২০১৫ সালে দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে তিনটি জিনিস শিরোনাম দখল করেছিল, তা হলো মিয়ানমারে সামরিকবাহিনী সমর্থিত দলের ঐতিহাসিক নির্বাচন বিপর্যয়, বনাগ্নীর কারণে সৃষ্ট ইন্দোনেশিয়ার সৃষ্ট ধোঁয়াশা, এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জড়িয়ে দুর্নীতির কেলেঙ্কারী।
মালয়েশিয়াতে রাষ্ট্র পরিচালিত একটি বিনিয়োগ সংস্থা থেকে কয়েকটি নিয়মবহির্ভূত ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে ৬,০০০ কোটিরও বেশী মার্কিন ডলার পকেটস্থ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। থাইল্যান্ডে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখলকারী জান্তা একটি দুর্নীতি-পূর্ণ উদ্যান নির্মাণ করার অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে। ইন্দোনেশিয়াতে একটি চাঁদাবাজির কেলেঙ্কারীতে জড়িত পরে হাউস স্পিকার তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এবং ফিলিপিন্স-এ উপ-রাষ্ট্রপতিকে লুটপাটের অভিযোগ তাড়িয়ে বেরাচ্ছে।
মালয়েশিয়ার প্রধান মন্ত্রী নাজিব আব্দুল রাজ্জাক তার ব্যাংকের হিসেবে ৬,০০০ কোটি ডলার থাকার কথা স্বীকার করেছেন কিন্তু ঐ অর্থ যে রাষ্ট্রের ভাণ্ডার থেকে এসেছে তা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবী করেছেন যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে একজন সমর্থক ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচন প্রচারণার জন্য ঐ অর্থ প্রদান করে। অনেকেই তার ব্যাখ্যায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে এবং তার পদত্যাগের দাবী করেছে। এই বিষয়টির ফলে প্রধানমন্ত্রীকে উপহাস করে ইন্টারনেটে মজার মজার ব্যাঙ্গাত্মক ছবি তৈরী হয়েছে, সেই সাথে সাথে দেশজুড়ে বড় বড় বিক্ষোভ আয়োজিত হয়েছে।
দ্য ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্র পরিচালিত বিনিয়োগ সংস্থা ওয়ানএমডিবিকে জড়িত করে সন্দেহজনক ব্যাংক স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে একটি তদন্তমূলক লেখা প্রকাশ করে:
#1MDBMovies : Popcorn ready guys pic.twitter.com/jUh8yWhzWp
— Pemegang Kuali (@rzmil) July 8, 2015
#ওয়ানএমডিবিচলচ্চিত্র : বন্ধুগণ খৈ প্রস্তুত
থাইল্যাণ্ডের জান্তার দুর্নীতি বিরোধী অঙ্গীকার প্রাচুয়াপ খিরি খান প্রদেশে রাজাভক্তি উদ্যান নির্মাণের জন্য বড় অংকের চাঁদা দাবী করার অভিযোগ ওঠার পর অবিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। এই জান্তা রাজতন্ত্রের সম্মানে ৭জন জনপ্রিয় রাজার বিরাট মূর্তিসহ উদ্যানটি নির্মাণের অনুমতি দেয়। সামরিক বাহিনীর একজন সেনাপতি এই অসংগতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন যার ফলে একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত চালু করা হয় যদিও সরকারী মূখপাত্ররা উদ্যানটির অতিমূল্য হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। গত মাসে জান্তাটি এই উদ্যান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে যাতে বিক্ষোভকারীরা ঐ এলাকায় কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে। এদিকে যে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই উদ্যানের কেলেঙ্কারী সম্পর্কে তথ্যচিত্র বিনিময় করেছে তাদের বিরুদ্ধে রাজতন্ত্রকে অবমাননা করার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, যে অপরাধের জন্য বেশ কয়েক বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
New inquiry into Rajabhakti Park https://t.co/nTUSmiYMSvpic.twitter.com/rIPJIZU41a
— Bangkok Post (@BangkokPostNews) November 24, 2015
রাজাভক্তি উদ্যানে নতুন তদন্ত
এই কার্টুনে দেখা যাচ্ছে যে জান্তা কর্মীদেরকে এই উদ্যানে একটি বিক্ষোভ করতে বাধা দিচ্ছে
cartoon of the day : Rajabhakti Park corruption scandal pic.twitter.com/YaU6jtOWIG
— stephff art (@stephffart) December 8, 2015
দিনের সেরা কার্টুন : রাজাভক্তি উদ্যান দুর্নীতি কেলেঙ্কারী
ইন্দোনেশিয়াতে হাউজ স্পীকার সত্য নভন্তোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তিনি ফ্রিপোর্ট নামের কোম্পানীকে দেশের মধ্যে তাদের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে একটি চুক্তি সম্পাদন করার বিনিময়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের খনিজ পদার্থ উত্তোলনের হিস্যা থেকে ২০ শতাংশ দাবী করেছে। নভান্তো এবং ফ্রিপোর্টের নির্বাহীদের মধ্যে কথোপকথোনের একটি ধারণকৃত অডিও এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি এই দাবী করেছেন বলে নভান্তো স্বীকার করেন তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে তিনি নিছক ঠাট্টার ছলেই তা করেছেন। গত ডিসেম্বরের ১৬ তারিখে তিনি হাউজ স্পীকার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর তার বিরুদ্ধে নৈতিকতা লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু হয়। নভান্তোর আচরণ ইন্দোনেশিয়াতে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়।
নভান্তো বিতর্ক সৃষ্টিতে আগন্তুক নয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ডোনার্ল্ড ট্রাম্প-এর রাজনৈতিক সমাবেশে উপস্থিত হবার কারণে সমালোচিত হন।
Donald Trump: Do they like me in Indonesia? Setya Novanto: Yes, highly Fadli Zon: [Trump]'s a friend of Indonesia http://t.co/xozyL572hc
— Yenni Kwok (@yennikwok) September 4, 2015
ডোনাল্ড ট্রাম্প: ইন্দোনেশিয়াতে কি আমাকে পছন্দ করা হয়? সত্য নভান্তো: অনেক বেশী ফাদলি জন: ট্রাম্প ইন্দোনেশিয়ার বন্ধু
ফিলিপিন্স-এ উপ রাষ্ট্রপতি জেজোমার বিনয় দেশটির অর্থনৈতিক কেন্দ্র মাকাটি শহরের মেয়র থাকাকালিন তার স্বাক্ষরিত নিয়মবহির্ভূত কতগুলো চুক্তির জন্য বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন। ২০১৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রথম সারিতে থাকা প্রার্থীদের অন্যতম বিনয় এই দুর্নীতির অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সূত্রগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলেছেন যে নির্বাচন থেকে তাকে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করার জন্য এগুলো করা হয়েছে।
এখানে ইন্টারনেটে প্রচারিত অনেকগুলো ব্যাঙ্গাত্মক ছবির একটি দেয়া হলো যার মাধ্যমে উপ রাষ্ট্রপতি বিনয়ের দুর্নীতির মামলাগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে:
Down with corruption…..down Binay pic.twitter.com/uFA1ZJQbEZ
— Caste (@castewyo_rene) August 8, 2015
দুর্নীতি নিপাত যাক…বিনয় নিপাত যাক
২০১৫ সালকে স্মরণ করা হবে মিয়ানমার পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছে এমন বছর হিসেবে। কিন্তু দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য জায়গায় ব্যক্তিগত লাভের জন্য তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি চলছিল যথারীতি।