
ম্যাসোডেনিয়ার ওহরিদ-এর ছবি সম্বলিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের এক জার্মান পোস্টকার্ড। ছবি নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ডিজিটাল সংগ্রহশালা থেকে নেওয়া।
জানুয়ারি ২০১৬-এ, নিউইয়র্কের ডিজিটাল পাবলিক লাইব্রেরি তাদের পাবলিক ডোমেইনের ১৮০,০০০টি ডিজিটাইজ করা ছবি প্রকাশ করে। এই লাইব্রেরির অনেক উপাদান যা কিনা ঐতিহাসিক সব নথি, সেগুলো বিনা মূল্যে একাডেমিক গবেষণায়, একই সাথে ডাউনলোড এবং রিমিক্স-এর কাজে ব্যবহার করা যাবে, যেহেতু এ সব ছবির কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
গ্লোবাল ভয়েসেস ইতোমধ্যে এই লাইব্রেরি সংক্রান্ত ভিয়েতনাম, জাপান এবং ভারত সংক্রান্ত মূল্যবান প্রাচীন সব উপাদান প্রকাশ করেছে। ইউরোপের সংক্রান্ত এ রকম ছবির উৎস হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ভিত্তিক জার্মান ফটোগ্রাফিক পোস্টকার্ড। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালে তোলা এই সব ছবি কেবল যুদ্ধের সামরিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরেনি, একই সাথে ব্যাপক ধবংসের মাঝেও বিভিন্ন স্থান এবং নাগরিকদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে।
উপরে যে পোস্টকার্ডটি প্রদর্শীত হয়েছে, সেখানে এই ছবির বিষয়ে লেখা রয়েছে:
ওহরিদ (ম্যাসোডেনিয়ার)–এর প্রাচীন দূর্গ, এটি ওহরিদ লেক এর উপকূলে এক পর্বতময় উপত্যকায় অবস্থিত। এর পেছনে আলবেনীয় তুষার পর্বত।
ঘটনাক্রমে, আলবেনীয় পর্বতমালা ফোটগ্রাফারের পেছনে থাকার কথা ছিল এবং ছবিতে এটা দৃশ্যমান হওয়ার কথা নয়। ছবিতে যে পর্বত দেখা যাচ্ছে সেটা গালিশিয়ার, যা আজকে জাতীয় উদ্যান যা হুমকির মুখে।
তাজা সংবাদ, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ঃ প্রায় ১০০ বছর পরে সেই একই এলাকা থেকে নেওয়া ছবি, একই সাথে সেই পুরোনো এলাকার সাথে বর্তমান এলাকার মিল এবং পরিবর্তন বিষয়গুলো তুলে ধরছে।
প্যানোরামিও ব্যবহারকারী ডেজান ২০০৮ এই ছবির সাম্প্রতিক সংস্করণ প্রকাশ করেছে, যা প্রায় সে একই এলাকা থেকে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এই পর্বতময় উপত্যকা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সমুদ্র উপকূল পরিণত হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ম্যাসোডেনিয়া এক বিশাল রণাঙ্গনে পরিণত হয় (ম্যাসোডেনিয়া রণাঙ্গন)। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এই যুদ্ধ সংক্রান্ত ইতিহাস এবং স্থানীয় কাহিনীগুলো তেমন একটা প্রচলিত নয়। এই প্রবনতা রোধ করা জন্য ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন ম্যাসোডেনিয়া, ২০০৮ সালে ডিজিটাল সংগ্রহশালা সংরক্ষিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ম্যাসোডেনীয় সেনাদের লেখা চিঠিসমূহ প্রকাশ করে, যাদের চিঠিগুলো লিখে দিত প্রতিবেশী বুলগেরিয়া,সার্বিয়া এবং গ্রীসের সেনারা। “উন্মোচিত স্বাক্ষ্যসমূহ” নামক এই সংগ্রহশালার অন্যতম এক চিঠিতে লেখা আছে :
আমরা আমাদের মধ্যে আলাপ করি যে এই যুদ্ধের শেষ নেই। আমাকে চিঠি লিখতে হয়, কাজে প্রতিদিন আমি ভিন্ন ভিন্ন লোকের কাছে গিয়ে ধর্না দেই যেন সে আমার চিঠি লিখে দেয়। আমি যেমনটা চাই তাদের কেউ সে ভাবে লিখতে পারে না। বর্ণমালার কিছু অক্ষর আমি ইতোমধ্যে শিখে ফেলেছি এবং আমি জানি কিভাবে চিঠি লিখতে হয়, কাজে এখন যুদ্ধে যা অবশিষ্ট রয়েছে তা হচ্ছে আমার চিঠি লেখার ক্ষমতা, যদিও সেখানে অনেক ভুল থেকে যায়- ইলিয়াজা স্তানোয়েভ।

জার্মান সেনাদল স্কোপজার উপকণ্ঠে এক স্থানীয় আলবেনীয় নাগরিকের বাসায় ঘাটি গেড়েছে। ছবি নেওয়া হয়েছে নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরির ডিজিটাল সংগ্রহশালা থেকে .
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে,ফরাসী নরম্যান্ডি এলাকার নিম্নভূমি ও ম্যাসেডোনিয়ায় সংঘঠিত যুদ্ধের ঘটনা স্মরণ এবং পুর্ণমিলনের বিষয়ে এক প্রচারণার প্রচেষ্টা হিসেবে দুটো দেশে একসাথে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শতবার্ষিকী পালন করে উপলক্ষে এক ছবি প্রদর্শনী ও পাশাপাশি এক শিক্ষা সফর এবং পুরোনো দূর্গ এলাকায় অবশিষ্ট সংস্কৃতি ঐতিহ্য অন্বেষনের আয়োজন করা হয়।
নিউইয়র্কের পাবলিক লাইব্রেরী জার্মান পোস্টকার্ড আজকের এই দিনে ম্যাসেডোনিয়ার সাধারণ নাগরিকদের জীবনের এক ঝলক তুলে ধরছে এবং ভিন্ন ভিন্ন জাতির চারত্রিক বৈচিত্র্যতার সাক্ষী হয়ে আছে যা এখনো ম্যাসেডোনিয়ার আভিজাত্যকে তুলে ধরে। এগুলো হয়ত অতীত অনুসন্ধানে জতিতত্ব থেকে ইতিহাসত্বের ক্ষেত্রে গবেষণার কাজে লাগতে পারে।