বাংলাদেশে এক পথচারী আত্মহত্যার জন্য রেললাইনের উপর শুয়ে পড়েছিলেন। রেলওয়ের এক কর্মী সেটা দেখে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচান। সিসিটিভিতে ধারণকৃত পথচারীকে বাঁচানোর ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
৫৮ বছর বয়সী ওই রেলকর্মীর নাম বিল্লাল হোসেন মজুমদার। তিনি ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রেললাইনের চাষাঢ়া জংশনে গেইটম্যানের কাজ করেন। গত ২১ নভেম্বর ২০১৬-এ তিনি সিগন্যাল দেয়ার উদ্দেশ্যে পতাকা নাড়ছিলেন। এ সময়ে তিনি ২৬ বছর বয়সী মামুন হোসেনকে দেখতে পান। সে রেললাইন বরাবর লাফ দিয়ে শুয়ে পড়ে। বিল্লাল হোসেন পতাকা ওড়াতে ওড়াতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন- বাঁচাতে হবে লোকটিকে। তিনি রেলগাড়ির সামনে লাফ দিয়ে লোকটিকে রেললাইন থেকে টেনে সরিয়ে আনেন। এক মুহূর্ত এদিক-ওদিক হলে দু’জনেই নিশ্চিতভাবে মারা যেতেন। পরে জানা গেছে, মামুন হোসেনের বাড়ি চাষাঢ়ার মাজডাইল গ্রামে। মায়ের সাথে ঝগড়া করে তিনি আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই রেললাইনের ওপর শুয়ে পড়েছিলেন।
বাংলাদেশে রেলপথে নিত্যনৈমিত্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। দেশের ২,৫০০ রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৪০ শতাংশেই কোনো গেইটম্যান থাকে না। পথচারীরাও ট্রাফিক আইন মেনে চলেন না। গত ৬ বছরে রেল দুর্ঘটনায় ১৫২ জন মানুষ মারা গেছেন।
বিল্লাল হোসেন মজুমদারের সাহসিকতার চিত্র ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। এবং সেটা বাংলাদেশ রেলওয়ের ফেইসবুক পেইজে শেয়ার করা হয়েছে।
সাংবাদিক আশীফ এন্তাজ রবি জানিয়েছেন, বিল্লাল হোসেন নি:স্বার্থভাবে এরকম একটি মহৎ কাজ করেছেন। অথচ কাজের কোনো মূল্যায়নই পান না তিনি:
বিল্লাল রেলের একজন সাধারণ গেটম্যান। তার কাজ ট্রেন এলে লাল কাপড় ওড়ানো।
সেই ১৯৮৪ সাল থেকে তিনি রেলের গেটম্যান। তখন বেতন পেতেন ২৪ শত টাকা। বত্রিশ বছরে বেতন অনেক বেড়েছে। এখন তিনি বেতন পান ৭ হাজার টাকা। এই টাকায় কী করে একটি লোকের পরিবার চলে, আমি ঠিক জানি না।
ও আরেকটি কথা, গত ৩২ বছরেও বিল্লালের চাকরি স্থায়ী হয়নি।
ফেইসবুকে তারেক আলম আশা প্রকাশ করেছেন, বিল্লাল হোসেনের কাজ দেখে সবাই কিছু শিখবে:
পথেঘাটে বিপদগ্রস্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে না এসে তাকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে যাওয়া অথবা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছবি বা সেলফি তোলার এক নির্মম রেওয়াজ শুরু হয়েছে আজকাল। এমন একটি হতাশাজনক বাস্তবতার ভেতর ব্যতিক্রম অথচ সেটাই সঙ্গত ও স্বাভাবিক এমন কিছু উদাহরণ সৃষ্টি হলে তা সমাজে গভীর প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়।
সালাহউদ্দীন আহমেদ তার কাজের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন:
কিছু কিছু সাহসী ও আন্তরিক মানুষের জন্য পৃথিবীকে অনেক সুন্দর মনে হয়। মানবিক এই কাজের জন্য গেটম্যান বিল্লালের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান।
আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে রেললাইনে শুয়ে পড়া ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি দেখানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আবু বেনিন:
এইরূপ অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারলে নিকট আত্মীয় যদি পাশে থাকে তাহলে তারা অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দমকল বাহিনী, যারাই হোক লোকটিকে সাথে সাথে সমবেদনা জানায়, বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়, মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে আশ্বাস দেয়, ভালবাসা দিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে, কারণ একজন মানুষ সুস্থ মস্তিস্কে কখনো আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় না।
কিন্তু নারায়নগঞ্জের এই ঘটনায় দেখলাম, লোকটিকে রেল লাইনের বাইরে আনার সাথে সাথে পাশ থেকে জনৈক পুলিশ দৌড়ে গিয়ে তাকে লাঠিপেটা শুরু করলো। যেই লোক নিজের জীবন শেষ করে ফেলতে চায়, তাকে লাঠিপেটা করে শায়েস্তা করতে চায় এই পুলিশ!
Bangladesh honours humble rail hero after daring rescue https://t.co/Qkfh3Yuge5
— asiankudos (@asiankudos) December 4, 2016
সাহসিকতার দেখানোর জন্য রেলওয়ে কর্মী প্রতি সম্মান জানালো বাংলাদেশ।
বিল্লাল হোসেনের সাহসিকতার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা জানিয়েছে দেশটির রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। তাকে নগদ এক লক্ষ টাকা এবং জামাকাপড় উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছে। রেলমন্ত্রী তার চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেটা সম্ভব না হলে তার ছেলেমেয়েকে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।