৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, বিশ্ব যখন নববর্ষ উদযাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,তখন পাকিস্তানে সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে যে লাহোর থেকে নারী ও শিশু সহ ২০জনের মত ব্যক্তি আইএসআইএস-এ যোগদানের জন্য সিরিয়ায় গিয়ে হাজির হয়েছে [2]।
এই ঘটনার কয়েক দিন আগে পাঞ্জাবের উত্তরের শহর শিয়ালকোটে [3] আটজন সন্দেহভাজন আইএসআইএস জঙ্গী সন্দেহে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।
তারপরেও পাকিস্তানের সরকার দেশটিতে আইএসআইএস-এর উপস্থিতি অস্বীকার করছে [4], এটি এমন এক অবস্থান, যা ক্রমশ অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে কারণ এই দলের শেকড় ছড়ানোর বিষয়টি ক্রমশ জোরালো হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এবং কিছু ছোট আকারের উগ্রবাদী দল এদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে [5]।
সোশ্যাল মিডিয়াতে নাগরিকেরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নাসির খানের [6] বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, এই ধরণের অস্বীকার করার বিষয়ে যিনি নেতৃত্ব প্রদান করছেন।
#ISIS [7] #Daesh [8] #Daish [9] #IS [10] cell busted in Sialkot, claim officials https://t.co/sxsNKRUx9t [11] https://t.co/8SeDgBDRQj [12] pic.twitter.com/qIMzSOGLgn [13]
— Aamir Mughal (@mughalbha) December 29, 2015 [14]
শিয়ালকোটে আইএস-এর অবস্থান নেই হয়ে গেছে,দাবী কর্মকর্তাদের।
Daesh's presence feared in Lahore, details on JAAG TV pic.twitter.com/9cS2hbwDIj [15]
— JAAG TV (@JaagAlerts) December 31, 2015 [16]
লাহোরে আই এস -এর উপস্থিতি আতঙ্ক ছড়িয়েছে,জাগো টিভিতে বিস্তারিত দেখুন।
#PMLN [17] Minister Rana Sanaullah says No ISIS in Pakistan, but ISIS members from Pakistan are going abroad with “Jihad” as objective in mind.
— Majid Agha (@Majid_Agha) January 1, 2016 [18]
পিএমএলএন এর মন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলছে যে পাকিস্তানে কোন আইএসআইএস নেই, কিন্তু পাকিস্তানের আইএসআইএস সদস্যরা “জিহাদী” হওয়ার বাসনায় বিদেশে যাচ্ছে।
Will our Govt continue denying the presence of #Daesh [8] in Sialkot #Pakistan [19] ..!! @AsimBajwaISPR [20] pic.twitter.com/ZVtzeNhOBR [21]
— Fighting Falcons (@n1224_) December 29, 2015 [22]
আমাদের সরকার কি শিয়ালকোটে আই এস এর উপস্থিতি বরাবরের মত অস্বীকার করে যাবে।
পাকিস্তানের শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নেওয়াজ (পিএমএলএন) নামক দলটি উগ্রবাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্থগিত রেখেছে যা বিস্তারিত ভাবে “জাতীয় কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা [23]“, যেটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পেশোয়ারের স্কুলের হামলার ঘটনা [24] থেকে উদ্ভূত হয়, যে হামলায় ১৪০জন নিহত হয়, যাদের বেশীর ভাগই ছিল শিশু। তেহরিক-ই-তালিবান [25] নামক সংগঠনের বন্দুকধারীরা এই হামলা চালায়।
উগ্রবাদী দলগুলোর উত্থান থামাতে সরকারের ব্যর্থতায় পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিদারুণ হতাশ।
এক বছর আগে আলি সালমান আলভি লাহোরে আইএসতআইএস-এর সমর্থকের উপস্থিতির বিষয়ে টুইট করেছিল, যেখানে মসজিদের বাইরে কিছু প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছিল এবং শহরের দেওয়ালে আইএসআইএস-এর সমর্থনে স্লোগান লেখা হয়েছিল:
If #Daesh [8] in Pak is not curbed now, there will be bloodshed like never before. Booklets distributed in #Lahore [26] today. pic.twitter.com/NPUpzRyunQ [27]
— Ali Salman Alvi (@alisalmanalvi) November 24, 2014 [28]
যদি পাকিস্তানে থাকা আই এস-এর সদস্যদের এখনি দমন না করা যায়, তাহলে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী রক্ত গঙ্গা বয়ে যেতে পারে। আজ লাহোরে পুস্তক বিতরণ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের সবচেয়ে ঘনবসতি এবং উন্নত প্রদেশ পাঞ্জাবে [29] জঙ্গীবাদ এক গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে :
Punjab most favorable towards Taliban. https://t.co/AKiaaZpx3Q [30] via @Chiltan [31] pic.twitter.com/6TjKbuqufD [32]
— Khushal Khan (@Khushal_Khattak) December 30, 2015 [33]
পাঞ্জাব তালিবানদের প্রতি সবচেয়ে বেশী সহানুভূতিশীল।
পাকিস্তানের বিরোধী দল যার মধ্যে বিলওয়াল ভুট্টোর [34] নেতৃত্বে পরিচালিত পাকিস্তান পিপলস পার্টিও অর্ন্তভুক্ত, ন্যাপের প্রয়োগের বিষয়ে সমালোচনা করেছে।
২৭ ডিসেম্বরে ভুট্টো বলেন [35] এটা সকল দলের ঐক্যমতে যে ন্যাপ নামক সংগঠন গঠন করা হয়েছে তা নয়,এটা এনলীগের এ্যাকশন কার্যক্রম পরিচালনা, যার শিকার হচ্ছে রাজনৈতিক বিরোধীরা।
কিন্তু কেন পাকিস্তান থেকে নাগরিকেরা আইএসআইএস যোগদান করছে?
তাতিয়ানা দ্রোনিজিনা, যিনি বুলগেরিয়ার সোফিয়া স্টেটস ইউনিভার্সিটির ইসলাম এবং জাতিগত সংঘর্ষ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ যিনি মধ্য এশীয়া আইএসআইএস জঙ্গীদের বিষয়ে স্বাধীন গবেষণা পরিচালনা করেছে, তিনি ডিপ্লোম্যাটকে প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে [36] বলেন:
অনেকে আইএসআইএস যোগ দেয় সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য-মুসলমান ভাইদের সাহায্যে করার, এমন এক শাসনের জন্য লড়াই করে যারা তাদের দমিয়ে রাখে কিংবা দুর্বলদের রক্ষা করে। অন্যেরা দুঃসাহসিক অভিযান, রোমান্টিকতা, ভালবাসা (বিশেষ করে নারীদের প্রতি), বীর হওয়ার ইচ্ছায়, অথবা তারা শুধু এই ভাবনা থেকে যে আদর্শ মুসলমান দের জীবনে খেলাফত হচ্ছে সঠিক এক শাসন ব্যবস্থা এবং তারা এই শাসন ব্যবস্থা যাতে তৈরি হয় তাতে অবদান রাখতে চায়। অন্যেরা অনুভব করে যে স্বদেশে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নেই।
এর বিপরীতে, গত বছর ইসলামাবাদে রাজনৈতিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক এক ভাষণে, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা বিষয়ক এক পাকিস্তানী আমেরিকান গবেষক ডঃ হাসান আব্বাস ব্যাখ্যা করেন [37] কেন পাকিস্তান সরকার উগ্রবাদী দলগুলো দমনে ব্যর্থ হচ্ছে।
এই ভাষণের সার সংক্ষেপ :
[আব্বাসের মতে] দূর্বল ক্ষমতা অভিক্ষেপ–এর মাধ্যমে জাতি গঠনে অসমর্থতা এবং ত্রুটিপূর্ণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে আফগানিস্তানে তালিবানের প্রবল প্রভাব […] তেহরিক-তালিবান-পাকিস্তান, দেশটিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে এক শক্তি যার দেশটিতে বেশ প্রভাব রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে প্রভাব জোরালো হচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় শাসণ ব্যবস্থা এবং [কেন্দ্রীয় ভাবে শাসিত আদিবাসী এলাকা] মাঝে সাংবিধানিক শূন্যতার কারণে এদের প্রভাব জোরালো হচ্ছে। ফাটা-এর মাঝে আদিবাসীদের না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে অবস্থান করা দলগুলোর মাঝে অবস্থান তৈরি করছে।
এদিকে নববর্ষের দিনে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা পুনরায় উচ্চারণ করেছে [38] যে পাকিস্তানে আইএসআইএস-এর কোন “চিহ্ন” নেই।
তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, এখন আইএসআইএস এবং অন্য জঙ্গী দল পাকিস্তানে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, পাকিস্তান সরকার যেন বালিতে মুখ গুঁজে রয়েছে [বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে]।