২ লাখ লোকের সহিংস বিক্ষোভের পর ধর্ম অবমাননার অভিযোগ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে

massive-protest

জাকার্তার গর্ভনরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ডাকা সমাবেশে প্রায় ২ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছেন। ছবি: ইউটিউব

চলতি মাসের শুরুতে নভেম্বরের ৪ তারিখে জাকার্তার রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে প্রায় ২ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। জাকার্তার গর্ভনর বাসুকি তিজাহাজা পুর্নামার বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এই সমাবেশ ডাকা হয়েছিল। কট্টরপন্থী মুসলিম নেতারা তাকে ব্ল্যাসফেমির (ধর্ম অবমাননার) দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।

এই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিল রক্ষণশীল ইসলামিক দল হিসেবে পরিচিত ইসলামিক ডিফেন্ডার্স ফ্রন্ট (এফপিআই)। বিক্ষোভ সমাবেশ পরে সহিংসতায় রূপ নেয়। অনেকে একে ১৯৯৮ সালে জাকার্তায় অনুষ্ঠিত দাঙ্গার সাথে তুলনা করেছেন।

জাকার্তার গর্ভনর বাসুকি তিজাহাজা পুর্নামা আহক নামে বেশি পরিচিত। তিনি একজন চীনা বংশদ্ভূত খ্রিস্টান রাজনীতিবিদ। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনের দাঁড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অমুসলিমদের ভোট না দিতে কোরআনের একটি আয়াত ব্যবহার করছে। কিন্তু তিনি এর সমালোচনা বলেন, যারা কোরআনের আয়াতের দোহাই দিয়ে আমাকে ভোট না দিতে জনগণকে উৎসাহিত করছে তারা আসলে মিথ্যা বলছে। তার এই বক্তব্য’র ভুল ব্যাখ্যা দেয় বিরোধী পক্ষ। এতে মুসলমানরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

ইন্দোনেশিয়ার সবচে’ বড় ইসলামী সংগঠন নাধলাতুল উলামা এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী সংগঠন মোহাম্মাদিয়া’র মডারেট ইসলামিক আলেমরা, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সবচে’ বড় মসজিদ ইশতিকলাল জাকার্তা মসজিদের গ্র্যান্ড ইমাম প্রকাশ্যে বলেছেন, আহক ইসলাম অবমাননা করেননি। কিন্তু কট্টরপন্থী ইসলামিক আলেমরা গর্ভনরকে ব্লাসফেমির জন্য অভিযুক্ত করছে। সমাবেশ থেকে তাকে পদত্যাগ করারও আহ্বান জানানো হয়।

হাজার হাজার মানুষ ইসলামের মর্যাদা রক্ষার মিছিলে সামিল হলেও কিছু বিশ্লেষক জানিয়েছেন, মিছিলে এর বাইরেও আরো অনেক মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে বস্তি থেকে উচ্ছেদ হওয়া মানুষরাও ছিলেন। কারণ, আহক বস্তির উচ্ছেদের জন্য কঠোর অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। এর বাইরেও আরো ঘটনা রয়েছে। অশোক হলেন একমাত্র উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা যিনি কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দল এফপিআই-কে নিষিদ্ধ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছিলেন

সহিংস বিক্ষোভ সমাবেশের কয়েক সপ্তাহ আগে অশোকের বিরুদ্ধে অনলাইন এবং অফলাইনে বর্ণবাদী বার্তা ছড়ানো হয়েছিল। উদাহরণ হিসেবে নিচের লিফলেটের কথাই ধরা যায়। সেখানে পাঠকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, অশোকের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যায় তারা সমর্থন করবে কিনা!

#peaceprotest411 was an empty promise. Speeches, banners, posters filled with hate and violence are circulating.

#পিসপ্রটেস্ট৪১১ ছিল ফাঁকা প্রতিশ্রুতিতে ভর্তি। বক্তৃতা, ব্যানার, পোস্টার সব মাধ্যমেই বিষোদগার আর সহিংসতা ছড়িয়েছে।

সিরিয়ান জিহাদিস্টের মতো উগ্রপন্থী দলগুলো অনুসরণকারীদের বারেবারে উদ্বুদ্ধ করেছে আহকের ওপর আক্রমণ চালানোর। তারা ইন্দোশিয়ায় জিহাদ বা পবিত্র যুদ্ধও ছড়াতে চেয়েছে।

বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রথমে শহরের কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। আস্তে আস্তে সেটা জাকার্তার উত্তরপ্রান্তে চলে যায়। গর্ভনর অশোক শহরের এই অংশেই বসবাস করেন। সহিংস বিক্ষোভে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার পাশের দোকানপাট লুট হয়। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জানাতে টুইটারে #সেফটিচেকজাকার্তা হ্যাশট্যাগ দেয় (এটা দ্বিতীয়বারের মতো ঘটলো। এর আগে জাকার্তায় বোমা হামলার সময় সেফটি চেক দেয়া হয়েছিল)।

এই সহিংসতাকে ১৯৯৮ সালে দাঙ্গার সাথে তুলনা করা হচ্ছে। সেসময়ে সহিংস বিক্ষোভকারীরা চাইনিজ-ইন্দোনেশিয়ানদের দোকানপাটে লুটতরাজ এবং আগুন দিয়েছিল।

A friend's windshield was pelted by rocks because he, the driver, has slanted eyes. Glass door of a restaurant in Muara Karang also pelted by rocks.

ইঁটের আঘাতে আমার বন্ধুর গাড়ির কাচ ভেঙ্গেছে। বন্ধুটিই গাড়ি চালাচ্ছিল। তাছাড়া ইঁটের আঘাতে মাওড়া কারাংয়ে রেস্টুরেন্টের কাচ ও ভেঙ্গেছে।

বিক্ষোভ চারদিকে জড়িয়ে গেলে ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো সহিংসতায় ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করেন। এবং সহিংস ঘটনার পিছনে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিরা রয়েছেন, তাদের নিন্দা জানান। দেশকে বিভক্ত করতে পারে এমন কাজ কাউকে করতে দেয়া হবে না বলে রাষ্ট্রপতি সবাইকে হুঁশিয়ারি করে দেন।

The fact is that today's protest was not to defend our religion. Just listen to what they demanded. They want Jokowi to step down.

ঘটনা হলো, আজকে বিভোক্ষ কর্মসূচি আমাদের ধর্মকে রক্ষার জন্য ছিল না। মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তাদের দাবি কি। তারা জোকোউই’র পদত্যাগ চায়।

দোকানপাট লুটপাট এবং পুলিশের প্রতি হামলার অপরাধে পুলিশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে।

আবার অনেকে ধারনা করছেন, জাকার্তার নির্বাচন সামনেই। তাছাড়া জনমত জরিপে আহক অনেক এগিয়ে আছেন। তার জনপ্রিয়তায় কালিমালেপন করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে।

সৌদি ভিত্তিক ইন্দোনেশিয়ার ইসলামী পন্ডিত সুমান্তো আল কুরতুবী বিক্ষোভ কর্মসূচির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে:

Kalian mengklaim “jihad konstitusional” membela negara tetapi kau injak-injak dan lecehkan fondasi kenegaraan dan konstitusi negara. Kalian abaikan prosedur hukum, tata-cara berhukum, dan proses menjalankan hukum. […]
Kalian mengklaim jihad membela Islam tetapi kau injak-injak norma-norma dan etika keislaman. Kau abaikan ahlak dan moralitas keislaman. Perilakumu yang beringas seperti orang kesurupan, tindakanmu yang ngawur seperti orang kesetanan, dan perkataanmu yang kotor-njetor seperti got empang adalah sudah lebih dari cukup untuk membuktikan bahwa kalian ini tidak membela Islam. […]
Apa yang kalian lakukan sesungguhnya bukan jihad membela Islam, Al-Qur'an, apalagi membela Tuhan. Apa yang kalian lakukan sebenarnya adalah jihad membela egomu, membela kepentingan kelompokmu, membela parpolmu, membela tokoh dan idolamu, membela ormas Islammu, membela nafsu-serakah kekuasaanmu.

You claimed it was a “constitutional jihad” to defend the country, but you've disgraced the nation's foundations and constitution. You ignored the legal procedures, legal manners, and processes.

You claimed that it was jihad to defend Islam, yet you disgrace Islamic norms and ethics. You ignored Islamic morals and moralities. Your actions were rabid, as if possessed by evil, and your foul words are clear evidence that you weren't defending Islam.

What you did was not jihad in defense of Islam, Al-Qur'an, or God. What you did was jihad to defend your ego, to defend your Islamic organization, your greed, and power-thirsty selves.

আপনারা দাবি করছেন, দেশের মর্যাদা রক্ষায় এটি “সাংবিধানিক জিহাদ”। কিন্তু আপনারা জাতীয় মৌল নীতি এবং সংবিধান লংঘন করলেন। আপনারা যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া, আইনি ব্যাপার-স্যাপার উপেক্ষা করলেন।

আপনারা দাবি করছেন, ইসলাম রক্ষার জিহাদ এটা। অথচ আপনারা ইসলামিক নিয়ম নীতি লংঘন করলেন। আপনারা ইসলামিক মূল্যবোধ উপেক্ষা করলেন। আপনারদের কাজ ছিল খুবই সহিংস। শয়তানিতে পূর্ণ। আপনাদের কুকথাই বলে দেয়, আপনারা ইসলামের রক্ষায় পথে নামেননি।

আপনারা যা করছেন, সেটা ইসলাম, আল কোরআন বা খোদাকে রক্ষা করবে না। আপনারা যেটা করছেন, সেটা আপনাদের গোঁড়ামি রক্ষার জিহাদ। আপনাদের সংগঠন রক্ষার জিহাদ। আপনাদের ক্ষমতায় যাওয়ার লোভের জিহাদ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .