
ম্যানিলা যুদ্ধের সময় বিধ্বস্ত পুরনো আইনসভার রঙিন ছবি। ফিলিপিনো সরকারের সরকারি গেজেট থেকে প্রাপ্ত ছবি।
দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানি সেনাবাহিনী ম্যানিলা দখল করে নেয়। ১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে আমেরিকান বাহিনী এবং ফিলিপিনো গেরিলা যোদ্ধারা দীর্ঘ এক মাস যুদ্ধের পর ম্যানিলাকে মুক্ত করে। সে সময় ভয়ংকর যুদ্ধ এবং ব্যাপক বোমা নিক্ষেপের কারণে ম্যানিলা (পোল্যান্ডের ওয়ার্সো নগরের পর) দ্বিতীয় বিধ্বস্ত মিত্র পক্ষীয় রাজধানী শহরে পরিণত হয়।
রক্তক্ষয়ী সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধের ৭০ তম বার্ষিকী স্মরণ করে ২০১৫ সালে ফিলিপিনো সরকার সে যুদ্ধ সংক্রান্ত ছবি, ভিডিও, রচনা, মানচিত্র, প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য প্রতিবেদন সম্বলিত একটি অনলাইন পোর্টাল চালু করেছে। তবে বিশেষ সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে পুরনো ম্যানিলা শহরের কিছু ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভবন এবং যুদ্ধের দৃশ্য সম্বলিত কিছু রঙীন ছবি।
ম্যানিলা যুদ্ধে এক লাখেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হন এবং শহরের সরকারি ভবনগুলোর প্রায় সবগুলোই ধ্বংস হয়ে যায়। সরকার যুদ্ধের পর সংক্ষেপে শহরের পরিস্থিতি তুলে ধরে:
এক লক্ষ ফিলিপিনো মারা গেছে, সরকারি ভবনগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে – এবং ম্যানিলা আর প্রাচ্যের মুক্তা নেই। এক সময়কার প্রসিদ্ধ শহর ও প্রাচ্যের প্রথম বিশ্বজনীন চক্রকেন্দ্র, যা সে সময় পূর্ব এবং পশ্চিমকে পুরোপুরি একত্রিত করে রেখেছে তা এখন ধ্বংসাবশেষের গাদার নিচে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
ম্যানিলার (ফিলিপাইন ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে স্পেন এর একটি উপনিবেশ ছিল) ইউরোপীয় ঐতিহ্যগুলো শহরটি ধ্বংসের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। সরকারি এক বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছেঃ
ফিলিপিনোরা তাঁদের সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ এবং মানুষ হিসেবে তাদের পরিচয় হারিয়ে ফেলেছেন। সরকারি ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, গীর্জা এবং তাদের দখলে থাকা সব মূল্যবান সম্পদের সাথে সাথে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্যগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। উন্নতির পথ সুগম করার জন্য ভবনগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ক্রিয়ামূলক করার পরিবর্তে ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলী ধ্বংস করা হচ্ছে, আজকাল আমাদের কিছু কিছু ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আমেরিকান স্থাপত্য শৈলী অনুপ্রাণিত করেছে। মূল অট্টালিকাগুলোর মধ্যে মাত্র কয়েকটি অক্ষত থাকবে।
যুদ্ধের পর পুরোনো ম্যানিলার কিছু রঙীন ছবির দিকে দৃষ্টি দিন। এছাড়াও কিছু ছবি তৈরি করা হয়েছে যেন আজকের দিনে সেগুলো কেমন দেখাতো তা বোঝা যায়ঃ

ম্যানিলা যুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যদের কিছু রঙীন ছবি। ফিলিপাইন সরকারের অফিসিয়াল গেজেট থেকে সংগৃহীত।

ধ্বংসপ্রাপ্ত ম্যানিলা শহরের কেন্দ্রস্থলের কিছু রঙীন ছবি। ফিলিপাইন সরকারের অফিসিয়াল গেজেট থেকে সংগৃহীত।

সৈন্যদের পাসিগ নদী পার হওয়ার কিছু আরোপিত ছবি আর বর্তমানে এটা যেমনটা দেখাত। ফিলিপাইন সরকারের অফিসিয়াল গেজেট থেকে সংগৃহীত ছবি।

রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের কাছে জাপানি সৈন্যদের কুচকাওয়াজ করে হেঁটে যাওয়ার একটি ছবি। বর্তমানে রাস্তাটি যেমন দেখাত ঠিক তেমনিভাবে ছবিটি আরোপিত। ফিলিপাইন সরকারের অফিসিয়াল গেজেট থেকে সংগৃহীত।

ম্যানিলার যুদ্ধের সময় যেসকল বেসামরিক নাগরিক মারা গেছেন তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নির্মিত হয়েছিল এই স্মারকটি। ফিলিপাইন সরকারের অফিসিয়াল গেজেট থেকে সংগৃহীত ছবি।
কোডাক ফিল্মে ধারণকৃত এই বিরল ভিডিও তথ্যচিত্রটিতে সেই যুদ্ধের আগ্রাসনের কয়েক ঝলক দেখা যায়ঃ
যদিও প্রধানত জাপানি বাহিনী হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী, তবু ঐতিহাসিকদের কেউ কেউ সরকারি বিভিন্ন ভবন ও অন্যান্য অবকাঠামোতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য আমেরিকান সামরিক বাহিনীকেও অভিযুক্ত করেছেন। কেননা দেশেটির রাজধানীর অর্থনীতিকে এসব বোমা ধ্বংস করে দিয়েছে।