সৌভাগ্যের প্রত্যাশায় আগুনের উপর দিয়ে ঝাঁপ দেয়া ইরানের নওরোজের ঐতিহ্য

By Philippe Giabbanelli. CC BY 3.0

ফিলিপ্পে গিয়াবানেলির দেয়া ছবি। উইকিপিডিয়া কমনসের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্স এর আওতায় প্রকাশিত

২১ মার্চ তারিখে সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ নওরোজ (ফার্সি নববর্ষের প্রথম দিন) উদযাপন করে। নতুন বছরের প্রথম দিন শুধু ছুটির দিনই নয়, বরং এটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, রান্না করা, পরিবার-পরিজন নিয়ে উদযাপনের পুরো দুই সপ্তাহব্যাপী একটি উৎসব।

ইরানে এই সময় অনেকে তাঁদের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে থাকেন। তাঁরা পর্বত মহাসড়ক ধরে দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বাগানবাড়িতে চলে যান। তাঁরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত উষ্ণ শহরগুলোতে শিবির স্থাপন করেন। এ সময়ে তাঁরা ট্রাফিক আটকে থেকেও প্রিয় মানুষগুলোর কাছে যান এবং সুস্বাদু খাবার খান। আর এসব আনুষ্ঠানিকতাই শুরু হয় আগুনের উপর দিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার মাধ্যমে।

ইরানি ক্যালেন্ডার গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের মতো নয়। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ১ লা জানুয়ারিতে নতুন বছর শুরু হয় আর ইরানি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বসন্তের শুরুতে নতুন বছর শুরু হয়। বছরের শেষ বুধবারের আগের সন্ধ্যায় নওরোজ বছরের শুরু হয়। এই দিনটি চাহারশানবে সুরি (چهارشنبه سوری)  অথবা লোহিত বুধবার নামে পরিচিত। নতুন বছর উদযাপন শুরু করার আগে ইরানের লোকেরা কাঠ-কুটোর আগুন জ্বালিয়ে আগুনের উপর দিয়ে লাফ দেন, সেইসাথে হালকা আতশবাজি করেন, যা তাঁদের পুরনো ঐতিহ্য।

ফুর্তিবাজেরা যারা আগুনের উপর দিয়ে একপায়ে লাফান, তাঁরা বলেছেনঃ

زردی من از تو ک سرخي تو از من

আপনার লালটি আমাকে দিন আর আমার হলুদটি নিয়ে যান।

“আমার দুর্বলতা নিয়ে যান এবং আমাকে আপনার শক্তি দিন” হিসেবে সম্ভবত উৎসবটিকে আরও ভাল বোঝা যাবে। এটা নতুন বছরে সৌভাগ্যের জন্য আশা প্রকাশ করে থাকে।

ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারী মোজতাবাদরবিদি ছুটির দিনকে সামনে রেখে চাহারশানবে সুরি উদযাপনের পূর্ণাঙ্গ ছবি শেয়ার করেছেনঃ

https://www.instagram.com/p/BC-kV14sLc6/?taken-by=mojtabadorbidi

ভিটানিসি নামের একটি ভিটামিন সি পানীয় কোম্পানি ইরানি ইন্সট্রগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে একটি বিচিত্র ভিডিও শেয়ার করেছেঃ

চলচ্চিত্র, গান এবং নাচ

নতুন বছর আসার প্রায় একমাস আগে ইরান বার্ষিক ফজর চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছে। চলচ্চিত্র উৎসবে প্রচারিত ছায়াছবিগুলোর প্রায় সবই দেশ জুড়ে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হয়েছে। তেহরান ব্যুরো সংবাদ সংস্থাটি ইরানের উপর দৃষ্টি দিয়ে এবং গার্ডিয়ান পত্রিকার আমন্ত্রণে নওরোজের সময় প্রচারিত চলচ্চিত্রগুলোর পূর্বরূপ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। লেখক লিখেছেনঃ

এই নওরোজে সারা দেশে কোন চলচ্চিত্রগুলো সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র হতে যাচ্ছে? আমি বডিগার্ড এবং লাইফ উইদাউট প্যারোলে ছায়াছবি দুইটির কথা বলবো। রূপালী পর্দায় চিত্রায়িত ছবি দুইটি ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে – অথচ ইরানের দুইটি ছবিই বেশ গভীরভাবে ক্ষতবিক্ষত।

বডিগার্ড চলচ্চিত্রটিতে একজন উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে এবং আদর্শগত আপোষের সাথে তাঁর লড়াই চিত্রিত হয়েছে। অপরদিকে লাইফ উইদাউট প্যারোলে ছবিটিতে পারিবারিকভাবে আফগানিস্তানে বিয়ে দেয়ার কারণে বোনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে একটি পরিবারের প্রস্তুতির নাটকীয়তা উঠে এসেছে।

ইব্রাহিম হাতামিকিয়া এই নওরোজে ইরানি থিয়েটারে হায়দার জাবিহির গল্প অবলম্বনে বডিগার্ড নিয়ে আসছেন।

প্রয়াত মাইকেল জ্যাকসনের বোন – আমেরিকান গায়িকা লা টয়া জ্যাকসন – এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জনপ্রিয় ইরানি গায়ক অ্যান্ডির ছোট পর্দায় গত ৩রা মার্চ আপলোড করা একটি মিউজিক ভিডিও অনেকেই শেয়ার করেছেন। তারা উভয়ই তেহরানকে কতোটা অনুভব করেন তা ফার্সিতে গান গেয়ে প্রকাশ করেছেনঃ

“নওরোজ ৯৫” শিরোনামে ইরানী সুরকার মোসলেম রাসুলির নতুন প্রকাশিত আরেকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। একটি বিকল্প সঙ্গীত ওয়েবসাইট, রেডিও গ্রামোফোন’এর ফেইসবুক পেইজেও এটি প্রকাশিত হয়। এটিতে তাঁর যন্ত্রসঙ্গীত, ভারী বিটের গানের সাথে নাচের কারণে মানুষের পায়ের আওয়াজ বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ভিডিওটি ইউটিউবেও পাওয়া যাচ্ছেঃ

https://www.youtube.com/watch?v=nF1dcUKNh_Y

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .