উদ্ভিদ এবং প্রাণী নেপালের জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব তুলে ধরছে

Rhododendron and Himalayas, Image from Flickr by Andrew Miller. Annapurna Sanctuary, Nepal. CC By-NC

রডোড্রেনডন এবং হিমালয়। ছবি এ্যান্ড্রু মিলার-এর। অন্নপূর্না নামক অভয়ারণ্য উপত্যকা ।

প্যারিস সম্মেলনে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মাঝে চূড়ান্ত চুক্তি হওয়ায় বিশ্ব এখন এতেই মজে রয়েছে । সরকারগুলো গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন সীমিত করার ব্যাপারে একমত হয়েছে যাতে প্রাকশিল্প স্তরে তাপমাত্রা দুই ডিগ্রী সেল সিয়াস বৃদ্ধির উপর বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে থামানো যায়, বিজ্ঞানীরা শঙ্কিত যে এর চেয়ে বেশী বেশী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জলবায়ুতে যে প্রভাব পড়বে।

এই চুক্তিতে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এবং নেপালের মত অনুন্নত রাষ্ট্রের প্রতি সহায়তার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে, বিশ্বের উষ্ণতা যাদের অবদান সামান্য,কিন্তু ইতোমধ্যে এ সব রাষ্ট্র যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শিকার হয়েছে তা ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।

নেপালের মুসটাং, হিমালয়ের এই জেলা তার আপেল বাগানের জন্য বিখ্যাত, বিগত ছয় বছর লেটে এবং কুঞ্জ গ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আপেল বাগানে আপেল দেখেনি। বিশেষজ্ঞরা এটিকে জলবায়ু পরিবর্তনের এক প্রভাব হিসেবে দেখছে।

রিপাবলিকাঃ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মুস্টাং জেলার আপেল বাগান অদৃশ্য হয়ে গেছে।

এই অক্টোবরে, নেপালের দক্ষিণের সমতলে বাস করা শকুনদের পাহাড়ি মায়াগদি জেলায় উড়তে দেখা যায়। পক্ষী বিশারদদের মতে, সমতলে বাড়তে থাকা উষ্ণতা এড়ানোর জন্য এই সমস্ত শকুনদের এখন আরো শীতল পরিবেশের অনুসন্ধানে এখানে উড়তে দেখা যাচ্ছে।

তরাই নামক পাখিকে কাসকি জলাভুমিতে দেখা গেছে।

একই ভাবে হলদে বক (ইক্সোব্রাচিয়াস সিনেনসিস) নামক পাখিটিকে এই প্রথম সমুদ্র সমতল থেকে ৯০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি কাসকি জেলায় দেখা গেছে। এই পরিযায়ী পাখিকে সাধারণত সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ২৫০ মিটার উচ্চতায় দেখতে পাওয়া যায়।

একই ভাবে ব্রাউন হেডেড গাল নামক গাঙচিলদের সম্প্রতি কাসকি জেলার ফেওয়া হ্রদে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে।

গত বছর দেশটিতে রডোড্রেনডন নামক ফুল অনেক আগে, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফুটতে দেখা গেছে, সাধারণত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে এই ফুল ফোটে, গোরখাপত্র নামক সংবাদপত্র এই সংবাদটি প্রকাশ করেছেঃ

এমনকি নেপালের জাতীয় ফুল যা কিনা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ফুটে থাকে সেটি এখন ফোটার সময় পাল্টে নিয়েছেঃ সাম্প্রতিক কালে এটি ফেব্রুয়ারির মাসে ফুটছে, যদিও অতীতে এটি মার্চ এবং এপ্রিলে ফুটত।

সাধারণত হিমালয়ের ফুল ফোটার সময়টা বসন্তের আগমনের বার্তা প্রদান করে, কিন্তু এখন এসব ফুল অনেক আগে প্রস্ফুটিত হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ না করলেও চলে যে হিমালয়ের রডোড্রেনডন ফুল ফোটার সময় পাল্টে যাওয়ার বিষয়টিও যথারীতি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে যুক্ত।

বিশ্ব জুড়ে প্রকৃতির জন্য তহবিল সংরক্ষন (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার বা ডাব্লিউ ডাব্লিউ এফ) এ্যাপোলো নামক প্রজাপতি এবং খরগোশের মত দেখতে পিকা নামক প্রানীর বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে হিমালয়ে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করেছে, যে সব বিষয়ও বিজ্ঞানীদেরও শঙ্কিত করে তুলেছে।

আপনারা কি জানেন যে পিকা নামের প্রাণীটি জলবায়ু পরিবর্তনের এক নির্দেশক? এগুলো দেখতে সুন্দরও বটে।

এ্যাপোলো নামক প্রজাপতিগুলোকে এখন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৩,০০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে দেখা যাচ্ছে, যেগুলো এখন তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে ৫০০ মিটার বেশী উঁচুতে উড়ছে, এদিকে নেপালের ল্যানট্যাং এলাকায় পিকা নামক প্রাণীগুলোকে স্বাভাবিক এলাকা থেকে ১০০ মিটার উঁচুতে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে।

গবেষকেরা একই সাথে ১,৮০০ মিটার থেকে ২,২০০ মিটার উচ্চতায় উড়তে থাকা পিয়েরিস প্রজাতির প্রজাপতির এই উচ্চতা এবং একই সাথে সুস্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান তাদের জীবন চক্রের পরিবর্তনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করেছে।

চোখে ধরা পড়ার মত জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অনেকটা কয়লার খনিতে ক্যানিরি নামক পাখি দেখতে পাওয়ার মত, তবে ভারতের অঘোষিত ভাবে আরোপিত সড়ক অবরোধের মুখে ( এই বিষয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস-এর সংবাদ পাঠ করুন) নেপাল সরকার যখন অর্থনৈতিক ভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করছে, তখন তাদের নাগরিকদের জ্বালানির জন্য ব্যাপকভাবে বন থেকে কাঠ সরবরাহ করতে হচ্ছে, আর এ কারণে পরিবেশ সংরক্ষণবাদীরা ক্ষুব্ধ।

প্যারিসে বিশ্বের নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৈঠক করছে, আর এদিকে একই সময়ে নেপাল সরকার জ্বালানির জন্য বিকল্প হিসেবে কাঠ বিতরণ করছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .