নাইজেরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ কি পেলে ৪৮ ঘন্টার জন্য স্থগিত করেছিল

A malnourished refugee during the Nigerian Civil War. Public Domain photo by the Center for Disease Control and Prevention (CDC).

নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় অপুষ্টির শিকার এক উদ্বাস্তু। এই গৃহযুদ্ধের সময় নাইজেরিয়ার অবরোধের কারণে বায়াফ্রা প্রদেশের বিপর্যয় কর দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)–এর পাবলিক ডোমেইন –এর ছবি

অনেক বছর ধরে, প্রধান প্রধান সংবাদপত্র ব্যাপক ভাবে এই সংবাদটি প্রদান করে যে ফুটবল সম্রাট পেলে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ থামিয়ে দিতে সক্ষম হন,কারণ উভয় পক্ষ যুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হয় যাতে নাইজেরিয়ার জনগণ ফুটবলার পেলে এবং তার দল ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ক্লাব স্যান্টোসের খেলা দেখতে পারে।

৬ জুলাই ১৯৬৭-তে নাইজেরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যার সমাপ্তি ঘটে ১৫ জানুয়ারি ১৯৭০ সালে, আর এর শুরু নাইজেরিয়ার থেকে বায়াফ্রা প্রদেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘোষণা থেকে। এটি ছিল আফ্রিকার ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ ।

কিন্তু প্রচার মাধ্যম প্রায়শ গৃহযুদ্ধ থামানোর জন্য পেলেকে কৃতিত্ব প্রদান করে, তবে তা ছিল সাময়িক। যেমন এক উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, টাইম ম্যাগাজিনের প্রদান করা ২০০৫ সালে সংবাদ:

যদিও কূটনীতিবিদ এবং বিশেষ দূতেরা দুই বছর ধরে এমন এক গৃহযুদ্ধ থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছিল যা ছিল আফ্রিকার সে সময়কার সবচেয়ে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ, ১৯৬৯ সালে ব্রাজিলের কিংবদন্তির ফুটবলার পেলে এই যুদ্ধে তিনদিনের এক যুদ্ধ বিরতি বয়ে আনেন। নাইজেরীয় সরকার এবং বিচ্ছিন্ন হতে চাওয়া বায়াফ্রার নেতারা ৭২ ঘন্টার জন্য এক শান্তি চুক্তি গ্রহণ করে, যাতে পেলে এবং তার দল স্যান্টোস স্থানীয় ফুটবল দলের বিরুদ্ধে প্রদর্শনী খেলা খেলতে পারে, ফুটবল ছিল যুদ্ধের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু সত্য কি পেলে নাইজেরিয়ার বায়াফ্রার যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিল? হাডারসফিল্ড যুক্তরাজ্য থেকে ওলাওজো আইয়েগাবোইয়া (@ওলাওজো) নামক লেখক , এই ঘটনায় সত্য অনুসন্ধানে সংগ্রহশালায় প্রবেশ করেছেনঃ

Pele in a Santos FC jersey in 1970. Public Domain photo by El Gráfico.

১৯৭০ সালে স্যান্টোসের জার্সি গায়ে পেলে। এল গ্রাফিকোর পাবলিক ডোমেইন থেকে ছবি।

আফ্রিকা এক মহাদেশে ব্লগে লেখা এক পোস্টে ওলাজাও আইয়েগাবাইয়ে ব্যাখ্যা করেন যে পেলে এবং তার দলের আফ্রিকা সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল খেলা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ক্লাবের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা। এই সফরে দলটি কঙ্গো, নাইজেরিয়া, মোজাম্বিক, ঘানা এবং আলজেরিয়া ভ্রমণ করে।

তাহলে যুদ্ধ কি থেমে গিয়েছিল? আইয়েগাবাইয়ের গবেষণা অনুসারে এই কাহিনী হচ্ছে এক অতিরঞ্জিত গল্প। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই সংবাদ ছাপা হলেও , স্থানীয় সংবাদ পত্রে স্যান্টোসের যে সংবাদ ছাপা হয়েছিল তাতে কোথাও এই সংবাদ নেই, পেলে নিজেও ১৯৭৭ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী “আমার জীবন এবং এই সুন্দর খেলা” এই যুদ্ধ বিরতির কথা উল্লেখ নেই। তবে ২০০৭ সালে তার আত্মজীবনী “পেলেঃ আমার আত্মজীবনী”তে তিনি বিষয়টির কথা উল্লেখ করেছেন।

আইয়েগাবাইয়ে ২০০৭ সালে প্রকাশিত পেলের আত্মজীবনী থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করেছে :

কিন্তু নাইজেরিয়া এই বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে নিশ্চিত করেছিল যে যখন আমরা সেখানে থাকব তখন বায়াফ্রার বিদ্রোহীরা লাগোসো হামলা চালাবে না”। তিনি স্মরণ করেন যে সে সময় রাস্তায় ব্যাপক সেনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এবং যখন তারা নাইজেরিয়ায় অবস্থান করছিল তখন তাদের নিরাপত্তায় সেনা এবং পুলিশ নিয়োজিত ছিল।

তার বইয়ে তিনি আরো উল্লেখ করেছেন তাদের ব্যবসায়িক ম্যানেজার খেলোয়াড়দের কাছে এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন যে নাইজেরিয়ার গৃহ যুদ্ধ তাদের এই প্রদর্শন খেলার উপর প্রভাব বিস্তার করবে না। এবং কর্তৃপক্ষের জন্য এটা কোন সমস্যা হবে।

তবে আইয়েগাবাইয়ো উল্লেখ করেন যে ২০১১ সালে সিনএনএনকে প্রদান করা সাক্ষাৎকারে পেলে এই যুদ্ধ বিরতি নিয়ে কোন সন্দেহ প্রকাশ করেন নি। পরিপূর্ণ অতিরঞ্জিত এই সকল বিষয় নিয়ে আইয়েগাবাইয়োর আলোচনা করা বিষয় পাঠ করতে পারেন তার একাউন্ট আফ্রিকা ইজ এ কান্ট্রিতে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .