- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মার্কাস গার্ভি এবং প্রেসিডেন্ট ওবামার হারানো সুযোগ

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান, জামাইকা, যুক্তরাষ্ট্র, আইন, ইতিহাস, জাতি-বর্ণ, নাগরিক মাধ্যম, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)
[1]

১৯২৪ সালে মার্কাস গার্ভি। ছবি: কংগ্রেস লাইব্রেরির মাধ্যমে পাবলিক ডোমেইনে

জিওফ্রে ফিল্পের গল্প

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার মেয়াদকালে ২১২টি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা জারি এবং ১৭১৫ জনের শাস্তি কমালেও জ্যামাইকার জাতীয় বীর কম সম্মানিত মার্কাস মোর্সায়া গার্ভি (১৮৮৭-১৯৪০)-এর জন্যে একটি রাষ্ট্রপতির ক্ষমাতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি যেমন  জন কনিয়ার্স, জন লুইস এবং চার্লস র‌্যাঙ্গলসহ কংগ্রেসীয় কৃষ্ণাঙ্গ ককাস (রাজনৈতিক সমিতি) [2] ছাড়াও জ্যামাইকার সাবেক এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বৃন্দ [3], গার্ভির ছেলে ড. জুলিয়াস গার্ভি [4] এবং সারাবিশ্বের হাজার হাজার এক্টিভিস্টদের [5] আবেদন সত্ত্বেও এটা হয়েছে।

১৯২৩ সালে মেইল ​​জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা মার্কাস গার্ভি ১৯২৩ সালে প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ সাজা কমিয়ে আনার আগেই আটলান্টা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে আড়াই বছর সাজা ভোগ করেন। প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্বাচন আশা জাগিয়েছিল যে গার্ভির নিজের শুরু করা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা লাভের প্রচেষ্টাগুলো শেষ পর্যন্ত গার্ভির সুনাম পরিষ্কার করতে সফল হবে।

আমার পিতার দেয়া স্বপ্ন–এর পর সিনেটের সদস্য পদপ্রার্থী বারাক ওবামা গার্ভির একটি স্বকীয় উক্তি “জেগে ওঠ, হে মহৎ জাতি!” উদ্ধৃত করে প্যান-আফ্রিকান সম্প্রদায়ে গার্ভি’র উচ্চতা সম্পর্কে তার সচেতনতা প্রকাশ করেছিলেন। অনেক গার্ভিবাদিই ব্যাপকভাবে একে একটা চিহ্ন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে ওবামা হয়তো গার্ভি এবং তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই -এর পুরাতন নাম) এবং বিচার বিভাগ আরো অনেক যেসব কৃষ্ণাঙ্গ নেতাদের কর্মকে অপরাধ  বিবেচনা করেছিল তাদের প্রতি মার্কিন নীতির পরিবর্তন করবেন।

আরো অন্যান্য লক্ষণ ছিল ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের “নৈতিক মহাবিশ্বের চাপটি দীর্ঘ হলেও সেটা ন্যায়বিচার দিকে ঝুঁকে আছে” বিবৃতিটি উদ্বৃত করতে পছন্দ করা প্রেসিডেন্ট ওবামা যে মূল্যবোধের জন্যে গার্ভি এবং কিং তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন সেটা বিশ্বাস করতেন। তা-নেহিসি কোটস যেমন উল্লেখ করেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা তার আমলে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং কঠোর পরিশ্রম ও আত্মনির্ভরশীলতার আদর্শ মেনে চলার বিষয়ে প্রায়ই ভাষণ দিতেন। আর এসব আদর্শ মার্কাস গার্ভির চেয়ে বেশি আর কার মাঝে মূর্ত?

১৯১৬ সালে গার্ভি একজন কপর্দকশূন্য অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় এসেছিলেন এবং কালো মানুষদের নিজেদের সম্পর্কে চিন্তার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে গিয়ে জীবন শেষ করেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ব্যবসায় নেটওয়ার্ক [6] অনুসারে,  “গার্ভি এবং ১৩ জন সদস্য মিলে ১৯১৭ সালে যে ইউএনআইএ (সার্বজনীন কৃষ্ণাঙ্গ উন্নয়ন সমিতি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯২১ সালে বিশ্বব্যাপী তার সদস্য সংখ্যা হয়েছিল আশি লক্ষাধিক। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিগ্রো বিশ্ব নামে একটি সংবাদপত্র সর্বোচ্চ পর্যায়ে যার সাপ্তাহিক গ্রাহক ছিল পাঁচ লক্ষাধিক; ব্ল্যাক স্টার লাইন নামের একটি শিপিং লাইন প্রতিষ্ঠার সময় যার বিনিয়োগকৃত মূলধন ছিল এক কোটি ডলার; কালো তারকা নামে একটি  শিপিং লাইন; নিগ্রো ফ্যাক্টরিজ কর্পোরেশন যা একটি মুদি দোকান ও রেস্টুরেন্ট চেইন, একটি বাষ্পীয় লন্ড্রি, দর্জির দোকান, পোশাক নির্মাণ দোকান, মেয়েদের টুপির দোকান, প্রকাশনা সংস্থা এবং পুতুল কারখানাসহ নানা ধরনের অসংখ্য উদ্যোগের মাধ্যমে আয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিল। শুধু নিউ ইয়র্ক শহরেই গার্ভি কয়েকটি ভবন ও একটি ট্রাকের বহরের মালিক ছিলেন আর নিয়োগ করেছিলেন ১,০০০-এর বেশি কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিক।” “সাফল্যের কালো দেবদূত” মার্কাস গার্ভি দেশে-বিদেশে আফ্রিকীয়দের মুক্তিলাভের একটি প্রমাণিত নীল-নকশা দিতে চেয়েছিলেন।

পেশাজীবী পরিচয়ে গর্ববোধ করেন এমন কারো মতো প্রেসিডেন্ট ওবামা মার্কিন জনগণের সঙ্গে (কৃষ্ণাঙ্গ) জাতি এবং আমাদের সমষ্টিগত স্মৃতি থেকে কৃষ্ণাঙ্গ মহানায়কদের মুছে ফেলা সম্পর্কে আন্তরিক আলোচনার একটি সুযোগ হারিয়েছেন। গার্ভি পরিবারের আইনী প্রতিনিধি জাস্টিন হ্যান্সফোর্ড এটাকে একটি “শিক্ষণীয় মুহূর্ত” অভিহিত করেছেন। এখানে ওবামা হয়তো দেখাতে পারতেন গার্ভি’র অর্জনগুলো কিভাবে কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনে তাদের  আত্মনির্ভরশীলতা এবং উদ্যোক্তাদের অংশ বানিয়েছে।  প্যান-আফ্রিকান সম্প্রদায়ের মধ্যেকার কার্যরত রাজনৈতিক নেতা হিসাবে প্রেসিডেন্ট ওবামা হয়তো উত্তরসূরী প্রশাসনের নাগরিক ও মানবাধিকারের উপর  আন্দাজ করতে পারা হামলার বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারার জন্যে গার্ভির কাজকে দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে নিয়ে একটি দর্শন উপহার দিতে পারতেন।

প্রেসিডেন্ট ওবামা নীরবতা বেঁছে নিয়েছিলেন বলেই আমাদের জন্যে শুধু কিছু প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। স্বপ্ন-তে  নিছক একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে গার্ভিকে চিত্রিত করা  প্রেসিডেন্ট ওবামা কি একজন প্যান-আফ্রিকান নেতা হিসেবে পিতার কর্মের একটি বৃহত্তর উপলব্ধির পরামর্শ দেয়া ড. জুলিয়াস গার্ভির চিঠি উপেক্ষা করেছেন? অথবা প্রেসিডেন্ট কি এই ভয়ে ভীত ছিলেন যে তিনি গার্ভিকে ক্ষমা করে দিলে একে কৃষ্ণাঙ্গদের আমেরিকা বানানো এবং আরো বর্ধিতভাবে, জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে স্বাধীনতা বন্ধ করে দেয়া আমেরিকা হিসেবে ধরে নেয়া হবে? প্রেসিডেন্ট ওবামা কি এই ভয়ে ভীত ছিলেন যে তার উত্তরাধিকার হয়তো আমূল সংস্কারের চেষ্টা হিসেবে কালিমা লিপ্ত হবে? আমরা কখনোই জানবো না।

তবে একটি জিনিস নিশ্চিত: তার অনেক প্রশংসনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন সত্ত্বেও, যতদিন মার্কাস গার্ভির স্মৃতি যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ওবামার একটি স্পষ্ট নৈতিক পছন্দ অনুসরণ করতে পারার ব্যর্থতা ভুলে যাবার নয়।

গার্ভি’র ভুত-এর লেখক জিওফ্রে ফিল্প। ক্যারিবীয় সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি প্রধান সংকলন তার কাজের প্রতিনিধিত্ব  করে। বর্তমানে তিনি “মার্কাস গার্ভির চিঠি” নামের একটি কবিতাসংগ্রহ নিয়ে কাজ করছেন।  জিওফ্রে মিয়ামিতে বসবাস করেন এবং  মিয়ামি দ্যাদ কলেজের আন্ত-আমেরিকান ক্যাম্পাসে ইংরেজি শেখান।