বাংলাদেশী কলেজ ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার পর #তনুরজন্যেন্যায়বিচার হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়েছে

তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ব্যানার। সৌজন্যে জাস্টিস ফর তনু ফেসবুক পাতা

তনু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ব্যানার। সৌজন্যে জাস্টিস ফর তনু ফেসবুক পাতা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধর্ষণের সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বছরেও এই ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ১৯ বছর বয়েসী এক কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণের পর নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে জনগণ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।

গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় শহর কুমিল্লার একটি সামরিক ব্যারাকের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ভিক্টোরিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর মাথা থেঁতলানো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীরা ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং তনুর জন্য সময়মত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে যা দ্রুত কুমিল্লা থেকে শুরু হয়ে দেশের অন্যত্র ছড়িয়ে পরে।

#তনুরজন্যেন্যায়বিচার

সোহাগীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর, যে এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা সামরিক বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনিক কর্মী এবং তাদের পরিবার। ‘ক্যান্টনমেন্ট’ এলাকাগুলোকে সাধারণত নিরাপদ এলাকা বলে মনে করা হয় কারণ নিরাপত্তা রক্ষীদের অবস্থান ছাড়াও চেকপোস্টের মাধ্যমে সেখানকার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী কলেজ থিয়েটারের একজন সক্রিয় সদস্যা ছিলেন। তনু তার পড়াশুনার খরচ যোগাতে গৃহশিক্ষকতার খণ্ডকালীন কাজ করতেন এবং ২০শে মার্চ বিকেলে এক ছাত্রের বাসায় পড়াতে যাবার পরে আর বাড়ি ফিরে আসেননি।

আত্মীয়স্বজনেরা সারারাত তাকে আসে পাশে খুঁজেছেন এবং পরদিন ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে একটি ঝোপের ভেতর থেকে তার লাশ পাওয়া যায়।

২৪শে মার্চ একটি পোস্টমর্টেম পরীক্ষার রিপোর্টে নিশ্চিত করা হয় যে তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এখনো কোন সন্দেহভাজন লোককে খুঁজে পায়নি।

তনুর মৃত্যু ইতিমধ্যে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলেও মিডিয়া ২৪শে মার্চ পর্যন্ত এ বিষয়ে অদ্ভুত নীরবতা পালন করে। তবে দেশব্যাপী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরলে তারা এ নিয়ে লেখা শুরু করে।

অনেকের ভাষ্য অনুযায়ী সেনা কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেছে যে সেনানিবাস এলাকায় কোনরকম কোন প্রতিবাদ যেন অনুষ্ঠিত না হয়।

ফেসবুক ও টুইটারে অনেকে প্রশ্ন করছে কিভাবে এরকম নিরাপদ এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটতে পারেঃ

কুমিল্লা সেনানিবাসে যদি এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তার মানে নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়।

সেনা কর্মকর্তার কন্যা সীমানা রহমান আঁচল, যিনি বিভিন্ন সেনানিবাসে তার সারাটা জীবন কাটিয়েছেন, ফেসবুকে বলেছেন:

ক্যন্টনমেন্ট এ বাইরের মানুষের ঢুকতে পরিচয় ও সাথে যোক্তিক কারন দেওয়া লাগে। এতে মানুষ বিরক্তও হয় কিন্তু এগুলা নিরাপত্তার জন্যই করা হয়। সেখানে বাইরের থেকে কেউ এসে ক্যন্টনমেন্টের ভিতরে কোন মেয়েকে রেপ করে হত্যা করার মত অসাধ্য সাধন করা কারো পক্ষ্যেই সম্ভব না। মানুষ তো এত বোকা না। সবাই বুঝতেসে এটা ভিতরের কারোরই কাজ। ফুল প্ল্যানিং এর মাধ্যমে করা এই হত্যা একটা পরিবারকে ধংস করে দিল। আর যদি এটা কোন সিভিলিয়ান করে তাইলে কোথায় ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তা। #তনুরজন্যেন্যায়বিচার

সোশ্যাল মিডিয়ায় তনু হত্যার প্রতিবাদের ছবি সমন্বিত পোস্ট অনেক শেয়ার হয়েছে – বেশিরভাগই #তনুরজন্যেন্যায়বিচার হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছে। মূলধারার মিডিয়া ঘটনাটি নিয়ে বেশ উচ্চবাচ্য করেনি – সেই ঘাটতি পুরন করেছে তারা।

ফেসবুক ব্যবহারকারী অনলি তুরাগ লিখেছেনঃ

সোহাগী জাহান তনু গতকাল ধর্ষিত ও নিহত হয়! সে প্রথম নয়! এর আগে এমন ঘটনা আরও ঘটেছে। এর পরেও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
হয়ত সেটা আপনিও হতে পারেন .. অথবা আপনার বোন .. বা আপনার মেয়ে .. আপনার মা.. আপনার স্ত্রী!
যদি তনুর জন্য নয়, তাহলে নিজের জন্য দাঁড়ান!
#তনুরজন্যেন্যায়বিচার চান।

নেট নাগরিকেরা আরও বলেছেন যে বাংলাদেশের মত রক্ষণশীল দেশে অনেকক্ষেত্রেই নারীর পোষাক পছন্দকে ধর্ষণের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তনু হিজাব পরতেন, যা বাংলাদেশে নারীর প্রতি আক্রমণের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়।

যখন আপনার হিজাব আপনাকে ধর্ষণ থেকে বাঁচাতে পারে না। #সমাজেরপ্রতিঘৃণা #তনুরজন্যেন্যায়বিচার

বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং হত্যার শাস্তি ফাঁসির দ্বারা মৃত্যুদণ্ড।

প্রতিবাদ

সপ্তাহ জুড়ে, কুমিল্লায় শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মানববন্ধন করেছেন এবং প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ নিয়েছেন। এমনকি তারা আন্তঃরাজ্য মহাসড়ক অবরুদ্ধ করেও প্রতিবাদ করেছেন।

বুধবার হাজারো কুমিল্লার বাসিন্দা শহরের কেন্দ্রে বিক্ষোভকালে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার জন্য কর্তৃপক্ষকে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়, নাহলে শহরকে স্থবির করে দেবার হুমকি দেয়।

সেনা ব্যারাকের ভেতর নারীকে ধর্ষণের পরে হত্যা। সারা বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদ।

এদিকে, অনেক মানুষ ফেসবুক ব্যবহারকারী দিব্য তান্ত্রিক এর অনুভূতির সাথে একমত যে সরকার কালক্ষেপণ করছে তদন্ত প্রক্রিয়া বিলম্বিত করে। বিক্ষোভকারীদের মতে, ধর্ষণ ও হত্যার তদন্তে এই ধীর প্রতিক্রিয়া এইসব বিক্ষোভকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

শাহবাগ আন্দোলনের থেকে উদ্ভূত প্ল্যাটফর্ম গনজাগরণ মঞ্চ, তনু হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচীর ডাক দেয়।

উপরন্তু, নারী সংহতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচীর আয়োজন করে।

এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এর পেছনে অনেক কাহিনী আছে। আমাদের উচিৎ এর প্রতিবাদ করা। #তনুরজন্যেন্যায়বিচার।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অন্তত ২৪১টি ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। এই সংগঠন বলেন ধর্ষণের প্রকোপ ২০১০ থেকে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৪ সালে ৭৮৯টি ধর্ষণ, ২০১৩ সালে ৭১৯টি, ২০১২ সালে ৮৩৬টি, ২০১১ সালে ৬০৩টি এবং ২০১০ সালে ৪১১টি ধর্ষণের রিপোর্ট করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী মানবাধিকার রিপোর্ট অনুযায়ী গত বছর ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও শিশুরা যৌন নির্যাতনের কবলে পরে।

#তনুরজন্যেন্যায়বিচার এবং বাংলাদেশের অন্যসব মহিলাদের জন্যেও ন্যায়বিচার, যারা সহিংসতার কবলে পরেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .