জাপানের হলদে ধূলিকণা আপনার ত্বকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে

yellowdust

হলদে ধূলিকণা থেকে সাবধান। ছবি সম্পাদনা কেভিন রথরক।

পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বসন্তের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে আসে হলদে ধূলিকণা। এ সময়ে তীব্র পশ্চিমা বায়ু মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভুমি এবং চীনের শুষ্ক মালভূমি থেকে বালি এবং ধূলিকণা বয়ে নিয়ে যায়।

হলদে ধূলিকণা ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৫ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ২.৫ মাত্রার (বায়ু দূষণের পরিমাপ) সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মানুষকে কারণ ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এতে শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। কারো যদি বাইরে যাওয়ার দরকার হয়, তাকে মাস্ক পরে বাইরে যেতে বলা হয়েছে। জাপানের আবহাওয়া দপ্তর হলদে ধূলিকণার বাইরে সাধারণ সতর্কতা জারি করেছে। হলদে ধূলিকণা খালি চোখে খুব একটা দৃশ্যমান হয় না। তাই গাড়ি চালানোর সময় সাবধানে থাকতে হবে।

পুরো উত্তরপূর্ব এশিয়াজুড়ে হলদে ধূলিকণা পরিবাহিত হয়। কোরিয়ান উপদ্বীপ, জাপান, এমনকি রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যেতেও এটি পরিবাহিত হয়ে থাকে।

জাপানে ঐতিহ্যগতভাবে হলদে ধূলিকণার আগমন ঘটে গাড়ি, জানালা, ঝোলানো জামাকাপড়ের উপরে ময়লার ছাপ ফেলে। ধূলি ধূসরিত বাতাসে এক ধরনের নীলচে বা হলুদে অবস্থার সৃষ্টি করে, এতে করে সূর্যের আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। বায়ুদূষণ কমাতে জাপান গত পঞ্চাশ বছর ধরে কাজ করছে। ফলে জাপানের বায়ুদূষণের হার অনেক কমে গেছে। এমননি টোকিও’র মতো শহরাঞ্চলেও।

বসন্তের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে আসলেও কেউ-ই হলুদ ধূলিকণাকে ভালো ভাবে নেয় না। কারণ, এটি শুধু আকাশকে ঘোলাটে কিংবা সবকিছুর উপর ধূলার পাতলা আবরণই ফেলে না, এটা শরীরের ত্বকে অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে অনেকের বসন্তের দিনগুলি অসুস্থতায় কাটে।

ধূলা আর হলদে বালু মিলে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

আমার গাড়ির উইন্ডশিল্ডে ময়লা জমেছিল। আমি তাই পরিষ্কার করার জন্য উইন্ডশিল্ড উইপার ব্যবহার করি। কিন্তু সবখানে হলদে বালিতে ভরে গেছে। হলদে বালি একটা জঘন্য জিনিস।

নিচের সংবাদ প্রতিবেদনে জাপানের হলদে বালির ছবি উঠে এসেছে। একই সঙ্গে এটা নিয়ে সবার উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে:

উপরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হলদে বালি ধূলিকণার চাইতেও ক্ষুদ্রতম। তাছাড়া এতে দূষিত উপাদানও থাকে বেশি। এর সুক্ষ্ণ কণাগুলো লোমকূপের মধ্যে দিয়ে ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করে। এতে করে ত্বকে জ্বালাপোড়া শুরু হয় ।

Caption

হলদে বালিতে অনেক ধরনের দূষণকারী উপাদান রয়েছে। ছবিটি ত্বকের উপরের অংশের। ২.৫ মাত্রার (বায়ুদূষণের পরিমাপ) ধূলি ও হলদে বালি লোমকূপের মধ্যে দিয়ে ত্বকে প্রবেশ করে। এএনএন-এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। .

টুইটার ব্যবহারকারীরা এ মাসে ব্যস্ত ছিলেন হলদে বালির কারণে সৃষ্ট ত্বকের জ্বালা-পোড়া থেকে বাঁচার টিপস বাতলে দিতে:

গত কয়েকদিনে আমার ত্বকের নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। আমার মনে হয়, হলদে বালির আগমনের কারণে এটা বুঝি হয়েছে?

[…] মনে হয় আমার অ্যালার্জিটা হয়েছে হলদে বালি আর গাড়িঘোড়ার দূষণ থেকে। এটা বোধহয় চোখ, নাক, ত্বক সবখানেই ছড়িয়ে পড়বে। তাই এখনই যত্ন নেয়া শুরু করুন। […]

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ি, শিল্পকারখানা ও অন্যান্য দূষণ থেকে লিভার স্পট এবং ত্বকের ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি হলদে বালি এবং পিএম ২.৫ পার্টিকেলও অ্যালার্জির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

দুষণ নিয়ে জাপানের উদ্বেগ সাম্প্রতিক সময়ের। তবে, বহুদিন ধরেই জাপান ও জাপানি সংস্কৃতিতে হলদে বালির প্রভাব রয়েছে। হলদে বালির আগমন নিয়ে জাপানে একটি শব্দ প্রচলিত রয়েছে: চিবিরু। যদিও শব্দটার মানে নিয়ে একটু অস্পষ্ট ধারনা রয়েছে।

Tsuchifuru

চিবিরু.এএনএন-এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে স্ক্রিনক্যাপ করা হয়েছে।

জাপানের বেশিরভাগ টেলিভিশন দর্শকের কাছে ‘চিবিরু’ খুব একটা পরিচিত শব্দ নয়। ‘চিবিরু’ মানে হলো হলদে বালির আক্রমন। এটি ‘বৃষ্টি’ এবং ‘র‍্যাকুন কুকুর’-এর একটি যৌথ চরিত্রের সম্মিলিত রূপ। জাপানি রূপকথায় এটি এমন একটি প্রাণি, যা দিয়ে নোংরা-ময়লার ফুর্তি উদযাপনকে বুঝিয়ে থাকে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .