সেনাবাহিনীর প্রাক্তন মেজর, বর্তমানে কাজ করেন দেশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স-এ। গোয়েন্দা মিশনে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ান তিনি। তার একটি সাংকেতিক নামও আছে। নারীদের সাথে তার খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্ক, তবে কাউকেই বাঁধনে জড়ান না।
চরিত্রটি চেনা চেনা মনে হচ্ছে আপনার? না, ইনি জেমস বন্ড নন। ইনি হলেন মাসুদ রানা। তার কোড নেম এমআর-নাইন। বাংলা সাহিত্যে যে কয়টি গোয়েন্দা চরিত্র আছে, তারমধ্যে সবচে’ জনপ্রিয় হলো মাসুদ রানা। এ বছরের মে মাসে চরিত্রটি ৫০ বছরে পা দিয়েছে।

মাসুদ রানা সিরিজের চরিত্রের স্রষ্টা ও লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন। ছবি তুলেছেন হুমায়রা আহমেদ। স্বত্ত্ব: উইকিমিডিয়া কমন্স সিসি বিওয়াই-এসএ ৩.০
মাসুদ রানা ১৯৬৬ সালে ‘ধ্বংস পাহাড়’ নামের একটি বইয়ের মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সুলেখক কাজী আনোয়ার হোসেন এই চরিত্রের স্রষ্টা। মাসুদ রানা চরিত্রটিকে বৃটিশ লেখক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রটির বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাসুদ রানা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কাল্পনিক গোয়েন্দা বিশ্বে রাজত্ব করে যাচ্ছে। সত্তর ও আশির দশকে চরিত্রটি সাংস্কৃতিক আইকন হয়ে উঠেছিল। এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক বই লেখা হয়েছে।
অনেকের মতে মাসুদ রানা সিরিজ লিখতে গিয়ে তিনি সমসাময়িক জনপ্রিয় পশ্চিমা স্পাই থ্রিলার থেকে নানা কিছু ধার নিয়েছেন। তবে ভিডিও গেইমস, ক্যাবল টিভি, ইন্টারনেট যুগের আগে এটিই বাংলাভাষী তরুণদের মনের খোরাক মিটিয়েছে।
রানা চরিত্রটি নিয়ে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সিনেমা ও নাটক নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশে পাঠকদের কাছে মাসুদ রানা সিরিজ কতোটা জনপ্রিয়, তা স্পষ্ট হয়েছে তাসদিক আওরঙ্গজেবের এই কমেন্টে:
সেই সময় আমার হাতে তেমন একটা পয়সা থাকত না। এক একটা বই যোগাড় করতে কি যে কষ্ট করতে হত তা লিখে বোঝাতে পারব না। এক একটা বই কেনার জন্য ১৫ থেকে ২০ দিন না খেয়ে টিফিনের পয়সা বাঁচাতে হত। রিকশা ভাড়ার পয়সা বাঁচানোর জন্য মাইলের পর মেইল হেটে পারি দিতাম। আহ কি অদ্ভুত সব কষ্ট-মাখা আনন্দের দিন গেছে সেই সময়!
বাংলাদেশে মাসুদ রানা সিরিজের বেশিরভাগ পাঠকই টিনেজ, অতি তরুণ। তবে পরিণত বয়সের পাঠকদের কাছেও কিন্তু এর আবেদন কমেনি। মোরশেদ আলম বাদল লিখেছেন:
কৈশোর পেরিয়ে যৌবন । যৌবন পেরিয়ে প্রৌঢ়। আজও মাসুদ রানা সমান ভাবে টানে। সেই স্কুল বয়সের কিশোর ছেলেটির মত।
মাসুদ রানা বাঙালি পাঠককে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, তা উঠে এসেছে রাত-প্রহরীর মন্তব্যে:
দীর্ঘদিন মাসুদ রানা পড়ে মনে হতো আমাকে কোথাও কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমি ঠিকই উতরে যাবো। তা পাঁচতারা হোটেলের রিসেপশন হোক, বিলাসবহুল জাহাজ এর ক্যাপ্টেন হোক আর উড়োজাহাজ এর পাইলট হোক যে কোন পরিবেশ সামলাতে পারবো আমি। কিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে হয়, কিভাবে প্যারাস্যুট জড়িয়ে প্লেন থেকে লাফাতে হয়, কিভাবে স্কুবা ডাইভিং করতে হয় এসব যেন মাসুদ রানার মাধ্যমে আমাকে শিখিয়েছেন আমাদের কাজী'দা।
মাসুদ রানা সিরিজটি সাধারণ বাঙালি পাঠকের ঘরে যে একেবারে সাদরে গ্রহণ করা হয়েছে, তা কিন্তু নয়। ষাট দশকের শুরুতে মাসুদ রানা সিরিজের বইয়ে উল্লেখিত নর-নারীর বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতাশ্রয়ী সম্পর্কের বিবরণ পাঠকসমাজকে কিছুটা হলেও থমকে দিয়েছিলো। যারা এ সকল পেপারব্যাক বই পড়তো, তাদেরকেও খারাপ নজরে দেখা হতো।
যদিও মাসুদ রানা’র পাঠকরা অবশ্য এইসব অভিযোগ পাত্তা দিতে নারাজ। উল্টো তারা সিরিজটির প্রশংসা করেছেন। ফেইসবুকে মাসুদ রানা পেইজটিতে ভক্ত’রা রানা সিরিজ পড়ার মধুর স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। সত্যম হালদার লিখেছেন:
আমি জানি এখনকার ছেলেমেয়েরা আর রানা পড়ে না, তারা (আমেরিকান লেখক) সিডনী শেলডন নাইলে রর্বাট লুডলাম পড়ে। আমি জানি রানার বই সাহিত্য পন্ডিত দের কাছে একদম অখাদ্য। কিন্তু আমার মত যারা 90″s কিড তাদের কাছে এখনো রানা আর কাজীদা এক মহাপুরুষের নাম। আমি কৃতজ্ঞ রানা আর কাজীদার কাছে যারা বিনা পাসপোর্টে আমাকে দুনিয়ার রং রুপ চিনে নিতে শিখিয়েছেন।
2 টি মন্তব্য