- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

তরুণ আলি আল-নিম্‌রকে সৌদী আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ড প্রদানকে মানবাধিকার রক্ষাকর্মীরা বিরোধীতা করছে

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., সৌদি আরব, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, মানবাধিকার, রাজনীতি
A drawing raising awareness of Ali al-Nimr's case. Image by Gianluca Costantini.

আলি আল-নিম্‌র-এর মামলাটি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে একটি অঙ্কন। ছবি এঁকেছেন জিয়ানলুকা কনস্তান্তিনি। [1]

একটি সৌদী আদালত ‘সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকে আক্রমণ করা, একটি মেশিনগান সাথে রাখা এবং স্বশস্ত্র ডাকাতী'র অভিযোগে ২১ বছর বয়েসী আলি আল-নিম্‌র-এর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করেছে, দৈনিক ওকাজ সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখে প্রতিবেদন করেছে [2]

আল-নিম্‌রকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে যখন প্রথম গ্রেফতার করা হয় তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর। তখন তাকে পূর্ব প্রদেশের দাম্মাম-এ তদন্তের সাধারণ অধিদপ্তর (জিডিআই)-এর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পিতা রাজনৈতিক কর্মী মোহাম্মেদ আল-নিম্‌র এর বক্তব্য অনুসারে আল-নিম্‌র-এর মামলাটি তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয়। জেদ্দাতে বিশেষায়িত ফৌজদারী আদালত মে মাসের ২৭ তারিখে প্রাথমিকভাবে আল-নিম্‌রকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। সংবাদ প্রতিবেদন [3] অনুসারে, আল-নিম্‌রকে প্রথমে শিরোচ্ছেদ করা হবে, এবং তারপর তার ‘দেহ পচনের জন্য একটি ক্রুশের সাথে বেঁধে রাখা হবে'।

‘স্বাক্ষর করা ‘স্বীকারোক্তি'র ভিত্তিতে আদালত তার সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে আল-নিম্‌র-এর দাবী যে স্বীকারোক্তিটি নির্যাতন ও অন্যান্য দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে চাপে ফেলে করা হয়েছে, এবং সে তার এই অভিযোগগুলো দেখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে,’ ২০১৪ সালে প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদনে [4] এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ব্যক্ত করেছে।

অভিযুক্তের পিতা গণমাধ্যমে এই বিচার প্রচারের সমালোচনা করেছে।

সৌদী মাধ্যমগুলো বানোয়াট দৃশ্যবিবরণী ও অভিযোগে ভরা তাদের বর্ণনাগুলোর কাটতি বাড়ানোর জন্য #আলি_আলনিম্‌র ও কাকা #শেখনিম্‌র এর আদালতের শুনানির উপর প্রতিবেদন করছে

দৈনিক সংবাদ পত্র ওকাজ তার প্রতিবেদনে [2] বলেছে যে আলি হলো সৌদী শিয়া ধর্মগুরু শেখ নিম্‌র আল-নিম্‌র এর ভাতিজা যাকে ২০১২ সাল থেকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, এবং তাকেও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে এবং ২০১১ সালে আরব বসন্ত যখন তুঙ্গে তখণ তিনি কাতিফ-এ বিক্ষোভের নেতৃত্ব [8] দেন।

আলির পিতা মোহাম্মদ আল-নিম্‌র মানবাধিকার বিষয় এবং যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সক্রিয়ভাবে এই মামলার বিস্তারিত টুইট করছেন।

পুনর্বিচারের আবেদন এবং উচ্চ আদালত তরুণ #আলি_আলনিম্‌র-এর মৃত্যুদন্ডাদেশ অনুমোদন করেছে ও তার মামলাটি এখন #সৌদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে

#আলি_আলনিম্‌র-এর তদন্ত চলাকালীন তদন্তকারী একটি মানহানিকর বক্তব্য লিখে এবং আলির বৃদ্ধাঙ্গুলী নিয়ে তাতে তার আঙ্গুলের ছাপ বসিয়ে দেবার হুমকি প্রদান করে

#আলি_আলনিম্‌র-এর আইনজীবিকে আদালতে তার মক্কেলের সাথে বসতে দেওয়া হয় নি এবং তদন্ত দপ্তর বিচারকের সাজা প্রত্যাখ্যান করে মৃত্যুদন্ডের জন্য চাপাচাপি করেছে

#আলি_আলনিম্‌র-এর মতো তরুণ ব্যক্তিদের এখন বিদ্যালয়ে থাকা উচিত, কারাগারে বা আদালতে নয় যেখানে যথাযথ প্রক্রিয়ার নুন্যতম মাণ বজায় রাখার ঘাততি আছে

একজন সৌদী আইনজীবি এমান আল-হাকীম এই মামলার শিশু অধিকার উকীলদের ক্রিয়াকলাপকে ভর্ৎসনা করেছেন:

শিশু অধিকার রক্ষাকারীরা আলি আল-নিম্‌র-এর মামলার বিষয়টি জানে কিন্তু তারা চুপ করে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারণ তারা প্রথমতঃ সাম্প্রদায়িক, দ্বিতীয়তঃ তারা কাপুরুষ।

মানবাধিকার কর্মী ওয়ালীদ সুলেইস টুইট করেছেন:

আমি মানবাধিকার কমিশনের কাছে আহ্বান জানাবো যাতে তারা তাকে গ্রেফতার করা থেকে শুরু করে তার সাজা দান পর্যন্ত এবং রাজকীয় আদালতে তা লিপিবদ্ধ করা পর্যন্ত আলি আল-নিম্‌র এর বিরুদ্ধে অনুসরণ করা প্রক্রিয়াগুলো বিবেচনা করে।

তিনি আরও বলেন:

আলি আল-নিম্‌র-এর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন সকল ধরনের মান-এর নিরিখে একটি বিপজ্জনক অধ্যায়: শিশু অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মৃত্যুযোগ্য ‘সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ'ও সংঘঠিত করেনি এমন একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা

ফাতিমা কারীম টুইটারে একটি ভিডিও [19] প্রচার করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে যে আল-নিম্‌র তাকে গুলি করার হুমকি প্রদানকারী পুলিশের সাথে বাদানুবাদ করছে। তারা যখন তার ঘরের ভিতরে দেখছিল তখন সে তাদের কর্মকান্ডের চিত্র ধারণ করছিল:

ভিডিওটিতে আলি বলেছে: আমার কাছে কিছুই নেই, শুধু আমার ক্যামেরাটি আছে। আপনারা আমার ঘরের ভিতরের তাকাচ্ছেন তাই আমি আপনাদের চিত্র ধারণ করছি।

সৌদী বাদশাহ্‌ দণ্ডাদেশ-এর অনুমোদন দেয়ার সাথে সাথেই আল-নিম্‌র-এর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে [20]

এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে ‘সৌদী আরব পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে প্রাণবধকারীদের মধ্যে অন্যতম, যারা ১৯৮৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ২,২০০এরও বেশী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে আগষ্ট মাসের শেষ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩০ জনকে তারা মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে যার প্রায় অর্ধেককেই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় এমন ধরনের ‘সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ’-এর সীমা অতিক্রম করে যায় নি এমন অপরাধের জন্য দায়ী করা হয়েছে।