ভারতের পুরস্কারজয়ী ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি মিডিয়া সংস্থা ভিডিও ভলান্টিয়ার্স ফেইসবুকে নিচের গল্পগুলো প্রকাশ করেছে। কনটেন্ট শেয়ারিং চুক্তির আওতায় সেগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করা হয়েছে।
১১ অক্টোবর সারাবিশ্বে পালিত হলো আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে কন্যা শিশুর সমস্যাগুলোর প্রতি নজর দেয়া হয়েছে। নিচের প্রতিবেদনগুলো কমিউনিটি মিডিয়া সংস্থা ভিডিও ভলান্টিয়ার্স তাদের ফেইসবুক পেইজে প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনগুলোতে ভারতের নারীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তা কীভাবে মোকাবেলা করছেন, তা তুলে আনা হয়েছে।
কাশ্মীরে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেয়ার সময়ে পুলিশ গুলি করেছিল
গত জুলাই মাস থেকে কাশ্মীরজুড়ে আবার উত্তেজনা শুরু হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর হাতে ইতোমধ্যে ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অনেকে। পুলিশের বিরুদ্ধে ছররা গুলি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এতে চোখে গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে।

বাইরে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য সানিয়া রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েছিল। এ সময়ে পুলিশের গুলি এসে তার চোখে রাখে। ছবি ইউটিউব থেকে।
বাইরে কী হচ্ছে তা দেখার জন্য ১১ বছর বয়সী সানিয়া তামান্না রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দেয়। এমন সময়ে ছররা গুলি এসে তার বাম চোখে লাগে। এতে করে সানিয়া আংশিকভাবে অন্ধ হয়ে গেছে। তার চোখে তিনটি অস্ত্রপ্রচার হয়েছে। তবে সে আবার চোখে দেখতে পারবে কিনা, তা নিয়ে ডাক্তারের সন্দেহ রয়েছে।
Is this the world we are envisioning for our children, where their safety is not guaranteed even within in their own homes?
এই হলো শিশুদের জন্য আমাদের কল্পনার পৃথিবী, যেখানে নিজ বাড়িতে থাকলেও তার নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়?
আফরোজা মাহিদ সানিয়ার গান্ডারবালের বাড়িতে তার সাথে কথা বলেন:
বাল্যবিবাহের সূবর্ণভূমিঃ
বিশ্বের মধ্যে সবচে’ বেশি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটে ভারতে। ইউনিসেফের তথ্যমতে এই সংখ্যাটা ২৪০ মিলিয়ন। যা বিশ্বের মোট বাল্যবিবাহের তিন ভাগের এক ভাগ।
২০১৩ সালে ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাল্যবিবাহ রোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা খসড়া করে। তিন বছর পরেও পরিকল্পনাটি এখনো কার্যকর করা হয়নি।
ইউনিসেফের তথ্যমতে ভারতের ৪৭ শতাংশ নারীর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়।
মাত্র ১২ বছর বয়সেই ওড়িশা’র মেয়ে মিক্সিরির বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ১৪ বছর বয়সে তার গর্ভে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু বাচ্চার তীব্র রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। বাচ্চাটিকে বাঁচানো যায়নি। এক বছরের মধ্যে মারা যায়। ওই বছরেই মিক্সিরি আবার সন্তান নেন। ১৬ বছর বয়সে তাদের ঘরে একটি সন্তান আসে। ছেলে সন্তান। কিন্তু ছেলেটি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়। শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়ায় তাকে ডাইনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মিক্সিরির বয়স এখন ১৯ বছর। সে এখন বাবা-মায়ের সাথে থাকে। স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সহযোগিতা পায় না। সরকারের কাছ থেকেও কোনো সাহায্য পায়নি। এদিকে পুষ্টির অভাবে তার ছেলেও নানা সমস্যায় ভুগছে।
ভারতের লক্ষ লক্ষ নারী বাল্যাবিবাহ, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন, স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা এবং সরকারি সহযোগিতার অভাবের মতো অসংখ্য বাস্তব সমস্যার শিকার। দু:খের বিষয় একেকজন নারী একের অধিক সমস্যার শিকার। এরফলে তার নিজের এবং শিশুর জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে উঠছে।
তবে এসব বাস্তব সমস্যার সাথেও বীরত্ব ও সাহসিকতার অবিশ্বাস্য গল্পও রয়েছে।
আমি মেয়ে হয়েছি তাতে কি: ৮ বছর বয়সী কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়ন বলেছে
তাজামুল যখন কিকবক্সিং খেলতে চান, তখন তার বাবা তাকে নিরস্ত করতে বলেছিলেন, এটা কঠিন খেলা, সে আহত হয়ে পড়ে থাকবে। সে জেদ ধরে। বাবাকে প্রতিশ্রুতি দেয়, সে সবার মধ্যে ভালো করবে।
৭ বছর বয়সেই তাজামুল তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে। ভারতের সাব-জুনিয়র ন্যাশনাল কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে। তার প্রতিদ্বন্দ্বির বয়স ছিল ১৩। তাকে হারিয়ে ২০১৫ সালের জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়েছে সে। এই বছরের নভেম্বর মাসে ইতালিতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কিকবক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে সে।
আজকে তাজামুলের বাবা শুধু তাকে নিয়েই গর্বিত নন। তিনি আশা করছেন, নারী এবং খেলা নিয়ে মানুষের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা বদলে দিবে। বিশেষ করে তার নিজ এলাকা কাশ্মীরের মানুষদের মধ্যে। তাজামুল এসেছে প্রত্যন্ত শহর বন্দিপোরা থেকে। এখানে নারীদের জন্য সুযোগসুবিধা খুবই কম। এখান খেকে সেই প্রথম এতদূর গেছে।
নারী এবং খেলা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে বিদ্যমান ধারনা রয়েছে- কঠিন অনুশীলন, দক্ষতা, শারীরিক সক্ষমতা লাগে; তাজামুল সে ধারনা ভেঙ্গে দিয়েছেন। সে প্রতিদিন ৫ ঘণ্টা অনুশীলন করে। এর পাশাপাশি পড়াশুনা এবং প্রিয় শখ হিসেবে নাচ শিখে থাকে।