আজ ২০ অক্টোবর ২০১৫, বাহরাইনের রাজপথ আবারো রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। সরকারি বাহিনী বিক্ষোভকারীদের উপর কাঁদানো গ্যাস এবং ছররা গুলি চালায়। বিক্ষোভের সূচনা ঘটে এর কয়দিন আগে। সেদিন নিরাপত্তা বাহিনী পশ্চিম মানামার মালকিয়া গ্রামে এসে কালো পতাকা এবং ব্যানার নামিয়ে ফেলতে বলে। উল্লেখ্য, গ্রামবাসীরা ইমাম হোসেনের শাহাদাত বার্ষিকীর স্মরণে কালো পতাকা এবং ব্যানার টাঙ্গিয়েছিল।
এরপরে নিরাপত্তা বাহিনী পাশের গ্রাম সাদাদ, কারজাগান এবং সানাবিসে যায়। এবং সেখান থেকেও পতাকা, ব্যানার নামিয়ে ফেলে। পরে সারা বাহরাইন জুড়েই পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে টাঙ্গানো পতাকা, ব্যানার নামিয়ে ফেলে। মহররম মাসের ১০ তারিখে আশুরা পালন করা হয়ে থাকে। বাহরাইন এবং অন্যান্য দেশগুলোতে যেখানে প্রচুর সংখ্যক শিয়া মুসলমানের বসবাস, তারা দুমাস ধরে শোক পালন করে থাকে। এই সময়ে রাস্তার চারপাশে কালো ব্যানার উত্তোলন করা হয়। রাস্তার দুপাশের দেয়ালে ইমাম হোসেনের বাণীতে অলংকৃত করা হয়। বিশেষ করে, যেসব এলাকা দিয়ে মহররমের মিছিল যায়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ছোঁয়া দেশটিতেও লাগে। এ সময়ে সরকারি কর্তৃপক্ষ ৩৮টি শিয়া মসজিদ ধ্বংস করে। আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবেই এটা করা হয়। তাছাড়া এ সময়ে শিয়াদের ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং আচার-অনুষ্ঠান পালনের উপরেও সরাসরি আঘাত করে।
কলামিস্ট কাশিম হোসাইন আজকের সংঘর্ষ নিয়ে তার ৪৫ হাজার অনুসরণকারীর উদ্দেশ্যে টুইটারে বলেছেন:
مصادمات في المالكية وكرزكان غرب البحرين والسنابس غرب المنامة بسبب نزع لافتات تتعلق بعاشوراء #البحرين #عاشوراء pic.twitter.com/XYskzxp4um
— قاسم حسين (@kassimhussain1) October 20, 2015
নিরাপত্তা বাহিনী আশুরা’র ব্যানার সরিয়ে দিতে গেলে মানামার পশ্চিমে সানাবিসে এবং পশ্চিম বাহরাইনের মালকিয়া ও কারজাকান শহরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে আহত প্রতিবাদকারীদের দেখা গেছে যারা ব্যানার খুলে ফেলতে বাধা দিয়েছিল। রীমা আল সালান তার ২৯ হাজার ৬০০ অনুসরণকারীদের উদ্দেশ্যে আহতদের ছবি পোস্ট করেছেন:
اصابات برصاص الشوزن وقمع مفرط بالغازات الخانقة لمجرد رفض الأهالي إزالة مظاهر عاشوراء #المالكية #bahrain pic.twitter.com/L68hqgbvow
— ريما شعلان (@reemashallan) October 20, 2015
মালকিয়াতে ব্যানার সরাতে বাধা দেয়ায় প্রতিবাদকারীদের প্রতি ছররা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়া হয়। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন।
কিছু তরুণ নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যানার সরাতে বাধা দেয়ায় সংঘর্ষ খুব দ্রুত পাশের গ্রাম কারজাকানেও ছড়িয়ে পড়ে। হুসাইন রাধী ব্যাখ্যা করেছেন:
قوات الشغب تقمع الأهالي في كرزكان الان بعد اعتراضهم على ازالة مظاهر عاشوراء #bahrain pic.twitter.com/Dq0pB2Biqy
— Hussain Radhi (@Huss3inRadhi) October 20, 2015
ব্যানার খুলে ফেলতে অস্বীকার করায় দাঙ্গা পুলিশ কারজাকানের তরুণদের উপর দমন-পীড়ন চালায়।
অন্যরাও টুইটারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হাসান আলশার্কী লিখেছেন:
أوقفوا هذه المهزلة وهذا التعدي على شعائر الحسين ،الذي حدث في #المالكية و #كرزكان لايمكن لأحد أن يتصور أن هذه هي #البحرين ، وكأنها عراق صدّام
— حسن الشارقي (@Hassan_Alsharqi) October 20, 2015
দয়া করে ইমাম হোসাইনের আচার-অনুষ্ঠান পালনের প্রতি আক্রমণ বন্ধ করুন। মালকিয়া এবং কারজাকানে কী হয়েছে, সেটা বাহরাইনের কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। এটা যেন সাদ্দাম হোসেনের ইরাক!
বাহরাইনের সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের সদস্য ইনাস ওন একটি ছবি শেয়ার করেছেন। ছবিতে অনেকগুলো টিয়ার গ্যাস গ্রেনেড দেখা গেছে। তিনি জানিয়েছেন, সেগুলো আজ কারজাকানের প্রতিবাদকারীদের উপর মারা হয়েছে:
صور توضح كمية طلقات الغاز السام وطلقات الشوزن المستخدمة لقمع من خرج معترضا على نزع السواد في #كرزكان اليوم #bahrain pic.twitter.com/w82L5ByHdZ
— Enas oun (@glorybahrain) October 20, 2015
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনকারীদের দমনে বিপুল পরিমাণ টক্সিক গ্যাস এবং ছররা গুলি মারা হয়েছে। আন্দোলনকারীরা কালো পতাকা সরানোর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল।
গত কয়েকদিন ধরে বাহরাইনের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যানার ও পতাকা অপসারণের দৃশ্য ভিডিও করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
#ReligiousFreedom pic.twitter.com/SsjAyDmxXf
— AlwefaqEN (@AlWefaqEN) October 19, 2015
বাহরাইনের সরকারি বাহিনী আজকে আলী এলাকা থেকে আশুরা উপলক্ষ্যে টাঙ্গানো ব্যানার, পতাকা অপসারণ করেছে।
এই ভিডিও ফুটেজ বাহরাইনের নেটিজেনদের র্যাঙ্কিং এ শীর্ষে ছিল।
#Bahrain regime forces remove manifestations that are usually put up in Ashura annual anniversary #ReligiousFreedom pic.twitter.com/Gm60EZ7T0k
— AlwefaqEN (@AlWefaqEN) October 17, 2015
বাহরাইনের সরকারি বাহিনী আশুরা উপলক্ষ্যে টাঙ্গানো ব্যানার, পতাকা অপসারণ করেছে। উল্লেখ্য, প্রতিবছর এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
বাহরাইনের শিয়ারা প্রতিবছর ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে আশুরা পালন করে থাকে। কিন্তু সরকারের সাথে জনগণের বিশেষ করে শিয়া জনগোষ্ঠীর চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে এবারের আয়োজন একটু সমস্যাসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে।
2- أولاً : طقوس وشعائر #عاشوراء هي إرثٌ ديني وتاريخي للشيعة في #البحرين منذ مئات السنين، وقد كفلها الدستور في المادة 22 #إلا_شعائر_الحسين
— حسن الشارقي (@Hassan_Alsharqi) October 20, 2015
আশুরা অনুষ্ঠান একটি ধর্মীয় আচার। ঐতিহাসিকভাবে বাহরাইনের শিয়ারা শত শত বছর ধরে অনুষ্ঠানটি পালন করে থাকে। সংবিধানের ২২ ধারা অনুযায়ী তাদের এ অনুষ্ঠান পালনের নিশ্চয়তাও দেয়া হয়েছে।
জাওয়াদ ফিরোজ নামের একজন সাবেক সংসদ সদস্য, বর্তমানে যিনি নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন, তিনি টুইটারে লিখেছেন:
لم تحارب مظاهر الشعائر الحسينية في #البحرين عبر تاريخها المعاصر كما تحارب اليوم pic.twitter.com/TNEWUtioDl
— Jawad Fairooz (@JawadFairooz) October 20, 2015
আজকের দিনের মতো আশুরার প্রতি এমন আক্রোশ বাহরাইনের আধুনিক ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি।
বাহরাইন আরব উপসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটির বেশিরভাগ মানুষই শিয়া। তবে তারা রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে বঞ্চনার শিকার। গত সাড়ে চার বছর ধরে সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। সরকারের সাথে বিরোধীদের আলোচনায় কোনো ইতিবাচক সমাধান মেলেনি। বর্তমানের বিরোধীদলীয় বেশিরভাগ রাজনৈতিকই জেলে বন্দি।
আরো জানতে: বাহরাইনের বিরোধীরা আলোচনার টেবিল থেকে কারাগারে
আশুরা পালন উপলক্ষ্যে শিয়াদের ধর্মীয় স্থান এবং মসজিদগুলো বন্দুকধারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। ব্যাপারটিকে সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা না করায় অ্যাক্টিভিস্টরা সরকারের সমালোচনা করেছেন।
ধর্মীয় নেতা শেখ মেথাম আল সালমান লিখেছেন:
هل توجد جدية في محاسبة من هدم ٣٨ مسجدًا وغزا محلات جواد ٧٨ مرة وأطلق النار على مسجدي الصادق والباقر ومأتمي الهملة ودمستان أول أمس؟ #البحرين
— ميثم السلمان (@MaythamAlsalman) October 18, 2015
যারা ৩৮টি মসজিদ ধ্বংস করেছে, যারা জাওয়াদ স্টোরে ৭৮ বার হানা দিয়েছে, যারা আল সাদিক মসজিদ, আল বাকের মসজিদ, হামালা এবং ডিমিস্টান মাতামে গুলি করেছে, তাদেরকে কি সত্যি সত্যি ধরতে পেরেছে?
জাওয়াদ স্টোরের মালিক একটি শিয়া পরিবার। তাদের স্টোরে ৭৮ বার ডাকাতি হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় ছবি থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কারো শাস্তি হয়নি। মাতাম কিংবা হুসাইনিয়া হলো শিয়া ধর্মীয় স্থান যেখানে জড়ো হয়ে তারা আশুরার মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করে থাকে।