- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ডায়াবেটিসের ভয়ে সিঙ্গাপুরে ভাত কম খাওয়ার আহ্বান

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, সিঙ্গাপুর, খাদ্য, নাগরিক মাধ্যম, স্বাস্থ্য
A bowl of white rice in a restaurant in Singapore. Photo by Charles Haynes. Source: Flickr, CC License [1]

সিঙ্গাপুরের খাবার হোটেলে ভাতের বাটি। ছবি তুলেছেন চার্লস হাইনেস। ছবিসূত্র: ফ্লিকার। সিসি লাইসেন্সের আওতায় প্রকাশিত।

সিঙ্গাপুরের হেলথ প্রমোশন বোর্ড (এইচপিবি) দেশটির সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর জাতের চালের ভাত খাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি দাবি করেছে, সাদা ভাত চিনিযুক্ত পানীয়ের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। সাদা ভাত থেকে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

সিঙ্গাপুরে প্রধান খাবার হচ্ছে ভাত। শুধু সিঙ্গাপুর নয়, এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। সিঙ্গাপুরের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ গড় মাত্রায় ক্যালরি খেয়ে থাকেন। অন্যদিকে একটি চিনিযুক্ত পানীয়ের ক্যান বোতলে ৩.৫ শতাংশ ক্যালরি থাকে।

দ্য স্ট্রেইট টাইমস মে মাসের ৬ তারিখে এইচপিবি’র বক্তব্য নিয়ে একটি প্রতিবেদন [2] প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের সাথে একটি ইনফোগ্রাফও প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয়, এক বোতল কোমল পানীয়ের চেয়ে এক বাটি সাদা ভাতে দ্বিগুণ পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।

সংবাদ প্রকাশের পর এটি নিয়ে অনলাইনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই চিনি, অস্বাস্থ্যকর ড্রিংকস, প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে ভাতের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য এইচপিবি’র সমালোচনা করেন। অনেকে ‘ভাত খেলে ডায়াবেটিস হয়’ এমন বিভ্রান্তিকর সংবাদেরও সমালোচনা [3] করেন। কেননা, হাজার হাজার বছর ধরে এশিয়ার দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ ভাত খেয়ে জীবন-ধারণ করছেন।

লেখক রিচার্ড সেহ একই প্রশ্ন উত্থাপন [4] করেছেন:

Rice and other grains have been eaten by humans as their main food for over 10,000 years.

It was only after the Industrial Revolution less than 300 years ago that sugar became more affordable and entered the mainstream diet. And only in the last 50 years or so that sugar consumption rose sharply.

So throughout most of human history, average sugar consumption was near zero. In modern societies today, sugar consumption is as high as 70 kg per person per year. This sharp rise in sugar consumption – along with a rise in the consumption of food chemicals and artificial foods – corresponds with the rise in modern degenerative diseases.

To say that rice is worse than sugar is simply ludicrous.

গত ১০ হাজার বছর ধরে মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত ও অন্যান্য শস্য। নিয়মিতভাবেই তারা খেয়ে আসছে।

আর চিনি খাওয়া শুরু হয়েছে মাত্র ৩০০ বছর আগে, শিল্প বিপ্লবের পরে। কারণ শিল্প বিপ্লবের পরে চিনির দাম অনেক কমে যায়, এবং এটা আমাদের খাবারের একটি অন্যতম অংশ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়। আর গত ৫০ বছরে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

তাই মানব জাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গড়ে চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ প্রায় শূন্য। বর্তমানে আধুনিক সময়ে এসে বছরে একজন ব্যক্তির চিনি খাওয়ার পরিমাণ ৭০ কেজি। চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রাসায়নিক ও কৃত্রিম উপাদানযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ডিজেনারেটিভ অসুখের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

তাই চিনিযুক্ত খাবারের চেয়ে ভাত বেশি ক্ষতিকর বলা হাস্যকর।

রং চড়ানো শিরোনাম আর বিভ্রান্তিকর ইনফোগ্রাফ প্রকাশের সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক ইয়ান ট্যান। তিনি এ ধরনের কাজকে দায়িত্ব জ্ঞানহীন বলে উল্লেখ [5] করেছেন:

Now that there is news or talk that rice is bad for you, many people will just go to the extreme and stop eating rice. Then when their health goes awry, they blame everything but their hysteria, ignorance and inability to think or research for themselves.

Don’t even start considering such silly ideas like substituting soft drinks for rice, despite what a newspaper infographic may imply. You will just get fatter and dead faster than you’ve ever feared.

এখন খবরে বলা হচ্ছে, ভাত খাওয়া আমাদের জন্য ভালো না। এই খবর পড়ে অনেকেই ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিবে। পরে তাদের স্বাস্থ্য যখন খারাপ হবে, তারা সবকিছু নিয়ে অভিযোগ করবে। তাদের হিস্টিরিয়া, অজ্ঞতা ও অক্ষমতা নিয়ে কিংবা তাদের নিজেদের নিয়েই গবেষণা করতে হবে।

দয়া করে কেউ ভাতের পরিবর্তে সফট ড্রিংকস খাওয়া শুরু করার কথা বিবেচনা করবেন না। সংবাদপত্রগুলো ইনফোগ্রাফিকস প্রকাশের মাধ্যমে এমনটাই চাইছে। তা করলে আপনি যতটা ভয় পাচ্ছেন, তার চেয়ে আরো দ্রুত মোটা হবেন, এমনকি মারা যেতে পারেন।

অনলাইনে ভাত বনাম চিনি নিয়ে বিতর্ক ওঠায় এইচপিবি তাদের বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা [6] দিয়েছে। সেখানে জানিয়েছে, তারা মানুষকে ভাত খাওয়া বন্ধ করতে বলেননি। আবার শুধু ভাত খাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস হয়, এমন কথাও বলেননি। তারা জনগণকে বলেছেন সাদা ভাত কম খেতে। কারণ, এতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। এইচপিবি পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে ব্রাউন চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ [7] দিয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বাদামী চালের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ [8] করেছেন, যা দরিদ্র মানুষদের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।