আলেপ্পোয়, হোয়াইট হেলমেট নামক স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতিদিন ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার

A photo posted to the Support Syria Civil Defence Facebook page.

সাপোর্ট সিরিয়া সিভিল ডিফেন্স নামক ফেসবুকের পাতায় পোস্ট করা একটি ছবি।

জয়েস হ্যাকেল-এর এই লেখাটি ৪ আগস্ট, ২০১৬ তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় পিআরআই.অর্গ-এ । লেখা বিনিময় চুক্তি অনুসারে এটি এখানে পুনরায় প্রকাশিত হল।

সিরিয়ার শহর আলেপ্পোয় এখন প্রতিদিন আকাশ থেকে বৃষ্টির মত বোমা পড়ছে।

যখন আলেপ্পোর বাসিন্দারা মাথার উপর বিমানের গুঞ্জন ধ্বনি শোনে, তখন বেশীরভাগ নাগরিক আশ্রয়ের সন্ধান নিরাপদ স্থানের খোঁজে দৌড়ায়।

কিন্তু একদল স্বেচ্ছাসেবক যারা “হোয়াইট হেলমেট” [সাদা শিরস্ত্রাণ] নামে পরিচিত, তারা ঠিক বিমান হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর এখন এই বিরামহীন বোমা বৃষ্টির সময়েও দৃশ্যত তাদের কর্মকাণ্ড থেমে নেই।

হোয়াইট হেলমেটের একজন সদস্য হচ্ছেন ২৯ বছর বয়স্ক নাগরিক ইশমায়েল আলআবদুল্লাহ। তিনি বলেন, মাত্র পেরিয়ে আসা দিনগুলো ছিল যেন নরকের মত, আলেপ্পো নগরে কোন বিদ্যুৎ নেই, সর্বত্র অন্ধকার-এখন কেবল যা আছে তা হচ্ছে কেবল বোমা বর্ষণ, বোমা বর্ষণ আর বোমা বর্ষণ।

মাসের পর মাস ধরে রুশ এবং সিরীয় যুদ্ধ বিমান এই শহরের উপর বোমা বর্ষণ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সেনারা এই শহরের প্রবেশের বেশীর ভাগ সড়কে অবরোধ স্থাপন করে, ফলে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এই শহরের ২৫০,০০০ জন সাধারণ নাগরিক এখানে আটকে পড়ে যায়। এখন সরকারি বিমান হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে স্বেচ্ছাসেবকেরা দিনের পর দিন মৃতদেহ বের করে আনছে। আলআবদুল্লাহ বলেন বিশেষ করে গতকালের কর্মকাণ্ড ছিল খুব বেদনাদায়ক।

তিনি বলেন,“ধ্বংসস্তুপের নীচ থেকে মৃতদেহ টেনে বের করার জন্য আমরা ১০ ঘন্টা কাজ করি। আমরা দশটি মৃতদেহ বের করে আনি,যাদের মধ্যে তিনজন শিশুও ছিল”।

আল আবদুল্লাহ বলেন, তার দল এক আহত নারীকে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করে, যাকে দ্রুত এক স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এই তৎপরতায় তিনি বেঁচে যান।

হোয়াইট হেলমেট, যারা একই সাথে সিরীয় সিভিল ডিফেন্স নামে পরিচিত, তারা বিরোধী বাহিনী নিয়ন্ত্রিত পুরো সিরিয়া জুড়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এবং আলেপ্পোর সমৃদ্ধশালী সুশীল সমাজের যে চিহ্ন অবশিষ্ট রয়েছে এরা তার মধ্যে অন্যতম। তাদের উপস্থিতি শহরের অনেকের উদ্দীপনাকে চাঙ্গা রাখে, যেখানে রাস্তাগুলো প্রায়শ খালি থাকে আর বাজারগুলো বন্ধ থাকে।

স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যক্তিগত ভাবে জীবন সংশয়-এর মত ঝুঁকির মুখোমুখি হন। বোমা বর্ষণ জনতাকে আকর্ষণ করে আর এই সকল ভিড় প্রায়শ আরো বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

তিনি বলেন, “তারা একটা স্থানে বোমা ফেলে অপেক্ষা করে কখন আমরা সেখানে গিয়ে জড়ো হব, এরপর তারা সেখানে আবার বোমা বর্ষণ করে”।

গত মাসে আলআব্দুল্লাহর দুজন সহকর্মী নিহত হয়। যখন তারা একটি বোমা বিধ্বস্ত এলাকায় কাজ করছিলো,সে সময় যুদ্ধ বিমানগুলো ফিরে আসে এবং বোমা নিক্ষেপ করে। দ্বিতীয় দফা বোমা বর্ষণে হোয়াইট হেলমেটের একজন সদস্য সাথে সাথে নিহত হয়, অন্যজন তার একটি হাত ও পা হারা, পরে সে হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করে।

কিন্তু আলআব্দুল্লাহ বলেন যে তিনি এবং তার সহকর্মীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

তিনি বলেন, “যখন আপনি দেখতে পাচ্ছেন মানুষ যন্ত্রণা ভোগ করছে, তখন তাদের সাহায্য করার জন্য আপনাকে কিছু করা দরকার। আমি মনে করি, আলেপ্পোতে যারা আছে, তাদের সকলে একজন বীর।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .