লোকে বলে রক্ত দান করে জীবন দান করা যায়। ঢাকার কামরুজ্জামান নামের ২৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দূর্ঘটনায় আহত হলে গত ২১ মে তারিখে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একাধিক হাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় জরুরী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসার জন্য তাঁকে রক্ত দানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ডাক্তাররা ইতোমধ্যেই আবিষ্কার করেন যে তাঁর রক্তের গ্রুপ হচ্ছে বম্বে ব্লাড গ্রুপ, যেটি রক্তের গ্রুপগুলোর মধ্যে বিরল। বাংলাদেশে ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর মুম্বাই-ভিত্তিক একটি সংগঠন থিংক ফাউন্ডেশন মুম্বাইয়ে চারজন রক্ত দাতার কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়। সেই চারজন রক্ত দাতা হচ্ছেনঃ স্বপ্না সাওয়ান্ত, কৃষ্ণনন্দ কোরি, মেহুল ভেলেকার এবং প্রবিন শিন্দে। কামরুজ্জামানের একজন সহকর্মীর মাধ্যমে এই রক্ত ভারত থেকে আনা হয় এবং অস্ত্রোপচারে তা ব্যবহার করা হয়। এই অস্ত্রোপচারেই তাঁর জীবন রক্ষা হয়।
দ্যা বেটার ইন্ডিয়া নামক একটি গ্রুপ এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেঃ
রাজেশ ওয়ারনা এই বিরল রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে ফেইসবুকে লিখে শেয়ার করেছেনঃ
ভারতে ৪ শতেরও কম মানুষ বম্বে ব্লাড গ্রুপ বিশিষ্ট বলে জানা যায়। এই বিরল রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে বিস্তারিত একটি তালিকা এখানে রয়েছেঃ
১। এটি অত্যন্ত বিরল একটি এবিও গ্রুপ। এমনটি বলার কারণ হচ্ছে, এটি প্রথম বোম্বের (বর্তমানে মুম্বাই) কয়েকজন মানুষের মধ্যে আবিষ্কৃত হয়।
২। এই রক্তের গ্রুপ শুধু পূর্ব ভারতীয়দের মধ্যেই পাওয়া যায়নি, বরং ককেশীয়, জাপানি ইত্যাদির মাঝেও পাওয়া গেছে।
৩। বোম্বে রক্তের গ্রুপে এইচ এন্টিজেনটি অনুপস্থিত। এছাড়া এ, বি, এবি এবং ও রক্তের গ্রুপগুলোতে মূলত এইচ প্রকাশ হয়। এটি বম্বে ব্লাড গ্রুপ ব্যক্তিদের জন্য সম্পূর্ণরূপে অজানা একটি সত্ত্বা।
৪। প্রায় ৫০ বছর আগে পারেল কেইএম হাসপাতালে রক্তের গ্রুপটি আবিষ্কৃত হয়। সেখানে একজন রোগী চিকিৎসার জন্য আসেন এবং তাঁর দেহে ও রক্তের গ্রুপটিতে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
৫। বোম্বে ব্লাড গ্রুপের ব্যক্তিদের কখনই অন্য কোন গ্রুপ থেকে রক্ত দিয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত হবে না।
হিমাদ্রি শেখর নাথ মনে করেন, এই ধরনের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তৈরি করা মানুষের আরও বেশি প্রয়োজনঃ
সীমানা বিহীন এমন মানবতার আমাদের খুব প্রয়োজন। এই পৃথিবীতে একটি সুন্দর জীবন যাপনের জন্য এই ধরনের মানবতাই কাম্য…
একটি জীবন এবং একটি সমগ্র পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য ধন্যবাদ…… মানবতার স্বার্থে একটি ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে এই অনন্য উদাহরণগুলো আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করে।
এই রক্ত দানকে অনির্বাণ রায় প্রজাতি সত্যায়ন “উপহার” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেনঃ
একটি জীবন বাঁচাতে চারজন সুহৃদ তাঁদের উপহার পাঠিয়েছেন! মানবতা এখনও বিদ্যমান!
সায়মা মহসিন বলেন, এই রক্ত দাতারা দেখিয়েছেন যে মানুষের আত্মাকে বিভক্ত করা যায় না:
আবার প্রমান হয়ে গেল মানুষ মানুষের জন্যে। যতই কাঁটা তারের বেড়া থাকুক না কেন আর যতই প্রোটকল থাকুক না কেন। সবার ওপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই। যেখানে ধর্ম বর্ণ ভাষা সব তুচ্ছ হয়ে শুধু মানুষ কে ভালবাসার টানেই এমন কাজ করা যায়। আমি এই ১৬ কোটি মানুষের পক্ষ থেকে আপনাদের কে জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমাদের অনেকেরই জানা ছিল না, এমন বিরল গ্রুপের রক্ত মানুষের শরীরে বহমান। আপনারা বাংলাদেশের এক যুবক এর জন্যে যা করেছেন তা শুধুমাত্র ধন্যবাদ দিয়ে দায় শেষ হবার নয়। রক্তের ঋণ কক্ষনো ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যায় না। সারা জীবন এই ঋণ মাথায় করে রাখতে হয়
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কামরুজ্জামানের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে এবং তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাঁর বড় ভাই মাসুদ আলম তাৎক্ষনিকভাবে অবাক হন যে অন্য দেশের চার জন মানুষের রক্ত আসলেই তাঁর ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে পারে।