
বাংলাদেশের সিলেট শহরে বাচ্চারা বন্যার নোংরা জলে খেলছে, ২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫। জলবায়ুর পরিবর্তনের থেকে বাংলাদের সম্ভবত সবচেয়ে অরক্ষিত দেশ। মোঃ আখলাস উদ্দিনের সৌজন্যে প্রাপ্ত ফটো। কপিরাইট ডেমোটিক্স
জেসন মার্গোলিসের দ্য ওয়ার্ল্ডের জন্য লেখা এই প্রবন্ধটি প্রকৃতপক্ষে ৯ই ডিসেম্বর, ২০১৫ তারিখে PRI.org তে প্রকাশিত হয়েছিল যা কনটেন্ট-শেয়ারিং চুক্তির অধীনে
এখানে আবার প্রকাশ করা হল।
সারা বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায় ২৬০ লক্ষ মানুষ তাদের বাসস্থান হারাচ্ছেন – যা যুদ্ধ এবং হিংসার কারণে স্থানচ্যুত মানুষের সংখ্যার তিনগুণ। আর বেশিরভাগ প্রাকৃতিক দুর্যোগই জলবায়ুর অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত (যদিও বিজ্ঞানীরা জলবায়ুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের মত কোনও নির্দিষ্ট জলবায়ুর ঘটনার যোগসূত্র খুঁজে পাননি)।
জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে শুধুমাত্র মার্শাল দ্বীপ এবং নিচু দ্বীপ দেশগুলিই বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে না। দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের মত দেশের এক বিশাল জনসংখ্যা নিচু ভূমিতে বাস করে যারা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে অত্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় আছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এই দেশগুলিতে বিপুল সংখ্যায় মানুষ স্থানচ্যুত হবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই এটা ঘটছে।
ফ্রাসোঁয়া জেমেনে, যিনি পরিবেশগত কারণে জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি নিয়ে গবেষণা করেন এবং একাধিক ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, তিনি বলেছেন যে জলবায়ুর কারণে যারা উদ্বাস্তু হন তারা সাধারণত সেই দেশের মধ্যেই খুব অল্প দূরে যান। আর সাধারণত সবচেয়ে অরক্ষিত, সবচেয়ে দরিদ্র মানুষেরা অন্য জায়গায় যেতে পারেন না কারণ অন্য জায়গায় যাওয়ার তাদের জন্য খুব বেশি ব্যয় সাপেক্ষ।
“মানুষ দুর্যোগের আশঙ্কা থাকলেও আটকা পরে যায়। মানুষ কিছুটা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে বা সেটাকে বাধা দিতে পারে। কিন্তু এখন পরিবর্তনগুলো এত কঠিন, দ্রুত এবং বারবার হচ্ছে যে এখন এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মানুষ আর সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না,” বলেছেন জেমেনে। “আমরা দেখি যে একটা চরম বিন্দুতে পৌঁছনো পর্যন্ত কষ্ট সহ্য করা হয় এবং মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় এবং তারপর অন্য জায়গায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
অবশ্যই কারোর ওপর “জলবায়ু উদ্বাস্তু” তকমা লাগানো কঠিন কারণ মানুষ যে কারণে কোনও জায়গা ছাড়ে সেটা অত্যন্ত জটিল – উদ্বাস্তুরা যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাসভূমি বদল করে।
“স্পষ্টভাবে এটা একটা কঠিন সমস্যা এবং সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাওয়ার মত কিছু অত্যন্ত স্পষ্ট ক্ষেত্রে ছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনকে (বাসভূমি পরিবর্তনের) একক কারণ হিসাবে শনাক্ত করা সহজ না,” বলেছেন জেমেনে। “আমার মনে হয় আসলে জলবায়ু উদ্বাস্তু বা পরিবেশগত উদ্বাস্তুর কোনও নির্দিষ্ট শ্রেণী শনাক্ত করা এবং নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করার কোনও মানে হয় না। আমার মনে হয় আমাদের বাসস্থান বদলের ক্ষেত্রে কারণ হিসাবে পরিবেশের ক্রমবর্ধমান ভূমিকাকে শনাক্ত করতে হবে।”
জেমেনে আফ্রিকার উদাহরণ দিয়েছেন যেখানে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ সেই কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে গেছে যেটা জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিপর্যস্ত হয়। “আফ্রিকার বহু অর্থনৈতিক উদ্বাস্তু আসলে পরিবেশগত উদ্বাস্তু কারণ তাদের পক্ষে আর জীবিকানির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।”