- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

গ্রীসের সর্বশেষ পরিবহণ উপমন্ত্রী এতোটাই বর্ণবাদী, সমকামী বিদ্বেষী, এবং আরব-বিরোধী যে তা তার চাকরী চলে যাবার যোগ্য

বিষয়বস্তু: পশ্চিম ইউরোপ, গ্রীস, তাজা খবর, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, রাজনীতি, সরকার
Cabinet members are sworn in for the third cabinet of Alexis Tsipras and the first after his re-election. At the Presidential Mansion in Athens, Greece on September 23, 2015. Photo by Wassilis Aswestopoulos. Demotix (c). [1]

মন্ত্রীসভার সদস্যরা এ্যালেক্সিস সিপ্রাস-এর তৃতীয় এবং তার পুনর্নির্বাচণের পর প্রথম মন্ত্রীসভার জন্য শ্বপথ গ্রহণ করছে। ২০১৫ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর গ্রীসের এ্যাথেন্স-এ রাষ্ট্রপতীর প্রাসাদে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পানোস কামেনোস এবং অবকাঠামো সচীব দিমিত্রিস কামেনোস। ছবি ওয়াসিলিস এ্যাসওয়েষ্টোপুলোস-এর সৌজন্যে। কপিরাইট ডিমোটিক্স ।

সম্প্রতি গঠিত হওয়া গ্রীক সরকারের অবকাঠামো ও পরিবহণ উপ-মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ১২ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে দিমিত্রিস কামেনোস কে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। সম্প্রতিকালের গ্রীক ইতিহাসে মন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে কম সময়ে কার্যালয় ধরে রাখার নজির স্থাপন করলো তার কার্যকাল। সিরীয় উদ্বাস্তু সংকট নিয়ে ইউরোপীয় নেতা-নেত্রীদের একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য তখন ব্রাসেল্‌স-এ অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী এ্যালেক্সি সিপ্রাস-এর নির্দেশ অনুযায়ী তার পদত্যাগের বিষয়টি টুইটারে ঘোষণা করা হয়।

আরব-বিরোধী ও বর্ণবাদী পোষ্টগুলো সম্পর্কে সত্য বের হবার আগ পর্যন্ত উপ [মন্ত্রী]কে তার পদত্যাগের মাধ্যমে সরকারের কাজে সহায়তা করতে হবে।

হঠাৎ বহিষ্কারের কারণগুলো উন্মোচিত হলো এইভাবে যে বিগত দু'বছরে কামেনোস বর্তমানে নিষ্ক্রিয় @পোর্তাপোর্তা (দ্বারেদ্বারে) নামের একটি টুইটার হিসেবে বেশ কয়েকটি বর্ণবাদমূলক, আরব-বিদ্বেষী, এবং সমকামী বিদ্বেষী মন্তব্য পোষ্ট করেছে।

বিগত ২৪ঘন্টায় প্রাক্তন মন্ত্রী দিমিত্রিস #কামেনোসের উদ্দেশ্যে ২০,০০০এরও বেশী টুইট পাঠানো হয়েছে

এ্যালেক্সিস সিপ্রাস-এর বাম-পন্থী সিরিজা দলের জোট অংশিদারদের মধ্যে সবচেযে কনিষ্ঠ দল ডান-পন্থী স্বতন্ত্র গ্রীক দলের একজন সদস্য হলো দিমিত্রিস কামেনোস–এই বিতর্কিত জোট গঠনের বিষয়টি ক্রমশ সিপ্রাসের জন্য একটি দায় হয়ে উঠছে, যাকে তার মন্ত্রীসম্বন্ধীয় নিয়োগগুলোকে যথাযথভাবে যাচাই করতে অপারগ হওয়ার অভিযোগে বর্তমানে সমালোচনা করা হচ্ছে।

দিমিত্রিস কামেনোস (#পোর্তাপোর্তা নামেও পরিচিত)-এর আরব-বিরোধী ও সমকামীবিরোধী মন্তব্যগুলো সম্পর্কে সবাই জানতো – সবাই, শুধুমাত্র যিনি তাকে নিয়োগ দেন সেই প্রধানমন্ত্রী ছাড়া।

আমি মনে করি @এসিপ্রাস সর্বকালের সবচেয়ে নৈরাশ্যবাদী রাজনীতিবিদ হিসেবে এইমাত্র বিশ্ব রেকর্ডের গিনেস বইয়ে প্রবেশ করতে বিজয়ী হয়েছেন

ভবিষ্যৎ প্রার্থীদেরকে মন্ত্রীত্বমূলক দায়িত্ব প্রদান করার আগে তাদের টুইটগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা উচিত। এটি একটি বিষ্ময়কর উপহাস।

যে টুইটগুলো একটি দ্রুত পরিসমাপ্তি নিশ্চিত করলো

কামেনোস-এর কুখ্যাত টুইটগুলোর মধ্যে কয়েকটি ছিল প্রধানমন্ত্রী এ্যালেক্সিস সিপ্রাসকে লক্ষ্য করে কটুক্তি, যার মাধ্যমে তাকে একজন অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সিপ্রাসের বামপন্থী চিন্তাধারাগুলো সম্পর্কেও সে বিরূপ মন্তব্য করেছে।

সে সিপ্রাসকে একজন অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং তার বামপন্থী চিন্তাধারাকে অপমানও করেছে। তাহলে সে কেন মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করলো?

অন্য আর একটি টুইটে কামেনোস সমকামীদের উল্লাস শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী যে কোন গ্রীক নাগরিকদেরকে নরকবাসী হবার অভিশাপ দিয়েছে।

মন্ত্রী চয়ন করার সাফল্য অব্যহত রয়েছে!

ষড়যন্ত্র তত্ত্বের ভূবনে প্রবেশ করে কামেনোস তার দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেছে যে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর ১১ তারিখে ঘটা ঘটনাগুলো ইহুদীদের চক্রান্ত ছিল।

ggggggggggggggggggggggggg

এই টুইটটি গ্রীক ভাষায় বলছে: ‘এবং আমরা যেন ভুলে না যাই। ২,৫০০ ইহুদী ডাব্লিউটিসিতে কাজ করছিল এবং সেই দিন এমনকি একজনও তাদের কার্যালয়ে আসেনি।’

কামেনোসের টুইটগুলোর মধ্যে সবথেকে বেশী সমস্যাযুক্ত টুইটটি সম্ভবত আউসভিৎস-এ একটি নাৎসী কেন্দ্রীভূতকরণ শিবিরের ফটোশপ করা একটি ছবি যেখানে জার্মান স্লোগান “Arbeit macht frei” (‘কাজ করাই মুক্তি দেবে’) কে সরিয়ে একটি গ্রীক বচন “Μένουμε Ευρώπη” (‘আমরা ইউরোপেই থাকবো’) বসানো হয়েছে, যে বচনটি গ্রীসের সাম্প্রতিক গণভোটের সময় [19] জনপ্রিয় হয় যখন কেউ কেউ গ্রীক অর্থনৈতিক সংকটকে ইহুদী নিধনের ঘটনার [20] সাথে তুলনা করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে।

CIRuOgXWUAE6gee

গ্রীক ভাষায় ছবির শিরোলিপি লেখা: ‘তারা বলে আমরা ইউরোপে থাকছি, তারা বলে যে কোন মূল্যেই হোক, তারা বলে আমাদেরকে যে কোন কিছুই স্বাক্ষর করতে দেয়া হোক না কেন । আমি বলি হ্যা, কিন্তু এর জন্য তাদেরকে প্রথমে মূল্য চুকাতে হবে।’

২০১৫ সালের জুনের ২৪ তারিখে প্রকাশিত গ্রীসে ইহুদী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় বোর্ডের প্রতিক্রিয়া [21] ছিল ভয়ঙ্কর:

The Central Board of Jewish Communities in Greece expresses the outrage and the repudiation of the Greek Jewry at the shameful photo posted on Facebook by MP Dimitris Kammenos (of the Independent Greeks – ANELL party). The post trivializes in the most hideous way the sign over the gate of Auschwitz. In the photo posted the “We stay in Europe” moto has replaced the world known sign which “welcomed” 1.500.000 Jews who were tortured and exterminated by the Nazis in the gas chambers. We call upon the President of the Greek Parliament and the representatives of all democratic parties to condemn the malevolent trivialization of the Holocaust of the 6 million Jews and all the victims of this barbarity, a trivialization that at the same time downplays the importance of the struggle against Fascism and Nazism in our country. We must not stay indifferent to such phenomena because if our society allows the distortion of the historical truth and memory of the Holocaust, it would have been as if we reopened the gate of Auschwitz to new crimes against humanity.

গ্রীসে ইহুদী গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় বোর্ড ফেসবুকে এমপি দিমিত্রিস কামেনোস (স্বতন্ত্র গ্রীক – এএনইএলএল দলের)-এর পোষ্ট করা লজ্জাজনক ছবিটির মাধ্যমে গ্রীক ইহুদীদেরকে অবমাননা করায় তাদের ক্রোধ ব্যক্ত করছে। এই পোষ্টটি আউসভিৎস-এর প্রবেশদ্বারের উপর লেখা চিহ্নটিকে সবচেয়ে কুৎসিতভাবে খাটো করে উপস্থাপন করেছে। গ্যাস প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করিয়ে নাৎসীদের দ্বারা অত্যাচারিত ও নির্মূল করা ১৫ লক্ষ ইহুদীকে ‘স্বাগত জানানো’ বিশ্বখ্যাত চিহ্নটিকে পরিবর্তন করে পোষ্ট করা ছবিতে ‘আমরা ইউরোপে থাকি’ মূলমন্ত্রটি লেখা হয়েছে। আমরা গ্রীক সংসদের রাষ্ট্রপতি এবং গণতান্ত্রিক দলগুলোর প্রতিনিধিদেরকে ৬০লক্ষ ইহুদীদেরকে জঘন্যভাবে হত্যা করার ঘটনা ও এই বর্বরতার সকল ভূক্তভোগীদের বিদ্বেষপরায়ণভাবে খাটো করে দেখাকে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি, এই খাটো করে দেখার বিষয়টি একই সময়ে আমাদের দেশের ফ্যাসীবাদী এবং নাৎসীবাদীতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বকেও খাটো করে দিয়েছে। আমাদেরকে এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে উদাসীন বসে থাকলে চলবে না কারণ আমাদের সমাজ যদি ঐতিহাসিক সত্য ও ইহুদী হত্যাযজ্ঞের স্মৃতিকে বিকৃত করতে সুযোগ দেয় তবে তার মানে হবে যে আমরা আউসভিৎস-এর প্রবেশদ্বারটিকে মানবিকতার বিরুদ্ধে নতুন অপরাধগুলোর জন্য পুনরায় খুলে দিয়েছি।

পরিণাম

নিজেকে রক্ষা একটি প্রচেষ্টায় দিমিত্রিস কামেনোস দাবী করে যে শুধুমাত্র তার টুইটার হিসেবটিই নয় কিন্তু তার সকল সামাজিক মাধ্যম-এর প্রোফাইল ১৫জনের একটি দলের দ্বারা পরিচালিত হয়, যার ফলে অসংখ্য বার সেগুলো অবৈধ অনুপ্রবেশ করা হয়েছে এবং ‘সত্যের বিকৃতি’ করা হয়েছে। এপর্যন্ত জনগণ কামেনোস-এর ব্যাখ্যা ও অযুহাতের প্রতি সামান্যই আগ্রহ বা আস্থা দেখিয়েছে।

আমাকে বলতেই হবে যে তাকে আমার পছন্দ হয়েছে। গতকালকে আমি একটি মেয়ের ছবিকে পছন্দ করেছি আর আমার স্ত্রীকে বলেছি যে তারা আমার ফেসবুকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে।

হেলাফেলা বাদ দিয়ে, তার এই ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’ এর অযুহাত দাঁড় করাতে তার কতো সময় লাগলো? বোকা।

অবৈধ অনুপ্রবেশ করা হয়েছে দাবী করে সন্দেহ পোষণকারী সর্বশেষ ব্যক্তিটিকে বিশ্বাস করিয়ে সে সকল বর্ণবাদমূলক টুইটগুলোকে অস্বীকার করছে, কারণ ফ্যাসীবাদীরা ভীরু হিসেবেই পরিচিত।

সামাজিক মাধ্যমের যুগে যেখানে নাগরিকরা যে কোন অন্যায্য ও অনৈতিক বিষয়ের উপর উচ্চৈঃস্বরে ও দৃশ্যতভাবে তাদের কণ্ঠ উত্থাপন করতে পারে, সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখন আর অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন এবং ‘স্পর্শাতীত’ নয় যেমনটি তারা তাদের নির্বাচনের পরে ছিল।