন্যে অনুগ্রহ করে বিনা সংকোচে নিবন্ধটি পড়ে দেখুন: Lackaff, D. & Moner, W. J. (2016). Local languages, global networks: Mobile design for minority language users [31] (স্থানীয় ভাষা, বৈশ্বিক নেটওয়ার্কঃ সংখ্যালঘু ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্যে মোবাইল ডিজাইন). Proceedings of the 34th Annual International Conference on the Design of Communication (SIGDOC ’16). doi: 10.1145/2987592.2987612