- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারতীয় উপমহাদেশের গৃহকর্মীরা আরো বেশি কিছু আশা করেন

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, ভারত, আইন, উন্নয়ন, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী, শিল্প ও সংস্কৃতি, শ্রম
Child domestic workers are common in India, with the children often being sent by their parents to earn extra money, although it is banned by the government. Image by Biswarup Gangly via Wikimedia Commons. BY-SA 3.0 [1]

শিশুরা অন্যের বাড়িতে কাজ করছে এই চিত্র ভারতে খুব স্বাভাবিক। এদের বাবা-মা’রা বাড়তি কিছু অর্থের আশায় শিশুদের গৃহকর্মের জন্য পাঠান। যদিও সরকার শিশু গৃহকর্মী রাখা অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। ছবি তুলেছেন বিশ্বরূপ গাঙ্গুলি। উইকিমিডিয়া কমন্সের সৌজন্যে প্রাপ্ত।

বাড়িতে কাজের লোক রাখা ভারতীয় উপমহাদেশে খুব পুরোনো একটি প্রথা। শুধুমাত্র ভারতেই [2] এ পেশায় নিয়োজিত লোকের সংখ্যা ৫ মিলিয়ন। এদের বেশিরভাগই নারী হলেও শিশুদের সংখ্যা কম নয়।

শিল্পকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের মতো এদের কোনো ছুটি ভাতা, ওভারটাইম, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। শ্রমশিল্পের একজন অংশীদার হিসেবেও তাদের স্বীকৃতি নেই। তাদের মজুরির পরিমাণ খুব কম। মাঝে মাঝে তারা নির্যাতনেরও [3] শিকার হন। ভারতের একজন গৃহকর্মী প্রতিদিন ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে মাসে ৬ হাজার রুপি (৯০ ডলার) আয় করেন [4]

সাকান্দ শুক্লা [5] ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুতে লিখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজের চুক্তিপত্র মুখে মুখে সম্পন্ন হয়ে থাকে:

The wages, of course, depend on the number of persons in the family, the guests visiting them, the kids in the family, the number of rooms… The remuneration includes, besides the cash, the ‘tyohaari’ [Bakhsish or tips] during [holidays such as] Holi, Deepavali and other occasions.

তাদের মজুরি নির্ভর করে পরিবারের সদস্য সংখ্যা কতজন, বাড়িতে অতিথিদের বেড়াতে আসার পরিমাণ, বাচ্চাকাচ্চা এবং ঘরদোরের সংখ্যার উপর… মজুরি হিসেবে তারা নগদ টাকার পাশাপাশি হোলি, দীপাবলীসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে বকশিশও পেয়ে থাকেন।

কিছু বাড়ি আছে যেখানে জাতপাতের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। সেসব বাড়িতে নিম্ন জাতের গৃহকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা কম থাকে। যেমন পরিবারের সদস্যরা যে চেয়ার-টেবিলগুলোতে বসেন, সেগুলোতে তাদের বসতে দেয়া হয় না।

এত কাছে, তবুও দূরে

বাংলাদেশি তথ্যচিত্রী এবং সামাজিক অধিকার কর্মী জান্নাতুল মাওয়া ছবি’র মাধ্যমে এই বৈষম্য তুলে ধরেছেন। তার প্রকল্পের নাম “কাছে দূরে” [6]। তিনি তার ছবিতে দেখিয়েছেন, বাড়ির কর্ত্রী আর গৃহকর্মী পাশাপাশি চেয়ারে বসে আছে। কিন্তু তাদের মধ্যেকার পার্থক্য স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

Close Distance. The inequality between the housemaid and the employer. Photography by Jannatul Mawa. Used with permission. [6]

কাছে দূরে। বাড়ির কর্ত্রী আর গৃহকর্মীর মধ্যেকার বৈষম্য। ছবি তুলেছেন জান্নাতুল মাওয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

Close Distance. The inequality between the housemaid and the employer. Photography by Jannatul Mawa. Used with permission. [6]

কাছে দূরে। বাড়ির কর্ত্রী আর গৃহকর্মীর মধ্যেকার বৈষম্য। ছবি তুলেছেন জান্নাতুল মাওয়া। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

মাওয়া লিখেছেন [6]:

In the society, it is perceived that only women will perform the domestic work which also includes the middle class working women. This household activity is analogous for them although the ‘class’ creates a distance. Every day, maidservants take care of the bed and sofa with their hand but they are neither allowed to sit nor to sleep on them once. With their domestic roles, they are ‘close’ to the middle class women and ‘distant’ at the same time.

আমাদের সমাজে ঘরের কাজ শুধু নারীরাই করেন। এমনকি তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্মজীবী নারী হলেও। তাদের গার্হস্থ্য কার্যকলাপ একই রকমের হলেও, তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব তো থাকেই। গৃহকর্মীরা প্রতিদিন বিছানা, সোফা গুছিয়ে রাখলেও সেখানে তারা শুতে কিংবা বসতে পারেন না। পারিবারিক কার্যকলাপের দিক দিয়ে তারা মধ্যবিত্ত নারীদের কাছাকাছি হলেও তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব বজায় থাকে।

তার ছবি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে [6]

গৃহকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ভারতের সরকার ও অধিকার কর্মীরা কাজ করছেন [7]। তাদের কাজ শ্রম আইনে অন্তভুর্ক্ত করতে চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মীরা যাতে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পান সেটা নিশ্চিত করতে মেইড ইন ইন্ডিয়ার [8] মতো অলাভজনক সংগঠন ছাড়াও কিছু অনলাইন জব সাইট এবং মোবাইল অ্যাপ প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর বিনিময়ে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গৃহকর্মীদের কাছ থেকে ফি বাবদ সামান্য অর্থ পেয়ে থাকেন।

তবে সবচে’ বেশি প্রয়োজন হলো গৃহকর্মীদের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন করা। তাদের দরিদ্র অবস্থার সুযোগ নিয়ে মজুরি, সময় কিংবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করা।

‘কারো জীবনে বড় পরিবর্তন এনে দেয়া খুব কঠিন কাজ নয়!’

এবারের দিওয়ালি দিবসে আধ্যাত্মিক গুরু, লেখক ও শিক্ষক নিত্য শান্তির [9] ফেসবুক পোস্ট সবার কাছে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই।

Image courtesy Facebook page of Nithya Shanti [10]

ছবি সৌজন্য নিত্য শান্তির ফেসবুক পেইজ।

“আমার মা কেন গৃহকর্মীর পুরো পরিবারকে রাতের খাবারের দাওয়াত দিয়েছিলেন” শিরোনামের একটি পোস্ট শেয়ার দেন। সেখানে তিনি লিখেন [11]:

Inspired by her friends, my mother started a new tradition in our home last night. She invited the family of our maid Madina to come home for dinner. She had earlier sent dad and me off to buy all the groceries and special food was prepared for them. We all ate together and had a lovely conversation as well.

This is the first time we have ever done anything like this in our family. It felt surreal to see Madina's whole family sitting on our couch and eating with us on our dining table. This was especially significant for me as I remember having bitter arguments with my mother as a kid about why our staff couldn't use the same utensils and furniture as us! It would always end in her crying and then I had to back down. So you can imagine how amazing it was for me to see my mom organise this Diwali dinner on her own initiative. […]

It looks like this is the beginning of a beautiful new tradition in our family, which I hope we will only enhance as time goes on. It touched and opened my heart in many ways. I've asked their son to send me specs of the computer he needs and I'm going to see how we can arrange that for him. It doesn't take much to make a big difference in someone's life!

বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মা গত রাত থেকে আমাদের পরিবারে নতুন একটি প্রথা চালু করেছেন। আমাদের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যে মেয়েটি কাজ করে, সেই মদিনার পুরো পরিবারকে রাতের খাবারে দাওয়াত দিয়েছেন। এর আগে অবশ্য কেনাকাটা করতে বাবা আর আমাকে বাজারে পাঠান। তারপর তাদের জন্য বিশেষ খাবার রান্না করেন। আমরা সবাই এক টেবিলে বসে খেয়েছিলাম। খাবার টেবিলে আলোচনা বেশ জমে উঠেছিল।

এই প্রথম আমাদের পরিবারে এমন একটি ঘটনা ঘটতে দেখলাম। মদিনার পরিবার আমাদের সাথে একই টেবিলে বসে আছে, খাওয়া-দাওয়া করছে, আমার কাছে এটা পরাবাস্তব ব্যাপার বলে মনে হচ্ছিল। তাছাড়া আমার নিজের কাছেও এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার মনে আছে, আমি যখন একদম ছোট ছিলাম,তখন ওরা কেন আমাদের জিনিসপত্র ও আসবাবপত্র ব্যবহার করতে পারবে না সেটা নিয়ে মায়ের সাথে আমার প্রায়ই লাগতো। আর এই ঝগড়াঝাঁটি শেষ হতো মায়ের কান্নার মধ্যে দিয়ে। আমি তখন যুক্তি থেকে সরে আসতাম। তো, এখন ভেবে দেখেন, মা নিজ উদ্যোগে গৃহকর্মীদের জন্য দিওয়ালির রাতের খাবারের আয়োজন করছে, সেটা আমার জন্য কতোটা আনন্দদায়ক ছিল। […]

আমাদের পরিবারে খুব সুন্দর একটি প্রথা চালু হলো। আশা করি, দিন দিন এর ব্যাপ্তি আরো বাড়বে। এটা নানাভাবেই আমার মনের দরজা খুলে দিয়েছে। কম্পিউটার শেখার জন্য তাদের ছেলেকে আমার কাছে পাঠাতে বললাম। তার কম্পিউটার শিক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা করা যায়, সেটাও দেখছি আমি। কারো জীবনে বড় কোনো পরিবর্তন আনার জন্য কিছু করা খুব কঠিন কাজ নয়!

পুরো পোস্ট পড়ুন এখানে [12]

তার এই পোস্ট অনলাইনে বিপুলভাবে শেয়ার হয়। হাফিংটন পোস্ট [13]দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ানেও [14] শেয়ার হয়। তবে সেখানে এটা নিয়ে বেশ বিতর্কও হয়।

এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসাও করেন অনেকে:

আপনি যখন দুনিয়াকে নির্মম জায়গা ভেবে হতাশ হয়ে পড়েছেন,তখন এ ধরনের ঘটনা আমাদের আশান্বিত করে তোলে।

দেখলেন তো কীভাবে উৎসবগুলো উদযাপন করতে হয়!

মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজের লক্ষ্মীনারায়ণ কলিপাকা দ্য লজিক্যাল ইন্ডিয়ানে মন্তব্য করেছেন, “নতুন এই ট্রেন্ড পাদপ্রদীপের আলোয় আসায় খুব খুশি হলাম। আশা করি, এই ট্রেন্ড খুব দ্রুত সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়বে।“

যদিও অনেকে এটা মেনে নিতে পারেননি:

এটা একটা বাজে ব্যাপার! গৃহকর্মীকে বাড়িতে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল খবর প্রসব করার জন্য?!

গৃহকর্মীদের কেন সম্মান করা উচিত লিংকডইনে তার একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছেন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সঞ্জয় কুমার [22]। ভারতের শহরগুলোতে গৃহকর্মীরা বাড়িতে বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এতে করে তারা বর্তমান প্রজন্মের বাচ্চাদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন:

Maids have become a driving force of today’s generation life style and difficult to imagine life without them. It can be said that in today’s generation, maids are driving the current corporate in India where female workforce participation are quite substantial.

বর্তমানে আমাদের প্রজন্মের যে জীবনযাত্রা, তাতে গৃহকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের জীবন খুবই কঠিন হয়ে উঠবে। তাছাড়া ভারতে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই ঘরের কাজে সহযোগিতা করে গৃহকর্মীরা কর্পোরেটগুলোকেও সচল রাখতে ভূমিকা রাখছেন।