সৌদী নারীরা ঐতিহাসিক নির্বাচনে ভোট প্রদান করে; এখন তারা আরও বেশী অধিকার চায়

Saudi Fawzia Al Rashid posts this photograph of herself on Twitter @fawziaalrashid after taking part in the municipal elections, which allowed Saudi women to nominate themselves and vote for the first time

সৌদী ফওজিয়া আল রাশিদ পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর তার নিজের এই ছবিটি টুইটারে @ফওজিয়াআলরাশিদ প্রকাশ করেন, যে নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো তাদের নিজেদেরকে মনোনীত করতে এবং ভোট প্রদান করতে অনুমতি পেল

সর্বপ্রথম নারী ভোটার ও প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত সৌদী আরবের পৌরসভার নির্বাচনে ২১জন নারী আসন জয় করেছেন। গণ উদ্যান, পয়ঃপ্রণালী এবং আবর্জনা সংগ্রহ সংক্রান্তসহ স্থানীয় বিষয়গুলোর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ২৮৪টি পৌরসভা পরিষদের ২,১০০ টি আসনের নির্বাচনে প্রায় ৯০০ নারী ৬,০০০ পুরুষ প্রার্থীদের সাথে প্রতিযোগিতা করেছে। অন্যান্য ১,০৫০ জন পরিষদ সদস্য নিয়োগ করা হবে যার মধ্যে অনেক নারী থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই ঐতিহাসিক নির্বাচন শনিবার ১২ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ১৩০,০০০ নারী ভোট প্রদান করার জন্য নিবন্ধন করেন, এবং ৯৭৮ জন প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতা করেন। সৌদী নারীদের জন্য এটি একটি বড় সংবাদ–একটি খুবই রক্ষণশীল দেশে এটি অসাধারণ মুহূর্ত যেখানে নারীদেরকে গাড়ী চালাতে দেয়া হয় না এবং পুরুষ অভিভাবকত্ব আইন সাপেক্ষে চলাচল করতে পারে। ১৩ লক্ষ পুরুষ ভোটারের তুলনায় ১৩০,০০০ নারী ভোটার নিবন্ধন করে। ভোটার উপস্থিতির হার ৪৭শতাংশ ছিল বলে অনুমান করা হয়েছে।

দু'জন নারী মানবাধিকার কর্মীকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন নারীদেরকে গাড়ী চালতে দেয়ার বিষয়ে ওকালতি করার প্রচারণা করে গ্রেফতার হওয়া লুজেইন আল-হাথলাউল, এবং শিয়া মানবাধিকার কর্মী নাসিমা আল-সাদাহ

টুইটারে আল হাথলাউল জানতে চেয়েছেন কেন তার প্রার্থীতা বাতিল করা হলো। তিনি আরও বলেন:

আমার ও অন্যান্যদের সাথে এই নির্বাচনে যা হয়েছে সে সকল বাধা সত্ত্বেও যে পুরুষ ও নারীরা পরিষদে নির্বাচিত হয়েছেন তাদের সাফল্যে আমি খুশী। সকল বিজেতাদেরকে অভিনন্দন এবং আমি সবার সাফল্য কামনা করছি।

প্রতিযোগিতায় অযোগ্য ঘোষিত হওয়া আল সাদাহ অন্যান্য নারীদেরকে তাদের কণ্ঠ শ্রুতিগোচর করায় উৎসাহ দিতে তার ভোট দেবার অধিকার চর্চা করেছেন।

একজন নারীর ব্যালট বাক্সে তার ভোট প্রদান করার মূহুর্তটি একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত এবং আপনার ভোট দেবার ও অংশগ্রহণ করার অধিকারের বিষয়ে কখনওই হাল ছাড়বেন না।

তিনি সৌদীদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন:

নির্বাচনের ফলে হয়তো সবথেকে ভাল ব্যক্তিকে নির্বাচিত করা হবে না, কিন্তু যারা সবথেকে বেশী ভোট পেয়েছে তারা বেড়িয়ে আসবে।

বাঁধা থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে নারীরা উল্লাসিত, যাদের অনেকেই তাদের ভোট দেবার ছবি বা ভিডিও প্রচার করেছে।

মানবাধিকার কর্মী তামাদোর আল-ইয়ামি ভোট দেবার পর এই ভিডিওটি বিনিময় করেছেন:

ভিডিওটিতে তিনি বলেছেন:

“I have just completed voting and may the women candidates be successful and we see the biggest changes at their hands.”

‘আমি এই মাত্র আমার ভোট সম্পন্ন করেছি এবং নারী প্রার্থীরা সফল হোক সেই কামনা করছি এবং আমরা তাদের হাত দিয়েই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে তা দেখতে পাই।’

অনেক সৌদী নারীদের মতোই আল-ইয়ামি এই রাজ্যের নারীদের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য এই মাইলফলক নির্বাচনকে অনেক আশা নিয়ে দেখছেন।

এখন তারা আরও বেশী চান

যার মাধ্যমে নারীদেরকে গাড়ী চালাতে দেয়ার দেশব্যাপী প্রচারণা শুরু হয় সেই অক্টোবর ২৬শের প্রচারণা নারীদের উপর থেকে গাড়ী চালনার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে সৌদী আরবের প্রতি ‌আহ্বান করা তাদের দাবীর বিষয়ে মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতে এই নির্বাচনকে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করার আশা করছে:

‘আমরা নারী বিজেতাদেরকে অভিনন্দন জানাই এবং সেই সুযোগে নারীদের উপর থেকে গাড়ী চালনার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার জন্য আমাদের আহ্বান জনগণকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।’

এবং আবদুল্লা আল-আলামি তার দেশে নারীদের জন্য আরও বেশী স্বাধীনতা দেয়া হোক তার আশা করেন:

নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে নাগরিক মর্যাদা আইন পরিবর্তন হচ্ছে এবং নারীদেরকে পৌরসভায় সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তার পরবর্তী পদক্ষেপ হলো নারীদেরকে চলাফেরা করা, ভ্রমণ করা, চিকিৎসা গ্রহণ করা, বিদেশে সফর করা এবং কাজ করতে অনুমতি দেয়া।

হিন্দ আল-জাহেদ ব্যাখ্যা করেছেন কেন সৌদী নারীদেরকে ভোট দেয়া উচিত:

আমার ভোট নারীদের জন্য। আমার দেশে অনেক নারীই সমান সুযোগ পায়নি এবং সেই কারণেই আমি তাদেরকে সহায়তা করা অব্যাহত রাখবো যতক্ষণ তারা সমকক্ষ না হয় এবং আমরা তারপর তাদের মধ্যে থেকে ভাল জনকে নির্বাচিত করতে পারি।

এবং দু'টি টুইটে আলবারা আল-আউহালি ব্যাখ্যা করেছেন কিভাবে এই রক্ষণশীল রাজ্যে নারীদেরকে পরিশেষে ভোট দিতে দেবার জন্য মানসিকতা পরিবর্তন হয়েছে:

আজকে অনেক সৌদী নারীই পৌরসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে তাদের ঘর থেকে বের হয়েছে এবং এর সবই খুব স্বাভাবিক মনে হয়েছে। মাত্র চার বছর আগেও আমাদের এবিষয়ের উপর উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে।

২০০৫ নির্বাচন: নারীদের ভোট দেয়া নিষিদ্ধ এবং কারোরই তা দাবী করার সাহসিকতা নেই!
২০১১ নির্বাচন: বিষয়টি আলোচিত হয়েছে কিন্তু সংখ্যাগড়িষ্ঠের দ্বারা তা বাতিল হয়েছে!
২০১৫ বিষয়টি শুধুমাত্র স্বাভাবিকই নয় কিন্তু তা নারীদের অধিকার হয়েছে!

২০১৩ সালে ৩০ জন সৌদী নারীকে সরকারের ১৫০-সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা বোর্ড শুরা বা পরমর্শক পরিষদে নিয়োগ দেয়া হয়। আরও অনেক সংস্কারের আশাবাদ নিয়ে অনেকেই পুরোপুরি রাজতন্ত্রের দ্বারা গৃহিত এই ‘ক্ষুদ্র পদক্ষেপগুলো'র প্রশংসা করেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .