মাকাসার ভিত্তিক দুইজন ডিজিটাল সাংবাদিক ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসি অঞ্চলে গত ৫ জুন, ২০১৬ তারিখে আততায়ীর আক্রান্ত্রের শিকার হয়েছেন। মাকাসারে মেয়রের বাড়িতে ইসলামিক শিক্ষার্থী এ্যালামনাই (কেএএইচএমআই মাকাসার) এর মাকাসার শাখা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় তাঁরা এই হামলার শিকার হন।
গ্লোবাল ভয়েসেসের লেখক অর্পন রাচমান এবং তাঁর স্ত্রী ইচা লামবোগে গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেছেন যে কালো পোশাকধারী দুইজন লোক তাঁদেরকে থামান এবং তাঁদের সাংবাদিকতা পেশার পরিচয়পত্রটি চান। উল্লেখ্য ইচা লামবোগেও একজন সাংবাদিক। লোক দুইজন শহর নিরাপত্তা রক্ষীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরা ছিলেন না। এরপর তাঁরা তাঁদেরকে সেই বাড়ির একটি ছোট কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে অর্পন সেই দুইজন লোককে তাঁদের পরিচয় জেনে নিতে বলেন, কিন্তু তাঁরা তা করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তাঁদের মধ্যে একজন লামবোগের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। মোবাইল ফোনটি তিনি প্রতিবেদন সংগ্রহের কাজে মূল যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। রাচমান হস্তক্ষেপ করে তাঁর ফোনটি ফিরে পেতে চেষ্টা করে। তাই লোকটি তাঁর বুকে ঘুষি মারে এবং অন্য লোকটি তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চায়।
দম্পতিটি পুলিশের কাছে এই ঘটনা জানায় এবং একজন ডাক্তার রাচমানের চিকিৎসা করেন। যদিও তিনি এবং তাঁর স্ত্রী উভয়ই তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, তবুও ধীরে ধীরে তাঁরা এই ঘটনা থেকে ভয় কাঁটিয়ে উঠছেন।
মাকাসারের স্বাধীন সাংবাদিকদের জোট ২০১৬ সালে এ পর্যন্ত সাংবাদিক নির্যাতনের ১২ টি মামলা নথিভুক্ত করেছেন। প্রতিবেদন তৈরি করার সময় হয়রানি, প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি নষ্ট করা, ভীতিপ্রদর্শন এবং শারীরিক লাঞ্ছনা সহ নানা ধরণের নির্যাতন এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কেএএইচএমআই, এজিআই কিংবা মাকাসারের কর্মকর্তারা রাচমান এবং লামবোগের উপর হামলা সংক্রান্ত কোন বিবৃতি জারি করেনি।
লামবোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে অল্প কিছুদিন পর ঘটনাটি “বরখাস্ত করা হবে এবং ভুলে যাওয়া হবে অথবা যে প্রমাণগুলো রেকর্ড করা হয়েছে সেগুলোতে ভেজাল মেশান হবে”। ঘটনার পর থেকে তাঁরা মাকাস্সর লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশন থেকে আইনী সহযোগিতা পেয়েছেন। তবে তাঁদের মামলাটি সম্পর্কে অনেকেই সন্দিহান রয়েছেন। তাঁরা তাঁদের শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে এখনও ভয়ে আছেন।
তাঁরা দু’জনই সাংবাদিকতায় বেশ সক্রিয়। লামবোগে মূলত সিন্ডো ত্রিজায়া এফএম এ কাজ করছেন। এটি জাকার্তা ভিত্তিক একটি বেতার কেন্দ্র। আর রাচমান বাকেটিআইনিউজ, ইন্সপিরেটিফনিউজ, মেমবুনুহ ইন্দোনাশিয়া এবং মিডিয়া লিংকুনগান সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে তদন্তকারী সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।
এই দম্পতি একসঙ্গে কিছু গল্পে কাজ করেছেন যেগুলো হয়তোবা এই হামলার পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছে বলে তাঁরা সন্দেহ করছেন। এশীয় এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেঃ নির্যাতন শিরোনামে মানবাধিকার পত্রিকার সাম্প্রতিক একটি মুদ্রিত সংস্করণের জন্য এই হামলা করা হতে পারে। তাঁরা এই প্রতিবেদনে মাকাসারের কেন্দ্রে অবস্থিত বুলোগেডিং অঞ্চলে ঘটে যাওয়া বিতর্কিত গণ উচ্ছেদের বিষয়ে লিখেছেন। উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই উচ্ছেদ সম্পর্কে একাধিক অনলাইন গল্প পরবর্তীতে সরিয়ে নেওয়া হয়।
ইন্দোনেশিয়াতে প্রায় প্রতিনিয়তই সাংবাদিকরা সহিংস হামলার শিকার হন। এই ধরণের আক্রমণের খবর প্রায়ই প্রচার মাধ্যম গুলোতে অপ্রকাশ্য থেকে যায়। আর অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
অর্পন এবং ইচার উপর ঘটে যাওয়া ঘটনাটি একটি স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটে প্রচার করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি পরবর্তীকালে অজ্ঞাত কারণে সরানো হয়েছে।
গ্লোবাল ভয়েসেস সম্প্রদায় ইন্দোনেশিয়া এবং বিশ্বের যেকোন স্থানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া সকল প্রকার সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। একটি সম্প্রদায় হিসেবে আমরা আমাদের সহকর্মী অর্পন এবং সত্য ও ন্যায়ের জন্য তাঁর পরিবারের এই আবেদনের পাশে দাঁড়িয়েছি।