অপহৃত, কিন্তু সামীরা সিরীয়দের স্মৃতিতে সদা-উপস্থিত

Yasin Al Haj Saleh and Sameera Al-Khalil, in happier times. Photo from Yasin Al Haj Saleh's Facebook page.

ইয়াসিন আল হাজ্ব সালেহ্ ও সামীরা আল-খলিল। ইয়াসিন আল হাজ্ব সালেহ্‌-এর ফেসবুকের পাতা থেকে। 

বন্ধুরা তাকে ঘিরে ধরেছে, যারা তার কাছ থেকে তাদের ব্যক্তিগত অবসাদ সংক্রান্ত বিষয়ে পরামর্শ চাইতে এসেছে। এবং কেন নয়, যেহেতু তিনি এর সবেরই অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন? তিনি আমাদের এই সিরীয় সংগ্রামের সকল পর্যায় পাড় করে এসেছেন, এবং তিনি এখনও সমাপ্তীর জন্য অপেক্ষা করছেন, হাতিয়ার হিসেবে আছে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার আশা যা আপনার দূর্বলতার জন্য আপনাকে লজ্জিত করে তোলে।

আমাদের বন্ধুত্ব–এবং আমি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত নই যে এটিকে আমি বন্ধুত্ব বলতে পারি কি না, কারণ তিনি আসলে আমার ও আমার সহকর্মীদের কাছে একজন ধর্মপিতার মতো ছিলেন–শুরু হয় সিরীয় বিপ্লবের শুরুতে প্রতিবার যখন আমাকে একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা বা গণজমায়েতে ভাষণ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে হতো তখন আমি তাকে লিখতাম। আমি গণপূর্ত বিষয়ক সবচেয়ে মৌলিক নীতিগুলো সম্পর্কেও অজ্ঞ ছিলাম, এবং আমি তার কাছে একেবারে খুটিনাটি বিষয়ের বিস্তারিত জানতে পরামর্শ চাইতাম। বেশীরভাগ সময়েই আমি তার মতামত গ্রহণ করতাম আর তার পরামর্শ অনুসরণ করতাম। আমি আমার নিবন্ধগুলো তার কাছে পাঠাতাম, যেগুলো প্রায়শই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী ছাত্রের মতো বানান ভুলে পূর্ণ থাকতো, এবং তার নিজের পাণ্ডিত্য থাকা সত্বেও তিনি আমি যা লিখতাম তার সবই পড়তেন এবং আমাকে একজন পিতার মতো করে উৎসাহিত করতেন। যৌবনের কোলাহলে আমাদের যাচ্ঞা করা সকল পিতৃতুল্য মনোযোগ তিনি আমাদেরকে দিতেন।

ইয়াসিন আল হাজ্ব সালেহ্‌ একজন আশার শিক্ষক। এই নিবন্ধটি তার লেখাকে বা তার ব্যক্তিত্বকে প্রশংসা করার জন্য নয় কিন্তু আমাদেরকে তার যে বিষয়গুলো অনুপ্রাণিত করতো সেগুলো অন্যদের কাছে জানানোর জন্য। এটি বিশ্বের কাছে একটি ঘটনা বলার জন্য যেটি এর সকল বেদনা থাকা সত্ত্বেও একটি সন্দেহতীত বার্তা প্রেরণ করে: তিনি যদি আশার মুখোমুখি হয় হাসতে পারেন, তবে আপনার অযুহাত কী?

ইয়াসিনকে গ্রেফতার করা হয় যখন তার বয়েস ১৯ এবং তিনি ১৬ বছর কারাভোগ করেন। তিনিই সিরীয় বিপ্লব সম্পর্কে লেখা এবং তা অতিবাহিত করা প্রথম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তিনি সেই সামাজিক অপটুতা বহন করেন যা দীর্ঘ সময়ে কারাভোগের কারণে তার মধ্যে গড়ে উঠেছে। আপনি যদি এবিষয়ে তার সম্মুখীন হন, তবে তিনি শুধু একটু হাসবেন ও বলবেন: ‘সামীরা। তার শক্তিশালী দিকটি ছিল তার সামাজিক সম্পর্কগুলো। সামীরাই ছিল যে তার চারপাশে লোকজনকে জড়ো করতো।’

এটিই সম্ভবত এই নিবন্ধটির বিষয়: তার স্ত্রী সামীরার জন্য তার ভালবাসা, যাকে ঘৌউটা থেকে তার সঙ্গী রাজান, ওয়ায়েল ও নাধেমসহ জাহরান আলৌস-এর নেতৃত্বাধিন ইসলামীয় সৈন্যরা অপহরণ করে নিয়ে যায়, এবং যাদের হদিস এখনো অজ্ঞাত।

প্রতিবারই আপনি যখন তার সাথে তার ভাড়া বাড়ীতে দেখা করেছেন ততবারই তিনি গর্বের সাথে তার একজন বান্ধবী ও তার প্রতিবন্ধী গ্রীক স্বামীর ভালবাসার গল্প বর্ণনা করতেন। শুধু আরবীতে লেখা কিছু পুস্তকের সংকলন এবং তার পড়ার ঘর থেকে সরাসরি তিনি দেখতে পান এমন জায়গায় ঝুলানো সামীরার একটি ঈশৎ রঞ্জিত ছবি ছাড়া সেই ঘরে কিছুই পরিবর্তন হয় নি। তিনি (সামীরা) সর্বদাই তার কথোপকথোন, তার লেখা এবং তার প্রাত্যহিক জীবনের বিবরণের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এবং তিনি তার অনুপস্থিতিকে সিরীয়দের স্মৃতির মধ্যে খোদাই করে রাখারও চেষ্টা করেছেন। আমরা তার (সামীরার) জন্মদিন পালন করি। আমরা তার অনুপস্থিতির বিষয়ে তার অপরাধবোধ সম্পর্কে দুঃশ্চিন্তা করি। আমরা এই সংক্রান্ত অবস্থা পরিবর্তন করায় আমাদের অপারগতার দ্বারা পরাজিত হয়েছি। আমরা কি সিরীয় হিসেবে আবারও তাকে হেয় করলাম?

আমরা তাকে (সামীরা) তার ক্রোধ এবং তার যাচ্ঞা, এবং আমাদের সাথে থাকায় তার অধিকারের পক্ষাবলম্বন করার মধ্যে দেখি। আমার দিকে তার পিতৃসুলভ আচরণের মধ্যে দিয়ে আমরা তাকে দেখি। প্রতিবার আমি যখন তার চোখে বেদনা দেখি তখন আমার মনে হয় যে আমাদের জীবন থেকে সামীরার অনুপস্থিতি ঠিক যেন সিরীয় বিপ্লবে আমার মাকে আবার হারানোর মতো। আগামীকাল সামীরা যখন আবারও ফিরবে–যেহেতু আমরা কখনোই তিনি আর আসবেন না এমন চিন্তা করার সাহসও করি না–তখন তিনি, তার উপস্থিতি অনুভব করে এমন সিরীয়দের সংখ্যা জেনে মর্মাহত হবেন যদিও তিনি তাদের কাউকেই চেনেন না।

তার অনুপস্থিতির এই বেদনাদায়ক চিন্তা এবং আইসিস-এর একটি কারাগার থেকে তার ভাইয়ের অন্তর্ধান হওয়া সত্ত্বেও, তার নিজের নির্বাসন এবং কারাভোগের স্মৃতি সত্ত্বেও, ইয়াসিন এখনও বিনয় ও আশা সম্পর্কে লেখেন, এবং তিনি এখনও আমাদেরকে শিক্ষা দেন যে অপহরণকারীরা আমাদের জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দিলেও কিন্তু আমরা আমাদের হৃদয়ে কিভাবে বাস করবো তা সম্পূর্ণরূপে আমাদের উপর নির্ভর করে।

সামীরার জন্য তার ভালবাসা অনুপস্থিতি বা অপরাধবোধের দ্বারা পরিবর্তন হয় না, এমনকি তা অপহরণকারীদের ঔদ্ধত্য দ্বারা প্রভাবিতও হয় না। তার জন্য তার ভালবাসা অভিযোগ ও গুজব দ্বারা কলঙ্কিত হয় না। তার জন্য তার ভালবাসা আমাদেরকে সিরীয় হিসেবে বেদনার সীমায় দাঁড়াতে এবং তাদেরকে একটি শুভ সূচনার কামনা করতে বাধ্য করে।

আসুন আমরা আমাদের চোখ বন্ধ করি এবং সামীরা, রাজান, ওয়ায়েল এবং নাধেম যাতে ঘরে ফেরেন, কারাবন্দী ও প্রান্তিক নারীদের অধিকারের জন্য তারা যেন উঠে দাঁড়ান যেমনটি তারা সর্বদাই করেছেন, তারা যেন জবরদস্তিমূলক অন্তর্ধানের শিকার ব্যক্তিদের রক্ষার জন্য সম্মিলিতভাবে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন তার কামনা করি।

প্রাক্তন রাজনৈতিক-কারাবন্দি সামীরা আল-খলিল, আইনজীবি ও মানবাধিকার রক্ষাকারী রাজান জাইতুনেহ্‌, তার স্বামী প্রকৌশলী এবং সক্রিয় কর্মী ওয়ায়েল হামাদেহ্‌, এবং আইনজীবি ও কবি নাজেম আল হামাদি সিরীয়ার দুমা থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে নিরূদ্দেশ হয়েছেন। একত্রে তারা দুমার চার হিসেবে পরিচিত। এই ব্লগটি তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হলো।   

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .