এই পোস্টের একটি সংস্করণ মেডিয়ামে প্রকাশিত হয়েছে
১৯৯৩ সালে, বিশ্বের সর্বকালের সেরা মুষ্টিযুদ্ধে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলী ইরান সফরে আসেন। ১৯৬৪ সালে তাঁর ইসলাম ধর্ম গ্রহন এবং ঠিক এর পরেই ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদানে অস্বীকার করার কারণে এই মুষ্টিযোদ্ধা আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করেন। এ সকল ঘটনায় তিনি ইরানের জাতীয় বীরে পরিণত হন, একদা যে দেশটিকে তিনি সবচেয়ে সেরা দেশ বলে অভিহিত করেছিলেন।
৩ জুন, ২০১৬ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর ঘটনায়, ইরানের রাষ্ট্র নিমন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা ইরনা (ইসলামিক রিপাবলিক নিউজ এজেন্সি) অনলাইনে এক গুচ্ছ ছবি প্রকাশ করে। এ সকল ছবি বিশ্ব হেভিওয়েট মুষ্টিযুদ্ধে তিনবার চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ আলীর ১৯৯৩ সালে ইরান সফরের সময় তোলা।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের খেতাবধারী এই মুষ্টিযোদ্ধার সে ভ্রমণ ছিল মানবিক কারণে। তিনি ইরান-ইরাক যুদ্ধের ঘটনায় উভয় দেশে যুদ্ধবন্দী হয়ে থাকা সেনাদের মুক্তির প্রচেষ্টায় একই সাথে ইরান এবং ইরাক ভ্রমণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে উভয় দেশ এমন এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যা আট বছর ব্যাপি দীর্ঘস্থায়ী হয়, এই ঘটনার পরেও বছরের পর বছর ধরে উভয় দেশে অনেকে সেনা যুদ্ধবন্দী হিসেবে থেকে যায়।
এই সকল ছবিতে দেখা যাচ্ছে আলী অনেক ধর্মীয় স্থান ভ্রমণ করছেন এবং তিনি ইরানের অনেক সরকারি কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করছেন।
Muhammad Ali at the Tehran International Book Fair in 1993. He went to Iran & Iraq to help in the release of POWs. pic.twitter.com/IUnCuAvfuG
— Hanif Zarrabi-K. (@hanifzk) June 4, 2016
১৯৯৩ সালে তেহরানের আন্তর্জাতিক বই মেলায় মোহাম্মদ আলী। তিনি ইরান এবং ইরাকে এসেছিলেন উভয় দেশের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে সাহায্য করার লক্ষ্যে।
Another shot of Muhammad Ali at Tehran International Book Fair. He went 2 Iran & Iraq to help in the release of POWs pic.twitter.com/tDb6ilm388
— Hanif Zarrabi-K. (@hanifzk) June 4, 2016
তেহরানের আন্তর্জাতিক বই মেলায় উপস্থিত মোহাম্মদ আলীর আরেকটি ছবি। তিনি ইরান ও ইরাকে এসেছিলেন উভয় দেশের যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির সহায়তায় ।
Muhammad Ali w/Iran's most notorious pre-Rev strongman/street tough, Shaban (Bimokh) Jafari AKA “the brainless.” pic.twitter.com/fP57bfbyq5
— Hanif Zarrabi-K. (@hanifzk) June 4, 2016
ইরানের বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের সবচেয়ে নামকরা রাস্তার রাজা/ রাস্তার সবচেয়ে শক্তিমান হিসেবে পরিচিত শাবান (বিমোকোহ) জাফারী ওরফে মগজহীনের সাথে মোহাম্মদ আলী
১৯৯৩ সালের এই ইরান ভ্রমণ মোহাম্মদ আলীর প্রথম ইরান সফর ছিল না। তিনি ১৯৭০-এর দশকে ইরানের সর্বশেষ শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলবীর শাসনের সময়ও একবার ইরান ভ্রমণ করেছিলেন।
১৯৯৩ সালের আলী এই মানবিক উদ্দেশ্য ইরান ভ্রমণ ছাড়াও আরো একবার মানবিক উদ্দেশ্যে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। সাংবাদিক জাসন রেজাইয়ান-এর মুক্তির স্বপক্ষে তিনি ইরান সরকারের কাছে একটি চিঠি লেখেন। রেজাইয়ান আড়াই বছরের মত ইরানে কারাগারে বন্দী ছিলেন।
আলীর মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ করে রেজাইয়ান ওয়াশিংটন পোস্টে লেখা তাঁর এক প্রবন্ধে এই মহান মুষ্টিযোদ্ধাকে স্মরণ করেছেন:
মোহাম্মদ আলীর জীবন এবং কর্ম দ্বারা পৃথিবীতে যে সকল কোটি কোটি মানুষ প্রভাবিত হয়েছে, আমি আক্ষরিক অর্থে তাদের মধ্যে একজন।
১৪ মার্চ, ২০১৫ সালে যখন আমার স্ত্রী এভিন কারাগারে আমাকে দেখতে আসে, তখন তাঁর মুখে আমি যে হাসি দেখতে পাই তা আমি আটমাস পূর্বে আমার গ্রেফতার হবার পর আর দেখিনি।
এক হাসি মাখা মুখে সে বলল, তোমার মুক্তির আহ্বান জানিয়ে মোহাম্মদ আলী এক বিবৃতি প্রদান করেছে।
মার্চ ২০১৫ তারিখে আলী তাঁর এই আশাবাদ টুইট করেন যে রেজাইয়ানকে হয়ত শীঘ্রই মুক্তি দেওয়া হবে।
It is my hope that the government of Iran will end the prolonged detention of Jason Rezaian. #FreeJason#AliTweethttp://t.co/g4b3luXzOr
— Muhammad Ali (@MuhammadAli) March 12, 2015
আমি আশাবাদী যে ইরান সরকার দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে আটক জাসন রেজাইয়ানকে মুক্তি দেবে।
যখন প্রায় এক বছর পরে রেজাইয়ানকে মুক্তি প্রদান করা হয় তখন আলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেজাইয়ান এক টুইট করেন।
So thankful to people around the world for supporting efforts to #freejason. Most of all 2 @MuhammadAli, because he's The Champ @RealALI_me
— Jason Rezaian (@jrezaian) February 14, 2016
সারা বিশ্ব জুড়ে আমার (জাসনের) মুক্তি প্রচেষ্টায় যারা সমর্থন জুগিয়েছেন সেই সমস্ত ব্যক্তি বিশেষ করে মোহাম্মদ আলীকে ধন্যবাদ, কারণ আমার চোখে তিনি ছিলেন এক সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন
যে শক্তি আপনার মাঝে বিরজিত ছিল সেই শক্তি নিয়ে সমাহিত হোন, আলী।