- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কাজাখস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেখিয়েছে কীভাবে অস্ত্রে সজ্জিত নারীরা কাল পরিক্রমায় রূপান্তরিত হয়েছে

বিষয়বস্তু: মধ্য এশিয়া-ককেশাস, কাজাখস্তান, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, লিঙ্গ ও নারী
কাজাখ নারী: জাতির প্রতিরক্ষাকর্মী। কাজাখ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইউটিউব ভিডিও চ্যানেল থেকে স্ক্রিনশটটি নেওয়া হয়েছে।

কাজাখ নারী: জাতির প্রতিরক্ষাকর্মী। কাজাখ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইউটিউব ভিডিও চ্যানেল থেকে স্ক্রিনশটটি নেওয়া হয়েছে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বত্র আসন্ন বিজয় দিবসের ছুটির প্রাক্বালে এবং আপাতদৃষ্টিতে সেনাবাহিনীতে আরো নারী সৈনিক নিয়োগ করার জন্যে আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা হিসেবে কাজাখস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় একটি ইউটিউব ভিডিও প্রকাশ করেছে। এটাতে দেখানো হয়েছে কিভাবে মধ্য এশিয় দেশের নারী যোদ্ধারা গত ৫৫০ বছর ধরে পরিবর্তিত হয়েছে ।

তবে শুধু ৫৫০ বছর কেন?

সাম্প্রতিক কালে কাজাখস্তান সরকার কাজাখ খানাট [1] নামের মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে আসছে যে এটি আধুনিক দিনের কাজাখস্তানের জন্য ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছে।

একাডেমিক বৃত্তের বাইরে কাজাখ খানাট এর খুব একটা উল্লেখ করা হয়না। যদিও রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিনের করা মন্তব্য “কাযাখ সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়ার পূর্বেও একটি রাষ্ট্র ছিল না” এর জের ধরেই একটি রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

২০১৪ সালে ইউক্রেন সঙ্কটের জের ধরে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় চলমান উত্তেজনার সময় উক্ত মন্তব্য করা হয়েছিল। পরবর্তী বছর কাজাখস্তান সরকার যাযাবর ইতিহাসের সাক্ষী কাজাখ খানাট রাজ্যের ৫৫০ বছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিক ভাবে উদযাপন করেছে।

আক্রমণাত্মক জনসংযোগ

বর্তমান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইমাঙ্গালি তাসমাগামভেতভ [2] আপাতদৃষ্টিতে এই বিষয়কে তুলে ধরছেন সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণে উদবুদ্ধ করার জন্য বলে ধারনা করা হচ্ছে।

তাসমাগামভেতভ, যাকে ৭৫ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নাজারবায়েভ এর উত্তরসূরি হিসেবে ধরা হয়, এই উচ্চপদে উন্নীত হয়েছেন সফলতার সাথে কাজাখস্তানের দুই বৃহত্তম শহর আলমাটি এবং আস্তানার মেয়র হিসেবে কাজ করার পর। বোঝা যাচ্ছে, তিনি জনগণের দৃষ্টিতে থাকতে চাচ্ছেন।

গত বছর এই মন্ত্রী ইন্টারনেটে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন ‘মিস আর্মি’ [3] প্রতিযোগিতার জন্য, যেখানে সশস্ত্র বাহিনিতে সব বয়সের এবং শ্রেণী/অবস্থানের কাজাখ নারীর ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়। এটির মধ্যে দিয়ে মূলতঃ আরো বেশি নারী ও পুরুষদের সশস্ত্র বাহিনীতে নিবন্ধনের জন্য আগ্রহী করে তোলা হয়।

মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রচারণা মনে করিয়ে দিচ্ছে ইন্টারনেটে জনপ্রিয় হওয়া ‘সৌন্দর্যের ১০০বছর’ ধারাবাহিক পর্ব, যেখানে বিভিন্ন দেশ জুড়ে মহিলাদের ফ্যাশন পরিবর্তনকে তুলে ধরা হয়েছে। সেই আদলেই এটি বানানো হয়েছে।

পুরুষায়িত ছুটি

কাজাখস্তানের সেনাবাহিনীতে কর্মরত [4] প্রায় ৮০০০ নারীর উপর মন্ত্রণালয়ের এই মনোভাব অনেকের দ্বারাই প্রশংসিত হয়েছে।

এশিয়ার এবং বৃহত্তর প্রাক্তন সোভিয়েত অঞ্চলের নারীবাদিরা প্রায়ই অভিযোগ করেন যেমন মে মাসে ‘বিজয় দিবস’ এবং ফেব্রুয়ারীতে “পিতৃভূমি রক্ষাকর্মীদের” ছুটির দিনকে মাত্রাতিরিক্তভাবেই পুরুষায়িত করা হয়। এসব উৎসবে নারীর প্রতি প্রচলিত নেতিবাচক লৈঙ্গিক ভাবনার বাইরে কিছু করা হয়না এবং অঞ্চলের ইতিহাসে নারীর অবদানকে ছোটো করে দেখানো হয়।

তবে মন্ত্রণালয়ের প্রচারিত ভিডিওতে শুধু একটি জাতিগোষ্ঠীর কাজাখ নারীকে বীরাঙ্গনা হিসেবে তুলে ধরায় অন্য জাতিগোষ্ঠীদের ভুমিকাকে উপেক্ষা করা হয়। বিংশ শতাব্দীতে যখন কাজাখস্তান সোভিয়েতের অংশ ছিল (এবং বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়), তখন বহুজাতিক এই দেশ রক্ষায় সব জাতিগোষ্ঠীর সৈনিকদেরই অবদান ছিল।