গত তিন মাসে, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী নির্মূলের অভিপ্রায়ে রাতের আঁধারে [1] ঘর-বাড়ি অনুসন্ধান করে প্রায় ৭,০০০ এর ও বেশী লোককে গ্রেফতার করেছে [2]।
রাতের আঁধারে এইসব অভিযান সম্পর্কে নিজেদের পরিবারকে পূর্ব সংকেত দেওয়ার জন্য কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে, নিরস্ত্র ও মুখোশ পরিহিত যুবা স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের নিজেদের এলাকায় টহল দিচ্ছে। ভিডিও ভলান্টিয়ার্স স্বেচ্ছাসেবক সম্প্রদায়ের সদস্য আবিদ সালাম কর্তৃক নির্মিত এই ভিডিওটি [3] জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে মাত্র ৫৫ কি.মি. (৩৪ মাইল) দূরে অবস্থিত বারামুল্লার পুরাতন এলাকার গল্প বলছে। কাশ্মীর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান পরিচালনার কয়েকদিন আগে এই ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।
গত জুলাই মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক কাশ্মীরের জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ও সামাজিক যোগাযোগ এ্যাকটিভিস্ট ২১ বছর বয়সী বোরহান মুজাফ্ফর ওয়ানীকে হত্যার [4] পর এই গ্রেফতারযজ্ঞের শুরু। তার এই বিচারবহির্ভূত হত্যা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতীয় রাজ্য কাশ্মীর জুড়ে বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায় যার ফলস্বরুপ সেখানে সান্ধ্য আইন জারি করা হয়। আন্দোলনকারীদের আরও দাবির মধ্যে ছিল, সাড়া ভারত জুড়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদের হিড়িক ও বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে অত্যাধিক সামরিক উপস্থিত, এবং ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক তাদের রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন। আন্দোলনের সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলনকারীদের উপর বিভিন্ন মরনাস্ত্রের ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, বটিকা বন্দুক এবং অন্যান্য রাইফেল যার ফলশ্রুতিতে সেখানে ৮৫ জনের মত্যু ঘটে। এছাড়াও ১৩,০০০ এর বেশি লোক আহত হয় ও হাজার হাজার লোক অন্ধত্ব বরণ করে [5]। সান্ধ্য আইন অধিকাংশ স্থানে ৫৩ দিন পর্যন্ত ও অনেক স্থানে ৮৫ দিন পর্যন্ত [6] স্থায়ী হয় যারা প্রভাব পরেছিল প্রায় ৭০ লাখ লোকের উপর।
সন্ধ্যা আইন যদিও বাতিল হয়ে গিয়েছে কিন্তু দমন-পীড়ন এখন রয়েছে। ৪৫০ জনেরও বেশি লোক ‘পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট (পিএসএ)’ এর আওতায় আটক রয়েছে, এটি এমন একটি অইন যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে বিনা বিচারে ছয় মাস পর্যন্ত আটক রাখা যায়।
ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার যুবক ও কিশোর আত্মগোপনে [7] রয়েছে যাদের মধ্যে অনেকেই পার্শবর্তী ক্ষেতখামারে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। কিন্তু যেহেতু শীত সন্নিকটে সুতরাং অনেকেই কয়েকদিন পর পর আশ্রয় পরিবর্তন করে বিভিন্ন বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে রয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ৭০০-এরও বেশি বাড়িঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা।
এই গল্পের মূল ভিডিওটিতে দেখাে যাচ্ছে, যুবক ও কিশোর কাশ্মীরিরা ভারতীয় নিরপত্তা বাহিনীর ভয়ে সাদা কাপড়ে মুখ বেঁধে রয়েছে। তাদের রাতের প্যাট্রোলের সময় তারা স্থানীয়দের জেগে থাকতে ও সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা রাতে ঘুমান না। অনেক বলেন, তারা কয়েক সপ্তাহ হল তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরেছেন না। মাঝে মাঝে এই যুবকেরা গাছের নিচে বা কোন বাড়ির উঠনে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপণ করেন। তারা ভয় পাচ্ছেন, যদি পুলিশ তাদের দেখতে পায় তাহলে তাদের ছবি নেওয়া হবে ও আটক করা হবে।
কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, পুলিশের বিরোদ্ধে সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তারা সহিংসতা উস্কে দিয়েছে। কোন কোন ব্যক্তিকে এটাও সন্দেহ করা হচ্ছে যে, তারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনে সোচ্চার ও পাকিস্তানের সাথে একীভূত করার দাবিতে আন্দোলনরত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যোগদান করেছে।
WH: Arrest spree, killings, maiming & blinding of ppl , night raids are the things, that really disconnect #Kashmir [8] with the rest of India
— iKashmir (@icashmir) October 31, 2016 [9]
গ্রেফতারি, হত্যাকান্ড, অন্ধত্ব, ও রাতের আঁধারের অভিযান কাশ্মীরকে ভারতের অন্য অংশ থেকে বিচ্ছিন করে দিয়েছে।
The arrest of thousands of youth on frivolous grounds might prove to be the shot in the arm of the armed insurgency in #Kashmir [8].
— ابن حسین (@polar_winds) October 22, 2016 [10]
হাজার হাজার যুবক কাশ্মীরিকে কোন কারণ ছাড়াই গ্রেফতার হয়ত, কাশ্মীরের সশস্ত্র আন্দোলনকে আরও উস্কে দেবে।
ভারতীয় সরকার বলে আসছে যে তাদের এই অভিযান শুধুই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরের উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার কর্মী খুররাম পারভেজের গ্রেফতার [11], এবং প্রবর্তিতে তার উপর পিএসএ জারি [12] হওয়াটাকে অনেকেই দেখছেন এই উপত্যকায় ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের একটি কৌশল হিসেবে।