থাই মিডিয়ার আশংকাঃ প্রস্তাবিত আইন গণমাধ্যমকে পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যেতে পারে

খসড়া গণমাধ্যম বিলে দমনমূলক বিধান সম্পর্কে থাই সাংবাদিকরা এই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। ছবিটি এসইএপিএ-এর ফেসবুক পাতা থেকে নেয়া

একতার একটি অনন্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে থাইল্যান্ডের ছোট-বড় বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকে আরো সংকোচনের হুমকির মুখে ফেলে দেয়া সরকারের একটি খসড়া আইনের বিরোধিতা করেছে

প্রস্তাবিত “গণমাধ্যমের অধিকার ও স্বাধীনতা, নৈতিকতা এবং পেশাগত মান সুরক্ষা” বিলটির খসড়া করেছে জাতীয় সংস্কার পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু বিল বা খসড়া আইনটির বিষযবস্তু বিশ্লেষণের পর বিভিন্ন মিডিয়া গ্রুপ এবং অ্যাক্টিভিস্টরা সারাদেশের গণমাধ্যম সরকারের পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে

বিলটি অনুসারে সাংবাদিকদের লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেশাদার মিডিয়া কর্মী হিসেবে পূর্বেই স্বীকৃতি নিতে হবে। গণমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনার এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণের জন্যে একটি জাতীয় পেশাজীবী মিডিয়া কাউন্সিলও প্রতিষ্ঠা করা হবে।  অর্থ, সংস্কৃতি ও ডিজিটাল অর্থনীতি মন্ত্রণালয় থেকে চারজন স্থায়ী সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধিসহ প্রস্তাবিত কাউন্সিলটি হবে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট।

বিলটির সমর্থকরা বলছে এটি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রসার ঘটাবে। কিন্তু সমালোচকেরা এর নিন্দা করছেন। তাদের মতে এটি সরকারি নজরদারির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করবে।

২০১৪ সালে থাই সেনাবাহিনী ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে। একটি সংবিধানের খসড়া করার পর এটি বেসামরিক শাসন পুনঃস্থাপিত করার অঙ্গীকার করেছে, যাতে আমলাতন্ত্রে সামরিক প্রভাবের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। সামরিক আইন উঠে যাওয়ার পরেও সেনাবাহিনী থাই মিডিয়ার উপর ঘনিষ্ঠভাবে নজরদারি করছে।

প্রায় ৩০টি মিডিয়া গ্রুপ বিলটি প্রত্যাখ্যান করে একটি বিবৃতিতে  স্বাক্ষর করেছে:

এটা (গত আগস্টের গণভোট পাস হওয়া) সংবিধানের অভিপ্রায়ের পরিপন্থী যাতে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মিডিয়ার আত্ম-নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। বর্তমান চেহারায় বিলটি রাষ্ট্রের ক্ষমতা খুঁটিয়ে দেখার ক্ষেত্রে মিডিয়ার দায়িত্বে এবং জনগণের জানার অধিকারে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

খসড়া আইনটি সমাজে একনয়ায়কতন্ত্রকে সুরক্ষিত করতে পারে বলে থাইল্যান্ডের জাতীয় প্রেস কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান চাক্রিত পারম্পুল চিন্তিত:

এই ধরনের জিনিস শুধু একনায়কতান্ত্রিক সরকারগুলোর অধীনে বিদ্যমান। এটা গণভোটে সমর্থিত নতুন সংবিধানের পরিপন্থী যাতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ব্যাংকক পোস্ট সংবাদমাধ্যমের প্যানেলে সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছে:

একটি প্রেস প্যানেলে সরকারি উপস্থিতি এবং লাইসেন্স বিশিষ্ট সাংবাদিক কখনোই একটি মুক্ত গণমাধ্যমের অংশ নয়। যে মিডিয়া এবং জনগণকে সেবা দেয় সংবাদমাধ্যম, তারাই এর সংস্কার চালিয়ে যেতে সক্ষম এবং সেটা কখনো থেমে থাকেনি।

নতুন নতুন মিডিয়া, জনগণের পরিবর্তিত উপলব্ধি এবং একটি সদা বিবর্তিত সমাজ প্রেস সংস্কারের অব্যাহত থাকা নিশ্চিত করে। কিন্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই এটাকে আরও ভাল করতে পারে না।

থাই সাংবাদিকরা বিলটি পুনর্বিবেচনা করার জন্যে সরকারের কাছে আহবান জানিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও তারা জনসাধারণকে সংবাদমাধ্যমের মুখ বেঁধে রাখার প্রতীক হিসেবে শৃঙ্খলিত কবুতরের ছবি (পোস্টের উপরের ছবিটি দেখুন) পোস্ট করে সামাজিক মাধ্যমে তাদের প্রচারণাকে সমর্থন করার আহবান জানাচ্ছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় প্রেস অ্যালায়েন্স  থাই সাংবাদিকদের সংগঠিত প্রতিবাদের সঙ্গে  সংহতি  প্রকাশ করে একটি বিবৃতিও জারি করেছে:

তথাকথিত মিডিয়া সংস্কার বিলটির ফলে হয়তো সারাদেশের সকল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এবং সাংবাদিকসহ থাই গণমাধ্যমটি সার্বিক নিয়ন্ত্রণের অধীন চলে যেতে পারে। এটি ২০ বছরেরও বেশি সময়ের সংস্কার প্রক্রিয়ারও একটি বড় পশ্চাৎমুখী পদক্ষেপ যে রাষ্ট্রীয় একাধিপত্য থেকে গণমাধ্যমের স্থানটির গণতন্ত্রায়ণ তথা বৈচিত্র্য ও তথ্যে প্রবেশাধিকারের লক্ষ্যে থাই সাংবাদিক সম্প্রদায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .