- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন ইরাকি অনুবাদক গ্রিসে আটকে রয়েছেন

বিষয়বস্তু: উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরাক, গ্রীস, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সিরিয়া, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, শরণার্থী
Ibrahim Esmael Ibrahim at the train station in Idomeni, Greece. As a teenager, he worked as a translator with the US military in Iraq. Credit: Filip Warwick. Used with PRI's permission

গ্রিসের আইডোমিনি’র একটি রেল স্টেশনের সামনে ইব্রাহিম ইসমাইল ইব্রাহিম। বালক বয়সে তিনি ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর একজন অনুবাদক হিসেবে কাজ করেছেন। ছবি তুলেছেন ফিলিপ ওয়ারউইক। পিআরআই-এর অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

পিআরআইডটকমের [1] জন্য এই প্রতিবেদনটি লিখেছেন জ্যাকব রেসনেক [2]। ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ এটি প্রকাশিত হয়। গ্লোবাল ভয়েসেস-এর সাথে কনটেন্ট শেয়ারিং চুক্তির আওতায় এটি প্রকাশিত হয়েছে।

ছবি’র এই স্মার্ট তরুণটির নাম ইব্রাহিম ইসমাইল ইব্রাহিম। বয়স ২৬ বছর। বাড়ি ইরাকের বাগদাদে। আমার সাথে তার যখন দেখা হয়, তখন সে গ্রিসের আইডোমিনি’র একটি রেল স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়েছিল। যদিও সেটা কোনো ট্রেন ছাড়ার সময় ছিল না। ইব্রাহিম খুব ভালো ইংরেজি বলতে পারে। বালক বয়সেই সে গ্লোবাল লিঙ্গুইস্ট সলিউশনে [3] (জিএলএস) চাকরি করেছে। এটি ভার্জিনিয়াভিত্তিক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যারা ইরাক যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনীকে দোভাষী সরবরাহ করতো।

পিআরআইডটঅর্গে প্রতিবেদনটি শুনুন। [1]

ইব্রাহিম আমাকে কথায় কথায় বলে, সে মাসে ভালোই বেতন পেত। ১৫০০ ডলার। বেতনের বাইরে বোনাসও পেত। সৈন্যরাও তাকে বেশ পছন্দ করতো। তার একটা নামও দিয়েছিল সৈন্যরা- এপি। কিন্তু ৬ মাস কাজ করার পর নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায়। বিদ্রোহীরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।

ইব্রাহিম জানায়, “তারা আমাকে বলে, তোর শরীর খেকে কল্লা আলাদা করে ফেলবো, যদি তোকে আবার ওদের সাথে দেখি।”

ইব্রাহিমের বাড়ির লোকজন তাকে দেশ ছেড়ে যেতে বলে। তবে দেশ থেকে চলে যাওয়ার আগে সে আমেরিকান সার্জেন্টদের মেইল করে জানায়, কী ঘটনা ঘটেছে।

১০ বছর আগের ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার সাথে যা হয়েছে, তা তাদের বলেছি। তারা আমাকে বাগদাদের গ্রিন জোনের জিএলএস-কে আমার ব্যাজ নম্বর দিতে বলে। তাই আমি সেখানে গিয়ে ব্যাজ নম্বর দিই। এরপরেই সিরিয়ার বাসে উঠে পড়ি।”

দামাস্কাসে এসে সে একটি টেলিকম কোম্পানিতে ভালো চাকরি পায়। তবে তার স্বপ্ন ছিল আমেরিকা যাওয়ার। সেখানে তার বোন থাকে। তার বোন-জামাইয়ের বক্তব্যে ছিল, সে যেহেতু ইরাকে মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য কাজ করতো, তাই সে মার্কিন বিশেষ অভিবাসন ভিসা’র জন্য আবেদন করতে পারে।

কিন্তু সে যে চাকরি করেছে, এর একটি প্রমাণ দরকার। তাই সে এলজিএসকে চিঠি লেখে।

“আমার চিঠি’র কোনো উত্তর দেয়নি তারা“ সে আমাকে জানিয়েছে। “তারা আমাকে বলেছে, মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। তাই তোমার ডকুমেন্ট পাওয়া সম্ভব নয়। এটা বেশ জটিল।”

পিআরআই-এর দ্য ওয়ার্ল্ড সার্ভিস গত সপ্তাহে ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত জিএলএস-এর সাথে যোগাযোগ করে। পর পর বেশ কয়েকটি মেইল পাঠানো হয়। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত কোনো মেইলের উত্তর পাইনি ।

ইব্রাহিম জানায়, সে সিরিয়াতে বেশ কয়েক বছর ছিল। এর পর সে কুর্দি অধ্যুষিত উত্তর ইরাকে যায়। সেখানে সে চতুর্থ শ্রেণি’র চাকরি করে দিন চালায়। তবে এথনিক আরব হওয়ার কারণে সেখানে সে বেশ সমস্যায় পড়ে। কুর্দি কর্তৃপক্ষ তাকে বাগদাদে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু বাগদাদে ফিরতে সে ভয় পায়।

বাগদাদে ফেরার পরিবর্তে সে তুরস্কে পাড়ি জমায়। ২০১৪ সালে সেখানে এক আফগান নারীর সাথে তার পরিচয় হয়। একদিন তারা মসজিদে গিয়ে বিয়ে করে। ইব্রাহিম জানায়, তার স্ত্রী কানাডায় যাওয়ার যোগ্য ছিল। কিন্তু বিয়ের লিগ্যাল ডকুমেন্ট না থাকায় তাকে নিয়ে যেতে পারে না।

ইব্রাহিম বলে, “আমি এখন একা। আমার স্ত্রী কানাডায়। বোন আমেরিকায়।” ইব্রাহিমের বাবা-মা এখন তুরস্কে থাকে। তার বোন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তাদেরকে আমেরিকায় নিয়ে যাবে। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেতে বছর খানেকের বেশি সময় লেগে যাবে।

তাই সে এখন ইউরোপেই যেতে চায়। কিন্তু তুরস্কের সাথে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নতুন চুক্তি [4] অনুসারে, তাকে সেখানেই থেকে যেতে হবে। ইব্রাহিমের মতো যারা তুরস্ক থেকে গ্রিসে এসেছেন এবং শরণার্থী হয়ে ইউরোপে যেতে চাইছেন, ইইউ পরিকল্পনা করছে, তাদেরকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর। উল্লেখ্য, ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও অন্যান্য সুবিধার বিনিময়ে তুরস্ক তাদের রাখতে রাজি হয়েছে।

ইইউ বলেছে, এর ফলে চোরাকারবারিদের টাকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা বিপদজ্জনক এজিয়ান সাগর পাড়ি দিয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে যেতে চাইতো, তারা নিরুৎসাহিত হবে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, এক রাস্তা বন্ধ হলে আরেক রাস্তা খুলে যাবে।

Most of the asylum seekers who have gotten stopped in Greece are Syrians escaping the war at home. Credit: Filip Warwick. Used with PRI's permission

বেশিরভাগ শরণার্থীই সিরিয়ার। যুদ্ধ থেকে পালিয়ে বাঁচতে তারা গ্রিসে এসে পৌঁছেছেন। ছবি তুলেছেন ফিলিপ ওয়ারউইক। পিআরআই-এর অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

অন্যদিকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের কর্মকর্তারা বলছেন, গণ নির্বাসন অমানবিক এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।

কাউন্সিল ফর ইউরোপ’স হিউম্যান রাইটস কমিশনার নীলস মুয়েযনেক দ্য ওয়ার্ল্ডকে বলেছেন, কেস বাই কেস পরীক্ষা ও তার ভিত্তিতে প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

তিনি বলেন, তুরস্কের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি মৌলিক নীতিকে জানালার বাইরে ছুঁড়ে দিল।