- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মধ্যপ্রাচ্যের যে সংঘর্ষ, তা সুন্নি বনাম শিয়া সম্প্রদায়ের সংঘর্ষ নয়, আর এটি হাজার বছরের পুরোনো ঘটনাও নয়

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরাক, ইরান, সৌদি আরব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি
Distribution of Sunni and Shia Islam in the Middle East and North Africa. Photo by Peaceworld111 on Wikipedia, used under CC BY-SA 4.0 [1]

মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের জনসংখ্যাভিত্তিক মানচিত্র। ছবি উইকিপিডিয়ার পিসওয়ার্ল্ড১১১ এর। সিসি বাই-এসএ ৪.০ অনুসারে ব্যবহার করা হয়েছে।

জাতির উদ্দেশ্য প্রদান করা [2] সর্বশেষ ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা বিবৃতি প্রদান করেছেন যে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘর্ষ হাজার বছরের পুরোনো। একজন আরব গবেষক সময় নিয়ে ওবামাকে এই সংঘর্ষের একটি দিক ব্যাখ্যা করছে,আর সেটি হচ্ছে এই যে–আজকের এই তথাকথিত সুন্নি এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মাঝে যে সংঘর্ষ, তা আর যাই হোক, প্রাচীন নয়।

ওবামা বলেছেন “মধ্যপ্রাচ্য এক রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ঘটে এসেছে,এটি এমন এক সংঘর্ষ যা হাজার বছরের পুরোনো।

একগুচ্ছ ধারাবাহিক টুইট যার শিরোনাম তথাকথিত “প্রাচীন” সুন্নি বনাম শিয়া সংঘর্ষ সম্বন্ধে [3], সেখানে নামক ফিলিস্তিনি লেখক, পেশা বিষয়ক উদ্যোক্তা,এবং আরব বসন্তের একটিভিস্ট আইয়াদ এল বাগদাদি ইতিহাস থেকে উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছে যে সে সময় এটা “সম্প্রদায়ের নেতা” কিংবা “রাজনীতির বিষয়” ছিল না”:

১৯ শতকে, শিয়া নেতা আল আফগানী ছিলেন উপনিবেশবাদ বিরোধী চিন্তার একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি, সামগ্রিক ইসলামিক পুর্নজাগরন আন্দোলনের এক সদস্য।

আল আফগানীর শিষ্য আর কেউ নন, প্রখ্যাত সুন্নি আলেম মোহাম্মদ আবদুহ, যিনি পরবর্তীতে মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি বা প্রধান মৌলানা হয়েছিলেন।

সুন্নি এই আলেম আবদুহ-এর শেষ কাজ ছিল নাহাজ আল বালাগাহ–এর কাজের উপর করা টিপ্পনী, যিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এক শিয়া আলেম।

১৯৩১ সালে, উপনিবেশ বিরোধী সম্মেলনে জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদের সুন্নি আলেমদের নামাজে ইমামতি করেছিলেন ইরাকের শিয়া নেতা কাশিফ আল ঘাইতা

১৯৪০-এর দশকে পাকিস্তান ছিল এক সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র, যার স্থপতি ছিলেন এক শিয়া মুসলিম জিন্নাহ।

১৯৫০-এর দশকে ইরাকের আদমশুমারীতে বেশীর ভাগ ইরাকি নাগরিক সম্প্রদায় পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্ত ছিল যে আদতে তারা সুন্নি, নাকি শিয়া, কারণ তারা ছিল মিশ্র।

১৯৫৮ সালে মিশরের গ্রান্ড মুফতি ঘোষণা দিয়েছেলেন যে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় সুন্নি আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি পঞ্চম স্কুল (পঞ্চম ইমামের তত্ত্ব) হিসেবে শিয়া আইনের মতবাদও পড়ানো হবে।

১৯৬০-এর দশকে ইয়েমেনে সংঘঠিত গৃহযুদ্ধে মিশর সমর্থিত প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে শিয়া নেতা জায়েদিকে সুন্নি সৌদি আরব সমর্থন প্রদান করে।

১৯৮০–এর দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরাকি সেনারা ছিল আরব শিয়া

১৯৯০ এবং ২০০০-এর দশকে, শিয়া ইরান স ফিলিস্তিনি সুন্নি হামাস দলটিকে সমর্থন প্রদান করে গেছে।

এল বাগদাদি আরো ব্যখা করেন যে “বিভাজন সৃষ্টি কর এবং শাসন কর” বিষয়টি রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার সঙ্কটে ইচ্ছাকৃত এবং বিদ্বেষ পূর্ণ এক গোষ্ঠিগত ফাটল সৃষ্টির প্রয়াস, তিনি টুইট করেন:

বর্তমান এই পরিস্থিতি তা সৃষ্টি করা হয়েছে সম্প্রদায়গত এক সংঘর্ষের জন্য নয়, বরঞ্চ আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াইয়ে সম্প্রদায়কে অসৎ উদ্দেশ্যে বিভাজিত করার লক্ষ্যে

এল বাগদাদির মতে, এই বিভাজনের মাধ্যমে একমাত্র স্বৈরশাসকেরা লাভবান হবেন এবং সম্প্রদায়ের এই বিভাজন হচ্ছে “ ক্ষমতায় যাওয়ার অস্ত্র”:

স্বৈরশাসকেরা আদর্শগত ভাবে সুন্নি বা শিয়া মতবাদের প্রতি খুব কমই বিশ্বস্ত, কিন্তু যখন প্রয়োজন হয় তখন তারা খুশী মনে এটাকে ব্যবহার করে ।

সাম্প্রদায়িক বিভাজন এখন এক প্রায়োগিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে, ঘৃণার আদর্শ এখন প্রয়োজনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে আর এভাবে বিষয়টি টিভি এবং প্রচার মাধ্যমে এক তারকায় পরিণত হয়েছে।

ঘটনা হচ্ছে পুরোনো তত্ত্বীয় বিভাজন এবং সম্প্রদায়গত যে পার্থক্য, তা আমি স্বীকার করি, কিন্তু আমি জোর দিচ্ছি আধুনিক রাজনীতিতে অস্ত্র হিসেবে এই ধারনার ব্যবহারের প্রতি।

এই অঞ্চলকে কি সাম্প্রদায়িক বিভাজনে বিভাজিত করা হয়েছে? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, এখানে যে পার্থক্য সেটা কি মৌলিক? উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ, এই বর্তমান যুদ্ধং দেহী মনোভাব কি প্রাচীন তত্ত্বীয় বিতর্ক থেকে উদ্ভূত ? উত্তর হচ্ছে না।

অনেক আধ্যাত্মিক এবং সম্প্রদায়গত পার্থক্য তেমন ক্ষতিকর নয়, এটা নিছক জাগতিক এক বিষয়, এবং বিশেষ করে ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা প্রাণঘাতী নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটাকে ক্ষমতার এক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।