ছবিঃ ফিলিপাইনসে চালের দাবীতে বিক্ষোভরত কৃষকদের পুলিশ নির্মম ভাবে ছত্রভঙ্গ করেছে

Police and farmers face off a day before the dispersal of the protest. Source: Kilab Multimedia / Facebook

বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার আগে একদিন পুলিশ এবং কৃষকেরা পরস্পরের মুখোমুখিঃ ছবি কিলাব মাল্টিমিডিয়ার ফেসবুক পাতা থেকে নেওয়া।

ফিলিপাইনসের দক্ষিণে অবস্থিত কোটাবাটো প্রদেশে চাল এবং খাবারের দাবীতে আন্দোলনরত কৃষকদের স্থাপন করা এক প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দেওয়ার সময় দুজন ব্যক্তি নিহত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়ে যায়।

গত বছর, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দেন যে এল নিনো নামক জলবায়ু পরিবর্তনের মত ঘটনার প্রভাবে ফিলিপাইনসের অনেক জায়গায় প্রচণ্ড খরা দেখা দিতে পারে। তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানায় যেন সরকার কৃষকদের এবং দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যে যারা নাজুক পরিস্থিতিতে রয়েছে তাদের দুর্দশা প্রশমনে প্রস্তুত থাকে এবং তা লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করে যাতে তাদের সাহায্য করে।

এল নিনোর কারণে ইতোমধ্যে ভূমির উপরিভাগের স্তর শুকিয়ে আসছে, যার কারণে অনেক কৃষক বিক্রি করার মত যথেষ্ট শস্য উৎপাদন করতে পারছে না। গ্রামীণ এলাকায় আনহারের ঘটনার পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে

উত্তর কোটাবাটো হচ্ছে এমন এক প্রদেশ যেখানে এল নিনোর প্রভাব সবচেয়ে বেশী। এখানকার প্রাদেশিক সরকার ইতোমধ্যে এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে প্রদেশটিকে খরা পিড়িত এক বিপর্যস্ত প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা প্রদান করেছে, যার ফলে প্রদেশটি এখন বিপর্যয় ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থ এবং জাতীয় সরকারের কাছ থেকে অন্যান্য সহয়তা পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

এই ঘটনার দুই মাস পরে প্রদেশের কৃষকেরা অভিযোগ করা শুরু করে যে তারা তাদের স্থানীয় সরকারের কাছ থেকে রেশন হিসেবে চাল পাচ্ছে না এবং ভূর্তকি হিসেবে প্রাপ্ত অন্যান্য খাদ্য এখনো তাদের হাতে এসে পৌছায়নি। ২৮ মার্চ তারিখে, প্রদেশের ৫০০০ কৃষক প্রধান মহাসড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের ক্ষোভজনিত কর্মকাণ্ড তুলে ধরে। তারা প্রতিজ্ঞা করে যতক্ষণ পর্যন্ত না সরকার তাদের এলাকায় ১৫,০০০ বস্তা চাল সরবরাহ করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা একসাথে থাকাবে এবং সড়কে এক প্রতিবন্ধকতা দিয়ে রাখাবে। টিকে থাকার এবং যন্ত্রণার উপশম করার জন্য তারা অতিসত্বর ত্রাণ পুর্নবাসন তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ কৃষকদের মাঝে বন্টন করার দাবী জানায়।

বিক্ষোভ প্রদর্শন বন্ধ করার জন্য কৃষকদের প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর সরকার ১ এপ্রিলে পুলিশকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলার, বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার, এবং এই দলের নেতাদের গ্রেফতার করার আদেশ প্রদান করে। এই ঘটনায় যে সহিংসতার সৃষ্টি হয় তার ফলে দুজন কৃষক নিহত হয়। প্রাথমিক হিসেবে জানা গেছে যে ১১৬ জন আহত হয়েছে এদিকে ৮৭ জন নিখোঁজ। যে সমস্ত ব্যক্তি নিখোঁজ ছিল, পরে দেখা হয়েছিল গেছে যে তাদের অনেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।

#বিঘাসহিন্দিবালা (বুলেট নয় চাল চাই) নামক হ্যাশট্যাগটি আলোচিত ধারায় পরিণত হয় যখন নেট নাগরিকেরা সক্রিয় ভাবে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে শুরু করে। এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার সময় বন্দুক ব্যবহার করার জন্য পুলিশের সমালোচনা করা হচ্ছে কারণ এতে আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করছে কেন সরকার সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে যেখানে ক্ষুধার্থ কৃষকেরা কেবল খাবারের দাবীতে বিক্ষোভ করছিল।

#বিঘাসহিন্দিবালা (বুলেট নয় চাল চাই) নামক হ্যাশট্যাগটি আলোচিত ধারায় পরিণত হয় যখন নেট নাগরিকেরা সক্রিয় ভাবে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে শুরু করে। এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার সময় বন্দুক ব্যবহার করার জন্য পুলিশের সমালোচনা করা হচ্ছে কারণ এর মাধ্যমে আইন ভঙ্গ করা হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন করছে কেন সরকার সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে যেখানে ক্ষুধার্থ কৃষকেরা কেবল খাবারের দাবীতে বিক্ষোভ করছিল।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ বলছে বিক্ষোভকারীরা অবৈধ ভাবে রাস্তা দখল করে ছিল এবং নাগরিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছিল। পুলিশ সেই সাথে আরো যোগ করে যে তারা কেবল উচ্ছৃঙ্খল বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার উদ্দেশ্য এ কাজ করেছে। সরকার সাথে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে যে যথেষ্ট পরিমাণ চাল মজুত রয়েছে তবে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই চাল পেতে হলে তাদের বেশ কিছু নিয়ম মেনে তা করতে হবে।

যখন সরকার কৃষকদের দাবীকে প্রত্যাখান করেছে, সে সময় ত্রাণ হিসেবে দানের জন্য চাল সংগ্রহের এক আন্দোলন শুরু হয়েছে, যা অনেকে ব্যক্তি, দল এবং প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহিত করছে বিক্ষোভরত কৃষকদের সাহায্য করতে।

১ এপ্রিলে এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার পর, এখন পর্যন্ত দেশটির রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি। কিন্তু তার অধস্তন কর্মকর্তারা ঘোষণা প্রদান করেছে যে এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে, তবে একই সাথে তারা প্রকাশ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে যে উত্তেজিত বামপন্থীরা কৃষকদের বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করতে পারে।

এসত্বেও, এ সকল অজস্র প্রশ্নের কোন উত্তর নেইঃ তবে নিছক সরকারের কাছে খাবারের দাবী করা কৃষকদের গুলি করা কি ঠিক?

A dry field in North Cotabato. Source: Tudla Productions / Facebook

নর্থ কোটাবোটা অঞ্চলের এক পুড়ে যাওয়া মাঠ। সুত্রঃ টুডলা প্রোডাকশন/ ফেসবুক

Police opened fire on protesters which killed two farmers. Firetrucks were also deployed to dismantle the protest. Source: Kilab Multimedia / Facebook

পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালিয়েছে, যার ফলে দুজন কৃষক নিহত হয়েছে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করার জন্য জল কামানের গাড়ি রাস্তায় চলে আসেঃ সূত্র কিলাব মাল্টিমিডিয়া/ ফেসবুকের।

After the dispersal of the protest, farmers sought refuge in the compound of the United Methodist Church. Source: Kilab Multimedia / Facebook

বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর, কৃষকেরা ইউনাইটেড মেথোডিষ্ট চার্চের ভেতরে আশ্রয় অনুসন্ধান করছে। সূত্র কিলাব মাল্টিমিডিয়া/ফেসবুক।

Rice donation started to arrive for the farmers who were dispersed in North Cotabato. Source: Kilab Multimedia / Facebook

নর্থ কোটবাটো এলাকায় যে সমস্ত কৃষক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে তাদের জন্য সাহায্য হিসেবে চাল আসা শুরু হয়েছে। সুত্রঃ কিলাব মাল্টিমিডিয়া/ফেসবুক।

Workers in Manila held a protest in front of the national police headquarters to condemn the violent dismantling of protests in Kidapawan. Source: Kilusang Mayo Uno (May First Movement) / Facebook

ম্যানিলার শ্রমিকেরা কিদাপাওয়ানের বিক্ষোভ নির্মমভাবে ছত্রভঙ্গ করার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর জন্য জাতীয় পুলিশ হেড কোয়ার্টারের সামনে দাঁড়িয়ে একটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। সুত্রঃ পয়লা মের আন্দোলন/ফেসবুক

An artist depicts how police attacked protesting farmers in Kidapawan. The placard reads 'Justice for the farmers of Kidapawan'. Source: Karlo Mongaya / Facebook

কিদাপাওয়ান এর কৃষকদের বিক্ষোভের উপর পুলিশের হামলার চিত্র এক শিল্পী অঙ্কন করেছে। এই ব্যানারে লেখা আছে “কিদোপাওয়ান–এর কৃষকের জন্য ন্যায় বিচার”, সূত্র কার্লো মঙ্গোয়া/ ফেসবুক।

Activists held a protest in front of the Philippine Consulate in San Francisco, California in the United States to show support to the Kidapawan farmers. Source: Megan Zapanta / Facebook

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফান্সিসকোতে অবস্থিত ফিলিপাইন দূতাবাসের সামনে একটিভিস্টরা কিদাপাওয়ানের কৃষকদের সমর্থনে এক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সূত্র মেগান জাপানাতা/ ফেসবুক।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .