
কাঠমান্ডু ভ্যালির প্রথম গাড়ি। কুলিরা বহন করে নিয়ে যাচ্ছে।‘নেপাল ইন পিক্স’ টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি নেয়া।
ইতিহাসে দেখা যায়, বিদেশ থেকে আসা ভ্রমণকারীরা নেপালকে অতীন্দ্রিয়বাদের দেশ হিসেবে দেখে এসেছে। পৃথিবীর সবচে’ উঁচু পর্বতশ্রেণি হিমালয়, প্রচুর পরিমাণে মাঝারি মাপের পাহাড় ও উপত্যকা, নানা ধরনের আচার-অনুষ্ঠান, দক্ষিণের সমভূমি, জঙ্গল আর বন্য প্রাণি কৌতুহলী মানুষদেরকে আকৃষ্ট করেছে।
তবে এসব সত্ত্বে আধুনিক সময়ের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে দূরে ছিল না নেপাল। কয়েক যুগের ছবি যদি আপনি দেখেন, তাহলে নেপালের অন্য এক চিত্র দেখতে পাবেন। ‘নেপাল ইন পিক্স’ নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ের কিছু ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যেখান থেকে আপনি কয়েক যুগ আগের নেপালের জীবন কেমন ছিল, তার একটি ধারনা পাবেন।
আসুন, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা কেমন ছিল, তা দিয়েই শুরু করি। নেপালের পশ্চিমাঞ্চলের লামজুং জেলায় খোলা মাঠে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
Nepali youths giving Lok Sewa Aayog exams on a sunny chaur in Lamjung in 1975. #Nepal pic.twitter.com/0S8hoo8bcE
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 1, 2016
নেপালের তরুণরা রোদের মাঝে বসে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা দিচ্ছে। ১৯৭৫ সালে লামজুং জেলায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
আশির দশকে টেলিভিশন একটি বিরল বস্তু ছিল। ছবিতে দেখা যায়, কাঠমান্ডু ভ্যালিতে তরুণরা টেলিভিশন সেট নিয়ে ছবি’র জন্য পোজ দিচ্ছে।
Young Newar men bringing home their first TV, in 1987. #Nepal pic.twitter.com/3GCxe07lwV
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 10, 2016
নেউয়ার পরিবারের ছেলেরা তাদের বাড়িতে প্রথম টেলিভিশন সেট নিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৭ সালের ঘটনা এটি।
ষাটের দশকে কাঠমান্ডু ভ্যালি হিপ্পি সংস্কৃতি দিয়ে বেশ প্রভাবিত ছিল। সেসময়ে হাশিশ আর মারিজুয়ানা বিক্রি বৈধ ছিল। রাস্তাঘাটেই তা মিলতো। এমনকি কাঠমান্ডু দরবার স্কোয়ারের কাছে ফ্রিক স্ট্রিটে পাওয়া যেত।
गाजा र चरेस येहा पाइन्छ | Marijuana was legal in Nepal during 1960's. pic.twitter.com/6NVkVJ0Q3D
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 22, 2016
ষাটের দশকের নেপালে মারিজুয়ানা বৈধ ছিল।
নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেসময়ে কাঠমান্ডুর পার্টিগুলো কেমন হতো। ছবিতে কাঠমান্ডুর তরুণদের ফ্যাশন কেমন ছিল, তাও উঠে এসেছে:
Time to party like it's 1969. #Nepal pic.twitter.com/KV3YLAKq9D
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 21, 2016
১৯৬৯ সালের একটি পার্টির চিত্র।
রাজতন্ত্রের সময়কালে রাজা ও রাণীকে আশা’র দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। জনতা রাজাকে এক নজরে দেখার জন্য লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতো।
People waiting for the arrival of the king & queen at Jumla Bazaar in 1978. #Nepal pic.twitter.com/ryyz2P0ROz
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 4, 2016
জুমলা বাজারে রাজা ও রাণী’র আগমনের জন্য জনতা অপেক্ষা করছে। ১৯৭৮ সালের ঘটনা এটি।
নবনির্মিত এই রাস্তা ধরে কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র দরবার স্কোয়ারে যাওয়া যায়। এই রাস্তায় অল্প কিছু গাড়ি চলাফেরা করে।
New Road, Kathmandu 60 years ago. #Nepal pic.twitter.com/u98IQ3mMhM
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 8, 2016
৬০ বছর আগে কাঠমান্ডুর নতুন রাস্তা।
তখন গাড়ি ছিল ধনী ও আভিজাত্যের প্রতীক। সাধারণ মানুষের গাড়ি থাকার ঘটনা বিরল ছিল। নিচের ছবিতে গাড়ি নিয়ে ডিলারদের দেখা যাচ্ছে:
Vintage cars! The Ford car dealer at Lazimpat, Kathmandu in 1930s. #Nepal pic.twitter.com/XL3Ioi6u0G
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 6, 2016
প্রাচীন গাড়ি। ১৯৩০ সালে কাঠমান্ডুর লাজিমপাতে ফোর্ড গাড়ি ও তার ডিলারদের দেখা যাচ্ছে।
একদিকে কাঠমান্ডু ভ্যালি যেমন আধুনিক হচ্ছে, অন্যদিকে দক্ষিণের সমভুমির বনাঞ্চল শিকারী এবং রাজকীয় পরিবারের লোকদের অতিথিশালা হয়ে উঠেছে।নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাজকীয় ব্রিটিশ অতিথিরা বিভিন্ন বন্যপ্রাণি হত্যা করেছে।
King George V with the day's kill in Dec 1911. A total of 39 tigers, 18 rhinoceroses & 4 bears were killed. #Nepal pic.twitter.com/aLjGeBe4jR
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 30, 2016
১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাসে রাজা পঞ্চম জর্জ বেশকিছু বন্যপ্রাণি হত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৩৯টি বাঘ, ১৮টি গন্ডার এবং ৪টি ভালুক রয়েছে।
১৯৫১ সাল পর্যন্ত ১০৪ বছর ধরে রানা বংশ নেপালের শাসন ক্ষমতায় ছিল। তাদের শাসনামলে শাহ বংশের ক্ষমতা হ্রাস পায়। ২০০৮ সালে শাহ রাজত্বের সমাপ্তি ঘটে। নিচের ছবিতে প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমসের জং বাহাদুর রানা-কে তার ভাইদের সাথে দেখা যাচ্ছে।
Prime Minister Chandra Sumsher & his brothers at Singha Durbar – 1902 pic.twitter.com/Z9OnTQZEPg
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 12, 2016
স্নিগ্ধা দরবারে প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শমসের এবং তার ভাইদের দেখা যাচ্ছে। ১৯০২ সালের ছবি এটি।
মাত্র ৪০ বছর আগেও বাগমাটি নদী এবং এর তীর পরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধমুক্ত ছিল। আর আজকে তার পুরো উল্টো চেহারা।
46yrs ago! Ghats along the Bagmati river, Kathmandu in 1969. #Nepal (by Douglas Hall) pic.twitter.com/CXP6SlRSkD
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 24, 2016
৪৬ বছর আগে! বাগমাটি নদী ও তীরবর্তী এলাকা। কাঠমান্ডু, ১৯৬৯।
আজকে বুদ্ধনাথ মন্দিরের চারপাশে বড় বড় ভবন। তবে একসময় এটি ছিল ঘুরে ঘুরে প্রার্থনা ও ধ্যান করার চমৎকার জায়গা।
The Boudhanath stupa, Kathmandu #Nepal in 1950s. (by William Morris) pic.twitter.com/nXOOyqAYCF
— Nepal In Pix (@NepalInPix) February 3, 2016
১৯৫০ সালে কাঠমান্ডুর বুদ্ধনাথ মন্দির। ছবি তুলেছেন উইলিয়াম মরিস।
পৃথিবীর সব দেশের পতাকা চতুর্ভুজের মতো হলেও নেপালের পতাকা চতুর্ভুজাকৃতি নয়। দেখুন আগে নেপালের পতাকা কেমন ছিল।
Nepali National Flag before 1962 pic.twitter.com/mMgWxXciRg
— Nepal In Pix (@NepalInPix) May 13, 2016
১৯৬২ সালের আগের নেপালের জাতীয় পতাকা।
ডাকটিকেট সংগ্রহকারীদের কাছে নেপালের ডাকটিকেট খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে নেপালের প্রথম ডাকটিকেট খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
The first stamps of Nepal on cover, 1881. pic.twitter.com/ciCRhaL4rZ
— Nepal In Pix (@NepalInPix) March 19, 2016
নেপালের প্রথম ডাকটিকেট। ১৮৮১ সালের ডাকটিকেট এটি।
ত্রিভুবন আন্তজার্তিক বিমানবন্দর। নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। দেখুন ১৯৫০ সালে বিমানবন্দরটির অবস্থা কেমন ছিল।
Tribhuvan International Airport during it's beginning in 1950's pic.twitter.com/0wiV0DJVzN
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 13, 2016
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ১৯৫০ সালে বিমানবন্দরটির শুরুর দিকের ছবি।
শুধু বিমানবন্দরই নয়, রাস্তাঘাটও তখন তৈরি হচ্ছিল মাত্র। তখনকার বাসযাত্রা কেমন ছিল, তা এই ছবি দেখে বুঝতে পারবেন।
Travelling in #Nepal 1950s pic.twitter.com/EXE1xObMd6
— Nepal In Pix (@NepalInPix) March 9, 2016
১৯৫০-এর দশকে বাসযাত্রার চিত্র।
আজ থেকে ৩০ বছর আগের কাঠমান্ডু ভ্যালির ভক্তপুরের ছবি এটি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন লোক খরপানে করে তার সন্তানকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণত এটা সবজি এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহনে ব্যবহার করা হয়।
Man carrying his child (Kamal Binayak, Bhaktapur 1985AD) pic.twitter.com/Kew7uJSPTM
— Nepal In Pix (@NepalInPix) April 20, 2016
একজন লোক তার বাচ্চাকে খরপানে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে অনেক দেরিতে চালু হয়েছিল। তবে রোপওয়ে নির্মাণে নেপাল ছিল নেতৃত্বস্থানীয়। নিচের ছবিতে হেতাওদা-কাঠমান্ডু রোপওয়ে দেখা যাচ্ছে। চালু না থাকলেও সেসময়ে এটা ছিল নেপালের জন্য একটি মাইলফলক।
Steel tramway cuts out 67 miles of Nepalese peaks and jungles. [Hetauda – Kathmandu Ropeway 1959] #Nepal pic.twitter.com/ZloB1a7adh
— Nepal Pix (@NepalPix) February 26, 2014
পর্বত আর জঙ্গল কেটে ৬৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ইস্পাত ট্রামওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। হেতাওদা-কাঠমান্ডু রোপওয়ে, ১৯৫৯।
আগের দিনের নেপালের চমকপ্রদ সব ছবি দেখতে চাইলে ‘নেপাল ইন পিক্স’ টুইটার অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করতে পারেন।