১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ইউক্রেইনীয় নাগরিক কর্মী, সাংবাদিক, এবং আইনজীবিরা বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল সশব্দে পাঠ করার জন্য ল্যভিউ পৌরসভার সুউচ্চ স্থানে একত্রিত হয়েছিলেন।
মানবাধিকারের সার্বজনীনতা ও স্বাধীনতা প্রদর্শন করতে ও সরকারগুলো যেন মৌলিক মানবাধিকার নীতিগুলোকে মেনে চলে এবং প্রয়োগ করে তার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে মানবাধিকার কর্মীরা বায়ু তাড়িত ও বর্ষাস্নাত হয়ে পালাক্রমে ঘোষণাপত্রটির সমগ্র লেখা ইউক্রেইনীয়, নরওয়েজীয়, ইংরেজী, ফরাসী, পোলীয়, এবং ক্রিমীয় তাতার ভাষায় পাঠ করেছেন।
পাঠ শুরু করার এক ঘন্টা আগে ল্যভিউতে ইউক্রেইনীয় জাতিয় স্কাউট সংস্থার স্বেচ্ছাসেবীরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকলকে পৌরসভার ছাদে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবার আমন্ত্রণ জানিয়ে নাগরিক ও পর্যটকদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করে।
মানবাধিকার দিবসে সচেতনতা বৃদ্ধি করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে আয়োজনকারীরা ঘোষণাপত্রটির বিভিন্ন লেখার সমন্বয়ে একটি পোষ্টারও তৈরী করেছে। পোষ্টারটি ল্যভিউ পৌরসভার প্রশাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল যেখানে বিভিন্ন পৌর অনুমতি বা নিবন্ধন কাজের জন্য প্রতিদিন ডজন ডজন ব্যক্তির আগমন ঘটে। এতো বেশী গাড়ী চলাচল এলাকায় ল্যভিউ নাগরিকরা অপেক্ষার সারিতে থাকার সময়েই এই যুগান্তকারী আইনী দলিলটিকে পাঠ করতে পারে।
ইউক্রেইনীয় মানবাধিকার কর্মীরা বলে যে তারা বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা পত্রের মতো এমন একটি মৌলিক দলিল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চেয়েছে, কারণ এধরনের অধিকারকে ইউক্রেইনে একটি বিমূর্ত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাস্তবিকভাবে মানবাধিকার হলো সকল স্তরের সমাজের জন্য একটি মৌলিক বিষয়।
পাঠে অংশগ্রহণ করা সাংবাদিক ভোলোদিমির বেগলভ বলেন ইউক্রেইনে রাজনীতিবিদরা আইনগত প্রথার পরিবর্তে, বেশীরভাগই তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়ে উদ্বিঘ্ন ছিল, এবং সুশীল সমাজকে এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিত। আর একজন সাংবাদিক ওলেসিয়া ইয়ারেমচুক বলেন বিশেষ করে মানব মর্যাদা সম্পর্কিত ইউরোময়দান বিক্ষোভের ধারণাটিকে চালু রাখার জন্য মানবাধিকারের প্রথার এমনকি প্রতীকী ঘোষণাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ক্রিমিয়া থেকে আগত একজন নাগরিক কর্মী আলিম আলিইয়েভ জোর দিয়ে বলেছেন যে ক্রিমীয় তাতার জনগোষ্ঠীর কাছে প্রাত্যহিক ন্যায্যতার জন্য সংগ্রাম এই বিষয়টির সবথেকে ভাল উদাহরণ ছিল। আমাদের জন্য মানবাধিকার বিষয়টি একটি বিমূর্ত প্রবণতা নয় কিন্তু একটি কঠিন বাস্তবতা। গণ হারে অধিকার লঙ্ঘিত হওয়া বর্তমান ক্রিমীয়াতে ডজন ডজন রাজনৈতিক কারাবন্দী রয়েছে।
আয়োজকরা রাজনৈতিক বন্দীদের দুদর্শার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে চেয়েছে এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রদর্শন করতে চেয়েছে। নাদিয়া সাবচেঙকো ইউক্রেইনের সবথেকে বিতর্কিত যুদ্ধ বন্দী, যাকে দু'জন রুশ সাংবাদিককে হত্যার অভিযোগে বর্তমানে রাশিয়াতে বিচার করা হচ্ছে। মানবাধিকার দল ও পশ্চিমা সরকারগুলো তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোকে বানোয়াট হিসেবে নিন্দা করে তার মূক্তির জন্য দাবী জানিয়েছে।
‘স্টালিনবাদী-যুগের প্রহসনের বিচারের স্মৃতিসুরভিত’ বলে এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনালের আখ্যা দেয়া একটি বিচারের পর একটি রুশ আদালত একজন ইউক্রেইনীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ওলেগ সেন্টসভকে ২০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে। গত বছর এই উপদ্বীপটি রাশিয়া দ্বারা দখল হবার পর সেন্টসভ ও ঐ বিচারে ১০ বছর কারাদণ্ড পাওয়া তার সহবিবাদী আলেকজান্ডার কোলচেঙ্কো ক্রিমিয়াতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়।
ঐ অনুষ্ঠানে উল্লেখ করা অন্যান্য রাজবন্দীদের মধ্যে আজারবাইজানে ব্যাপকভাবে সম্মানিত মানবাধিকার রক্ষাকর্মী আইনজীবি ইনতিহাম আলিইয়েভ অন্যতম। দেশব্যাপী ধরপাকড়ের অংশ হিসেবে অন্যান্য মানবাধিকার কর্মীদের সাথে তাকেও ২০১৪ সালের মাঝামাঝি কারাগারে নেয়া হয়। আলিইয়েভ-এর গ্রেফতারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে ব্যাপকভাবে বিবেচনা করা হয়। আলিইয়েভ পূর্বে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে আজারবাইজানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা ঠুকে দেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ল্যভিউতে ঘোষণাপত্রটি পাঠের একটি ছোট ভিডিও দেখুন।
এই অনুষ্ঠানটি মুক্ত গৃহ (ফ্রিডম হাউজ)-এর সহায়তায় ইউক্রেইনের অলাভজনক গণমাধ্যম গণ তথ্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা আয়োজিত হয়।